Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুম্বাইয়ে ‘রহস্যজনক মৃত্যুর’ শিকার নাবিক রাশেদ, বিচার চান পরিবার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২২, ৮:০২ পিএম | আপডেট : ৮:১৩ পিএম, ১১ জুন, ২০২২

মুম্বাইয়ে বাংলাদেশি জাহাজে ‘রহস্যজনক মৃত্যুর’ শিকার নাবিক আবু রাশেদের (২২) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১১ জুন) সকালে যশোরের মণিরামপুরের মনোহরপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। আবু রাশেদ উপজেলার কুমারঘাটা গ্রামের আব্দুর সবুর সরদার ও পারুল বেগমের ছেলে।


বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাশেদ গত মার্চে এমভি জাহাজ মনিতে ডেক ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ৩০ মে ভারতের মুম্বাই বন্দরের জলসীমায় নোঙর করা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ মে সকালে তার মৃত্যু হয়। তার স্বজন, সহকর্মী ও পরিবারের অভিযোগ, দুই মাস ধরে জাহাজে দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় একটি হাসপাতালে রাশেদের মৃত্যু হয়। পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় তার লাশ মুম্বাই থেকে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখানে লাশ গ্রহণ করে স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে আসেন।
শনিবার ভোরে রাশেদের কফিনবন্দি লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর পর বাবা-মা আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। পরে সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় ঈদগাহে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে সামিয়ানা টাঙানো। চেয়ারে উঠান ভর্তি মানুষ। কেউ রাশেদের বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কেউ বা কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শেষ হওয়া রাশেদের গর্ভধারিণী মাকে মাথায় তেল-পানি দিচ্ছেন।


রাশেদের বাবা সবুর সরদার বলেন, আমার আব্বুরে কী কষ্ট দিয়ে মেরেছে। মুখে-শরীরে কোনো দাগ ছিলো না, এখন সারা শরীরে দাগ রয়েছে। আমি এর বিচার চাই। কাঁদতে কাঁদতে রাশেদের মা পারুল বেগম বলেন, মৃত্যুর আগের দিন আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। অসুস্থ থাকার পরও আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছে। কিন্তু তার স্বর শুনে আমি বুঝে ফেলেছিলাম ও ভালো নেই। ও আমাগের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতো। দুইতলা বাড়ির নকশা করেছে। এবার ঈদের পর বাড়িতে এসে বাড়ি বানানোর কথা ছিল। রাশেদের বড় ভাই রাসেল পারভেজ বলেন, মাস খানেক আগে রাশেদ আমারে ফোন দিয়ে বলে, ‘ভাই আমার খুব জ্বর এসেছে। ওরা আমারে চিকিৎসা করাচ্ছে না। অসুস্থতার ছুটি চাইলে তারা বিভিন্ন অ্যান্টিবায়েটিক দিয়ে আমারে আরও অসুস্থ করে ফেলছে। তুই দেখ আমারে কোনোভাবে ছুটির ব্যবস্থা করে দিতে পারিস কিনা। রাশেদ এমভি জাহান মনির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ছুটি চাইলে তারা বলেন ‘তোর লাশ যাবে এ জাহাজ থেকে; কোনো ছুটি হবে না।’

তিনি অভিযোগ করেন, রাশেদ জাহাজের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ছুটি চাইলে তাকে ছুটির বদলে বেশি ওভার টাইম করাতো। বিভিন্ন ইনজেকশন দিত। ইনজেকশন দেওয়ার ফলে রক্ত বমি করতো। দিনদিন শরীর খারাপ হওয়াতে বুঝতে পেরেছিল, ও আর বাঁচবে না। তাই গ্রামে আত্মীয় স্বজনের কাছে ফোন করে মাফ চেয়ে নিয়েছে। আমি ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি করছি।

চট্টগ্রামের এসআর শিপিং লিমিটেড কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম টুটুল জানান, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় গত ৩১ মে তাকে মুম্বাইয়ের জে জে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে রাশেদের লাশ শুক্রবার বিকালে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্রামে আনা হয়েছে। কোম্পানি থেকে রাশেদের পরিবারের সবধরনে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ