Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্মহীনের ইসলামপ্রিয়তা ও বাস্তবতা

মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

ইফতার একটি অনন্য ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক ঘোষিত রোজাদারের জন্য রোজার প্রতিদান স্বরূপ দুটি আনন্দের একটি ইফতার অন্যটি আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ। একটু চিন্তা করিতো, আল্লাহর সাক্ষাতের সাথে যোগকৃত আনন্দ হলো ইফতার; ভাবতেই শিউরে উঠে। ইফতারের কতইনা ফজিলত বরকত। রোজাদার সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের আগ মুহূর্তে ইফতার নিয়ে বসে থাকে; নির্দিষ্ট সময়ের এক মিনিট আগেও ইফতার করেনা। কোনো রোজাদারকে কোটি টাকা দিলেও সে ইফতারের দু’মিনিট আগে রোজা ভাঙ্গবে না। আল্লাহ ও তার ইবাদাতের প্রতি মুমিনের এ এক অনন্য ভালোবাসা। অথচ প্রগতিশীলতার নামে আমরা আজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রাজনৈতিক দল, বন্ধু সার্কেল, সমিতি, ফোরাম ইত্যাদি উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিল গুলোকে নারী-পুরুষের আড্ডাখানা বানিয়ে হাস্যরসে পরিণত করেছি। একটা সময় দেখতাম ব্যানারে লেখা থাকতো ইফতার মাহফিল কিন্তু মাহফিল শব্দে নাকি মৌলবাদের গন্ধ আছে তাই মাহফিল শব্দ কেটে নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে ইফতার পার্টি। মাহফিল শব্দের ব্যবহার করলে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী অবাধে বসে ইফতার করতে বেমানান লাগে তাই মূলত মাহফিল কেটে পার্টি শব্দের ব্যবহার। ইফতার পার্টি নাম দিয়ে যেন আজ যুবক-যুবতীর মিশ্রণ খেলার মেলা মিলাচ্ছে; চলছে অবাধে নষ্টামি। ইফতার হারিয়েছে তার মহাত্ব্য। সারাদিন রোজা রেখে ইফতার পার্টি করে রোজাকে উপবাসে পরিণত করাটা শোভনীয় নয়। যারা রোজা রেখে নারী-পুরুষ অবাধে মিলে ইফতার পার্টি করে তারা আদৌ রোজাদার কিনা তা সন্দিহান। কোনো সত্যিকার রোজাদার এমনটা করতে পারেন না। কেননা রোজাদার শয়তানের আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকে। রোজার মাসে আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে বন্দী করে থাকেন। কিন্তু সেটা জ্বীন শয়তান ইবলিশকে বন্দী করা হয়। মানুষ শয়তানদেরকে বন্দী করা হয়না। ফলে তারা কথিত ইফতার পার্টি নাম দিয়ে শয়তানের মিলনমেলা আয়োজন করে। অনেকাংশেই আবার দেখা যায় রোজা না রেখেই ইফতার পার্টিতে যোগ দিচ্ছে; রোজাদার ভাব নিয়ে বসে থাকে। রোজাহীন মানুষ ইফতারে যোগ দিতে লজ্জ্বা অনুভব করা উচিত। বিনা দাওয়াতে অংশগ্রহণ করাটা যেমন পশুত্বের কাজ তেমনি রোজা না রেখেও রোজাদার ভাব নিয়ে ইফতার পার্টি করাটা পশুত্বের কাজ। রোজা বা ইফতার কোনো ফ্যাশন নয়; ইহা ধর্মীয় অন্যতম ইবাদত। কতিপয় নামধারী মুসলিম দেখি মাস ব্যাপী রোজা নিয়ে কটুক্তি করে আবার ইফতার পার্টিতেও যোগদান করে। প্রগতিশীলতার নাম ভাঙ্গিয়ে ধর্মবিদ্বেষী মানুষ গুলো যখন দেখলো আসলে মানুষদের ধর্মবিমুখ করা যাবেনা। তখন তারা নতুন ফন্দি আটলো। ইবাদাতের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে চেতনার নামে নস্টামির পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। যারা জীবনভর রোজার নামাজের বিরোধীতা করেছে তারাও এখন রোজার প্রশংসা করে। তারা বলতো রোজা উপবাস; যা স্বাস্থ্যহানির প্রথম দ্বার। অথচ তারাই আজ প্লেটো এরিস্টটলের উদাহরণ টেনে বলেন, প্লেটো এরিস্টটলরা মস্তিষ্কের বিকাশের স্বার্থে উপবাস থাকতেন। যারা চিকিৎসা বিজ্ঞান দিয়ে রোজাকে মোকাবেলা করার প্রয়াস চালাতেন তারা আজ বলছেন রোজা রক্তের কোলেস্টরল কমায়; যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। মুমিনদেরকে ইবাদাতের অকল্যাণ নিয়ে হাজার কোটি যুক্তি ও তত্ত¡ শুনিয়ে ইবাদত বিমুখ করা যাবে না। মুমিন বিশ্বাস করে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত কোনো কিছুই অক্যাণকর নয়। ইসলাম বিদ্বেষীরা মুমিনদের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে না পেরে বর্তমানে নতুন মাত্রায় নিজেদেরকে ইসলামের খাদেম হিসেবে উপস্থাপন করতে বদ্ধ পরিকর। তারা আজ মনগড়া যুক্তি তত্ত¡ উপস্থাপন করে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতার সূচনা করছে। তারা বলে থাকে মনের পর্দা বড় পর্দা; সবকিছু নিয়তের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং চিন্তা পরিশুদ্ধ রেখে নারী-পুরুষ একত্রে অবাধে মেলামেশা দোষনীয় নয়। মুসলমানদের বড় একটা অংশও সে যুক্তিকে গ্রহণ করে নিয়েছে। লালন করে হৃদয় দিয়ে। অথচ আগুনের কাছে মোম গলবেই, তেঁতুল দেখলে জিহে জ্বল আসবেই, গলা চিপে ধরলে নিঃশ্বাস বন্ধ হবেই। প্রগতিশীলগণ অশুদ্ধ নিয়ত নিয়ে মুসলমানদের সুধী হয়ে মুসলিমদের ক্ষতি করার যে অপচেষ্টা করছেন সেটাও আজ অনেক মুসলিম বুঝতে চায়না। মাকাল ফলের মত কথিত প্রগতিশীলতাকে ধারণ করছে।

কারো শত্রæতা করে তার যতটুকু ক্ষতি করা যায়; বন্ধুত্বতা দেখিয়ে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করা যায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র স্নেহ ভালোবাসা। ইসলাম বিদ্বেষীরা বর্তমানে সে অস্ত্রটাকেই ব্যবহার করছে। তারা নিজেদেরকে মুসলমানদের বন্ধু বানাতে বড় তৎপর। তারা কথায় কথায় ইসলামের প্রশংসা করে মুসলমানদের হৃদয়ে স্থান নিতে চায়। মুসলমানদেরকে ভালোবাসা দিয়ে অন্ধ বানিয়ে সে অন্ধত্বের সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে তৎপর। চারিদিকে তাকালে মনে হয় তারা আজ বড় সফল।মুসলিম গুরু ব্যক্তিদের ঘুমে রেখে সাধারণ মুসলমানদের চেতনার বড়ি খাইয়ে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে নিজেদের তত্তে¡র প্রচলন ঘটাচ্ছে। মুসলিম ধর্মগুরুরা হচ্ছেন ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রথম টার্গেট। অর্থ-ভিত্তের লোভ দিয়ে কিনে নিচ্ছেন তাদেরকে। খ্রিস্টান মিশনারীর তৎপরতায় যখন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শ’খানেক মুসলমানকে খ্রিস্টান বানাতে পারেনি তখন ইসলাম বিদ্বেষীরা দরবারী পীর, খানকা শরীফের দরবেশ, ইসলামী দল ও সংস্থার নেতাকে কিনে নিয়ে মুক্তমনার প্রচলন ঘটিয়ে হাজারো মুসলিমের ইমানের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। আমরা মুসলিমরা নিজেদের যতটুকু জানি যতটুকু চিনি তার থেকে আমাদেরকে বেশি চিনে আমাদের জাত শত্রæ ইহুদি স¤প্রদায়। ইহুদিরা বিভিন্ন আমলে যেসব কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে তার ব্যাপক প্রচলন আমাদের বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে । কোনো মানুষ চাইলেই হিন্দু থেকে মুসলিম বা অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে, মুসলিম থেকে হতে পারে খ্রিস্টান বা অন্য কিছু অর্থ্যাৎ একজন মানুষ চাইলেই এক ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে কিন্তু কখনোই অন্য কোনো ধর্ম থেকে ইহুদী হতে পারেনা। ইহুদী হতে হলে জন্মাতে হবে অভিশপ্ত বনী ইসরাইলের বংশে। তাই ইহুদীরা অন্য ধর্মের লোক গুলোকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ইহুদী বানিয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে মনোনিবেশ না করে তারা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ গুলোকে নানান কৌশলে বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গু করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছে। (চলবে)

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ