Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বজন হারিয়ে বুকফাটা কান্না আহতদের আর্তনাদ

সিনেমার দৃশ্যকেও হার মানালো চট্টগ্রামের ডিপোর বিস্ফোরণ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

কাঁদছে সীতাকুণ্ড। কাঁদছে চট্টগ্রাম। সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন ও ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের স্বজনদের কান্না থামছে না। স্বজনহারানোদের বুকফাটা কান্না আর আহাজারিতে ভারি পরিবেশ। হাসপাতালগুলোতে চলছে আহতদের আর্তনাদ। তাদের অনেকেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। অনেকেই আবার চিরতরে পঙ্গু হওয়ার পথে। তাদের স্বজনদের চোখে-মুখে এখন ঘোর অন্ধকার। রাতের আঁধারে কন্টেইনার ডিপোতে লাগা আগুন অনেকের জীবনে অন্ধকার নামিয়ে দিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভীষিকাময় ওই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গেছে অর্ধশত মানুষের। ডিপোর ট্রাকচালক মো. শাহাজাহান শনিবার রাত নয়টার দিকে স্ত্রী রেশমি আক্তারের সাথে মোবাইলে কথা বলেছিলেন। কাজ শেষে শিগগির বাসায় ফিরবেন। কিছু আনতে হবে কিনা তাও জানতে চান তিনি। এ ছিল তার শেষ কথা। এরপর রেশমি খবর পান, ডিপোতে বিস্ফোরণ হয়েছে। সে থেকে বন্ধ যোগাযোগ। শাহজাহানের মোবাইলে কোন সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফোন বন্ধ পেয়ে উ™£ান্তের মতো দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রেশমি। এক সন্তানের বয়স ২ বছর, আরেকজনের ৫। চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে মর্গ ছুটছিলেন তিনি। তার সাথে যোগ দেন শাহজাহানের বাবা। সীতাকুণ্ড থেকে কোন অ্যাম্বুলেন্স আসলে তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। কিন্তু সেখানে শাহজাহানকে দেখা যাচ্ছে না। একপর্যায়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে শুয়ে পড়েন রেশমি। সাথে দুই শিশু সন্তান এবং শাহজাহানের বয়োবৃদ্ধ পিতার আহাজারি। প্রত্যক্ষদর্শীরা চোখের পানি সামলাতে পারছেন না। চমেক হাসপাতালের লাশঘর আর জরুরি বিভাগে এমন অসংখ্য মানুষের ভিড়। যারা স্বজনের খোঁজে শনিবার রাত থেকেই ছুটছেন। প্রিয়জনকে না পেয়ে আহাজারিতে লুটিয়ে পড়ছেন। সবাই তাদের স্বজনদের ফেরত চান। মারা গেলে তাদের লাশ চান। কিন্তু আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

মোহাম্মদ আলীর বোনজামাই মনির হোসেন কাজ করতেন ওই ডিপোতে। তিনি ছিলেন ডেপুটির এলসিডি (ক্রেন) অপারেটর। শনিবার রাত আটটার দিকে কাজে আসেন তিনি। মনির যেখানে কাজ করেন, তার কাছেই রাত নয়টার দিকে একটি কন্টেইনারে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে বোনজামাইয়ের খোঁজে ডিপো এলাকায় ছুটে যান শ্যালক মোহাম্মদ আলী। এরপর থেকে রাতভর ডিপো এলাকার সম্ভাব্য স্থানে তাকে খুঁজে চলেছেন। পরিচিতজন ও মনিরের সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করেছেন। কিন্তু কেউ সন্ধান দিতে পারেননি। এরপর খোঁজ নিতে থাকেন হাসপাতালগুলোয়। এরকম আরও অনেকের খোঁজ মিলছে না।

আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলে আসেন অলিউর রহমান। ডিপোতে কাজ করেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য ধারণ করে ফেইসবুকে লাইভ দিতে থাকেন। লাইভ দেয়া অবস্থায় ঘটে বিস্ফোরণ। একদিকে মোবাইল ফোন অন্যদিকে অলিউর। দুজনেই ছিটকে পড়েন। লাইভে থাকা অবসস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এ তরুণ। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে নগরীর নিমতলা বিশ্বরোড এলাকায় সুমন ছোটভাই মামুনকে জানিয়েছিলেন ডিপোতে আগুন লেগেছে। আমি দ্রুত চলে আসছি। একথা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরণে প্রাণ যায় তার। সুমন ফিরে এসেছে কিন্তু জীবিত নয়, লাশ হয়ে। ভাই মামুন তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে আহাজারি করছিলেন হাসপাতালের মর্গের সামনে। মামুনের মত স্বজনহারানোদের এমন আহাজারিতে সবার চোখে পানি। সান্ত্বনা দেওয়ার যেন কেউ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিপোর বিস্ফোরণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ