Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরেক দফা কমলো টাকার মান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

মার্কিন ডলার নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে আরেক দফা কমল টাকার মান। গতকাল সোমবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও ১ টাকা ৬০ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমানে ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯১ টাকা ৫০ পয়সা। যা আগে ছিল ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা। ডলার সংকটের শুরু মূলত গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে। রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়তে থাকলেও সেই তুলনায় বাড়েনি রেমিট্যান্সের প্রবাহ। এতে ডলারের সংকট তৈরি হয়। সংকট বাড়তে থাকায় কমতে থাকে টাকার মান। ইতিহাসের সবচেয়ে টাকার মান কমে আসে এই সময়ে।

এর ফলে বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে ডলার। অনেকে সুযোগ বুঝে মুনাফার আশার ডলার মজুদ করে রাখছেন। এমন পরিস্থিতিতে ডলার সংকট মোকাবেলায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরে জানুয়ারির গোড়ার দিকে ডলারের বিনিময় মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৩ মার্চ ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা দর নির্ধারণ করা হয়। ২৭ এপ্রিল বাড়ানো হয় আরও ২৫ পয়সা। তখন ১ ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ৯ মে ডলারের বিনিময় মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
এরপর ১৬ মে দেশের ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন করা হয় টাকার। সেদিন টাকার মান ৮০ পয়সা কমিয়ে ডলারের বিপরীতে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা দর নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২৩ মে টাকার মান আরও ৪০ পয়সা কমিয়ে দর নির্ধারণ করা হয় ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা। এবার আরেক দফা কমানো হলো টাকার দাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে যে দরে ডলার বিক্রি করে সেটাই আন্তঃব্যাংক বিক্রির রেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সোমবার (গতকাল) ডলার দর ছিল ৯১ টাকা ৫০ পয়সা।
প্রবাসী আয়ে সর্বোচ্চ ৮৯ টাকা ২০ পয়সা দাম দিতে বলা হয়। কিন্তু পরে প্রবাসী আয় আনতে ডলারের দামের সীমা তুলে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। তবে হঠাৎ যেন ডলারের দাম বেশি বাড়িয়ে না ফেলা হয়, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। পাশাপাশি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো যাতে দাম বেশি বাড়াতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়।
এই অবস্থার মধ্যে গতকাল ডলারের বিপরীতে ১ টাকা ৬০ পয়সা কমে টাকার মান। অবশ্য খোলাবাজারে ডলার কিনতে গেলে এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। টাকার মান আরও কমবে-এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়ার পর ১০২ টাকাতেও ডলার কেনাবেচার ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৬ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এর আগে বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত অর্থবছরে ডলার কেনায় রেকর্ড গড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
টাকার মান আরেক দফা কমার কারণে আমদানি ব্যয় আরো বাড়বে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তবে এতে লাভবান হবেন রফতানিকারকরা। সাধারণত রফতানিকারকদের সুবিধা দিতেই স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়। রফতানিকারকরা অনেক দিন ধরেই এ দাবি জানিয়ে আসছিলেন, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন বাধ্য হয়ে এ পথে যাচ্ছে। তবে এত ক্ষতিগ্রস্থ হবেন আমদানিকারকরা। বর্তমানে দেশের বাণিজ্যে রফতানির তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেশি এবং তা বেড়েই চলছে। এমতাবস্থায় আমদানি খরচ বাড়লে নিত্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে মত তাদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আরেক দফা কমলো টাকার মান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ