মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের টিআইএন নম্বর খোলা, আয়কর রিটার্ন দাখিল করা কষ্টসাধ্য। কেননা, তারা শুধু প্রারম্ভিক বেতনের শতভাগ সরকারিভাবে পান। আবার এখান থেকে ২ শতাংশ কল্যাণ তহবিল, ৪ শতাংশ অবসর সুবিধার জন্য কেটে রাখা হয়। ইদানীং প্রাইভেট-কোচিংও নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী শুধু টাকার অঙ্কটা দেখে আয়করের কথা বলবেন, না একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক যে পরিমাণ টাকা পান তা দিয়ে তার মৌলিক মানবিক প্রয়োজন আদৌ পূরণ হয় কি না, তা বিবেচনায় আনবেন না? তারা বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ও উৎসব ভাতা পান না। তারা পদোন্নতি, স্বেছা অবসর, বদলি সুবিধাসহ অসংখ্য বঞ্চনার শিকার। তারা পান না বৈশাখী ভাতা ও বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সুবিধা! পদমর্যাদা অনুযায়ী বাড়িভাড়া পান না, ‘প্রিন্সিপাল থেকে পিওন’ সবাই বাড়িভাড়া পান ১০০০ টাকা, চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা মাত্র, যা নিতান্তই অপ্রতুল।
এমপিওভুক্তগণ বেতন না অনুদান পান তা-ই তো অস্পষ্ট, তবুও তাদের আয়কর দিতে হবে? যারা জাতীয় ঐতিহ্য-উৎসবে অবহেলিত-বৈশাখী ভাতা বঞ্চিত। যাদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ যাদের ইনক্রিমেন্ট-প্রমোশনের হাহাকার কখনো ফুরায় না তাদেরও আয়কর? সুনাগরিক হিসেবে আয়কর পরিশোধ, একজন শিক্ষকের নৈতিক কর্তব্য। তবে বঞ্চনার অবসান না ঘটিয়েই তাদের ওপর আয়করের বোঝা ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ তুল্য!
কাজেই, এমপিওভুক্তদের আয়কর প্রসঙ্গটি পুনঃবিবেচনা করা জরুরি। যদিও বা দিতে হয় তবে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেয়াই শ্রেয়। তবে নতুন বেতনস্কেলের প্রেক্ষিতে সর্বনি¤œ কর সীমা পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণও সময়ের দাবি।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ৯৫ শতাংশের বেশি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত। অথচ শিক্ষক নিয়োগে রাষ্ট্রীয় তদারকি প্রায় ছিলই না। বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব গেছে এনটিআরসিএ’র ওপর। ২২ অক্টোবর’ ১৫’র গেজেট, ১১ নভেম্বর ’১৫, ৩০ ডিসেম্বর ’১৫’র পরিপত্রের কারণে বন্ধ হয়েছে তথাকথিত ‘নিয়োগবাণিজ্য’। এক বছর পর শিক্ষক নিয়োগের বন্ধ দুয়ার খুললেও তা যেন অন্ধকার কাটলেও কুয়াশা রয়ে যাবার পর্যায়েই আছে।
এই নিয়োগ পদ্ধতি এন্ট্রি লেভেল বা চাকরিতে প্রথম প্রবেশ পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের বেলায় প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ ৩য়, ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি নিয়োগে এনটিআরসিএ’র কর্তৃত্ব প্রযোজ্য নয়। এজন্য অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদগুলো পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের লক্ষে এমপিওভুক্তদের জ্যেষ্ঠতাক্রমের একটি ‘ফিটলিস্ট’ তৈরি করা প্রয়োজন যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঐ পদগুলো পূরণ করা সম্ভব হয়। অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, বিষয়ের চেয়ারম্যান, হল প্রভোস্ট, ডিন নিয়োগের প্রক্রিয়া অনুসরণ করাও সময়ের দাবি।
কর্তৃপক্ষের সূত্রমতে, ৬ হাজার ৫৬২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৫ হাজার ১২১টি শ্ন্যূ পদের জন্য অনলাইনে চাহিদা পাওয়া গেছে। প্রার্থীদের কাছ থেকে ১৪ লাখের মতো আবেদন জমা পড়েছে। ১ম থেকে ১২তম পরীক্ষায় নিবন্ধনধারীদের মধ্যে যারা আবেদন করেছেন শুধু তারাই নতুন নিয়মের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে এনটিআরসিএ’র বাছাই প্রক্রিয়া নিয়েও জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে। বলতে হয় ১ম থেকে ১২তম পর্যন্ত পরীক্ষার বাছাই প্রক্রিয়াই তো অভিন্ন ছিল না। কাজেই, চাকরিতে চূড়ান্ত মনোনায়নের ক্ষেত্রে সব ব্যাচকে এক মানদ-ে ফেলা চরম বৈষম্য এবং চূড়ান্ত অবহেলার নামান্তর। এজন্যই কি অনেক ক্ষেত্রে কম যোগ্যতাসম্পন্নগণ চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন?
অভিযোগ আছে, বিভিন্ন উপজেলায় এনটিআরসিএ কর্তৃক নির্বাচিত শিক্ষকগণ এখনো নিয়োগপত্র পাননি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ ব্যবস্থাপনা কমিটিসহ নানান দোহাই দিয়ে নিয়োগ দিতে গরিমসি করছেন। কিন্তু কারণ যা-ই থাক কী হলে কী অবস্থায় চাকরিপ্রার্থী বঞ্চিত হবেন না, তার একটা রক্ষাব্যুহ প্রয়োজন। যেন শূন্যতা ও অনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি না হয়।
নীতিমালা অনুসারে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্বাচন করেছে এনটিআরসিএ। এখন শুধু স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগপত্র প্রদান করবেন। ঐ নীতিমালা অনুসারে শূন্যপদে গত ৯ অক্টোবর ’১৬ এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত নিবন্ধন উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ফল প্রকাশিত হয়। অনলাইনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের একটি নির্দেশনাপত্র পাঠানো হয়েছে। ঐ নির্দেশনায় উল্লেখ আছে “ফলাফল প্রকাশের দিন থেকে এক মাসের মধ্যে তালিকাভুক্ত স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচিতদের নিয়োগপত্র প্রদান ও যোগদানপত্র গ্র্রহণ করবেন”।
এমন রূঢ় বাস্তবতায় এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে হয়রানি অবসানের জন্য নিচের সুপারিশমালা বিবেচ্য হতে পারে। যথা:
১. প্রতিটি আবেদনের জন্য আলাদা আলাদাভাবে ফি না নিয়ে একবার নেয়া এবং একটি আবেদন ফি দিয়ে ১০টি বা বেশি প্রতিষ্ঠান চয়েজ দেয়া।
২. পদটি শূন্য না সৃষ্ট তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা।
৩. বিজ্ঞপ্তিতে মহিলা কোটা উল্লেখ করা ।
৪. প্রার্থী যে পদে আবেদন করবেন তার বিপরীতে কী যোগ্যতা ও শর্ত থাকবে বিজ্ঞপ্তিতে তা উল্লেখ করা।
৫. আবেদনকারী যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করবেন ফলাফলে সে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর ও প্রতিষ্ঠানের ফলাফলে প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর প্রদান করা। তবেই দায় এড়াতে কেউ বলতে পারবেন না যে, প্রার্থী তো আসেন নি। প্রার্থী পাওয়া যায়নি। বরং আদৌ নির্বাচিত ব্যক্তিকে নিয়োগদানে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক কি না তা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। কেননা, দুর্জনের ছলের অভাব হয় না।
৬. কেউ যেন এনটিআরসিএ মনোনীত প্রার্থীকে নিয়োগপত্র প্রদানসহ অনান্য কাজ যেমন: এমপিওভুক্তিকরণ, চাকরি স্থায়ীকরণ ইত্যাদিতে হয়রানি না করেন ও অনৈতিক সুবিধা নিতে না পারেন, তার জন্য কার্যকর তদারকির ব্যবস্থা করা।
৭. প্রতিষ্ঠান কতদিনের মধ্যে নিয়োগপত্র দিবে, প্রার্থী কতদিনের মধ্যে যোগদান করবেন তা স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করা। প্রার্থী কতদিনের মধ্যে এমপিওভুক্ত হবেন তারও একটা ন্যূনতম প্রান্তসীমা স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করা। কোনো প্রার্থী যদি অন্য প্রতিষ্ঠানে কোনো নি¤œস্তরের কর্মে নিয়োজিত থাকেন অথবা অধিকতর নিশ্চিত কোনো পদে কর্মরত থাকেন তবে তাকে আগের পদে ইস্তফা দিয়ে নতুন পদে আসতে হবে, এমন শর্তটি যেন সহনুভূতির সঙ্গে দেখা হয়। কারণ, একটি চাকরি যতো সহজে ছাড়া যায় ততো সহজে তা পাওয়া যায় না।
৮. প্রার্থী প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার পর প্রতিষ্ঠান হতে এনটিআরসিএ-কে নিশ্চয়ন করার ব্যবস্থা করা। প্রক্রিয়াটির সঙ্গে পরিচালনা পরিষদসহ জেলা প্রশাসন ও সরকারি শিক্ষা প্রশাসনের সংযুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি আরো খোলামেলা রাখা, যেন চাইলেই কোনো পর্যায়ের ‘কুপ্রস্তাব’ নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকে বিঘিœত করতে না পারে।
৯. কোনো পদের বিপরীতে কোনো মামলা বা সমস্যা আছে কিনা তা এনটিআরসিএ কর্তৃক নিশ্চিত হওয়া। পদপ্রার্থীকে তা অবহিত করা।
১০. প্রতিষ্ঠান যে পদের জন্য চাহিদাপত্র প্রেরণ করবে তা প্যার্টানভুক্ত বা জনবল কাঠামোর মধ্যে পড়ে কিনা তা এনটিআরসিএ কর্তৃক নিশ্চিত হওয়া। নতুন বিষয় খোলা, স্কুল, মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণিতে শাখা খোলা, ডিগ্রি বা অনার্স পর্যায়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আদৌ ঐ পদটির এমপিওভুক্তি হবে কি না তা চাকরিপ্রার্থীকে আগেই সুস্পষ্ট অবহিত করা।
বস্তুত শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষকদের পেশাগত বঞ্চনা একটি সামষ্টিক বিষয়। এজন্যই সর্বসম্মত জাতীয় গণদাবি- ‘শিক্ষা জাতীয়করণ’। তবেই শিক্ষক নিয়োগের সব অস্পষ্টতা, দীর্ঘসূত্রিতা, অনিয়ম ও ‘কুপ্রস্তাবে’র আবহ দূর হবে। ‘দেশের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা’ অচিরেই জাতীয়করণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা- এটাই সবার প্রত্যাশা।
ষ লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।