দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
নাম জিয়া উদ্দিন। তবে ইসলামি ঘরানায় তিনি ‘নাজিম সাব হুজুর› নামে সুপরিচিত। মহান এই কর্মবীরকে নিয়ে লেখা আমি বকলমের পক্ষে সম্ভব নয় জানি, তবুও উস্তাদ মাওলানা আসসারুল হক দেউলগ্রামী হুজুরের নির্দেশে কীবোর্ডে হাত রেখেছি।
গত কয়েকদিন আগে নাজিম সাহেব হুজুরকে নিয়ে লেখার কথা বললেন হুজুর। বললেন হুজুরকে নিয়ে জ্বালাপোড়া আর এলাজির মতো বেআরাম আছে অনেকের। আমরা চারখাইয়ে ‘জামিয়া শায়খ জিয়া’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেছি। যা দুসরা ফেব্রæয়ারি, মঙ্গলবার রাব্বে কারিমের উপর তাওয়াক্কুল করে যাত্রা করেছে।
মানুষের জ্ঞান যখন পরিপূর্ণ হয় তখন তার বাক্যালাপ কমে যায়। হুজুর কথা কম বলেন। হেকমতে ভরপুর এক মহান কর্মবীরের নাম হলো ‹জিয়া উদ্দিন›।
জন্ম ও বংশ: জিয়া উদ্দিন ১৯৪১ সালের ৪ এপ্রিল সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কাকরদিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুকাদ্দাস আলী কুরআনের হাফেজ ছিলেন ও মাতা খায়রুন্নেছা বেগম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
শিক্ষা জীবন: তিনি পরিবার ও গ্রামের মসজিদের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হন। তিন বছর পর ১৯৫৬ সালে মাথিউরা ঈদগাহ বাজার মাদরাসা ও পরের বছর দারুল উলুম দেউলগ্রাম মাদরাসায় ভর্তি হয়ে মাধ্যমিক শ্রেণি সমাপ্ত করেন। ১৯৬২ সালে গাছবাড়ি জামিউল উলুম মাদরাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পাশ করেন। পরের বছর একই মাদরাসা থেকে কুরআনের তাফসীরের উপর উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।
কর্মজীবন: শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনের সূচনা করেন। ১৯৬৭ সালে জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শিহাব উদ্দিন তার কর্মতৎপরতা দেখে দুই বছর পর তাকে শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব দেন। ২০১০ সালে তিনি এই মাদরাসার মহাপরিচালক নিযুক্ত হন।
২০১৮ সালের ১৫ জুন তিনি আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের সভাপতি নির্বাচিত হন। পদাধিকারবলে তিনি কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ বোর্ড আল হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য।
এছাড়াও তিনি আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ড তানযীমুল মাদারিস সিলেটের প্রধান উপদেষ্টা ও মাদানিয়া কুরআন শিক্ষাবোর্ড, নুরানী তালীমুল কুরআন বোর্ডের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।
তিনি জামিয়া কাসিমুল উলুম মেওয়া, জামিয়া হাতিমিয়া শিবগঞ্জ, বাহাদুরপুর জালালিয়া মাদরাসা, আকাখাজানা মহিলা টাইটেল মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি মাদরাসার পরিচালক। আশ শিহাব পরিষদ, ইকরা ফাউন্ডেশন ইউকে, আল হিলাল ছাত্র সংসদ, আল কলম গবেষণা পরিষদ, চেতনা সাহিত্য পরিষদ, জাগরণ ইসলামী সাংস্কৃতিক পরিষদ, হিজবে এলাহী বিয়ানীবাজারসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক, সাহিত্যসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের তিনি উপদেষ্টা।
২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের এক কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তিনি উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজনীতি: ১৯৮০-এর দশকে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়তে তলাবায়ে আরাবিয়ার বৃহত্তর সিলেট শাখার সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৭ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে তিনি জমিয়তের সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। পরপর তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি কেন্দ্রীয় জমিয়তের সহকারী মহাসচিব নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তিনি সিলেট জেলা জমিয়তের সভাপতির দায়িত্ব পান। একই বছর কেন্দ্রীয় জমিয়তের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পুনরায় জেলা জমিয়তের সভাপতি হন। ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তাকে পুনরায় সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ২০১৮ সালে তাকে তৃতীয়বারের মতো সিলেট জেলা জমিয়তের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল আব্দুল মোমিন ইমামবাড়ীর মৃত্যুর পর তিনি জমিয়তের সভাপতি নির্বাচিত হন।
অবদান: তিনি অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে ধর্মীয় শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। দারুল উলুম হাটহাজারীতে অধ্যয়নকালে আইয়ুব খানের আমলে ‘মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। (চলবে)
লেখক: আলেম, সাংবাদিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।