পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী মনোভাব সৃষ্টিতে উৎসাহ জোগাবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোয় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি কোন আইনের মাধ্যমে বিচার প্রত্যাশা করবেন? তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ আইন করা হয়। এ আইনের ফলে অনেকেই বিচার ও নিরাপত্তা পেয়েছেন। তবে এ আইনের কারণে কোনো সাংবাদিক বা নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে সর্বোচ্চ দৃষ্টি রাখতে প্রশাসনকে বলা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় প্রথমবারের মতো বিভিন্ন মাধ্যমের ১১ জন সাংবাদিক এ অ্যাওয়ার্ড পান। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১ আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সায়েম সোবহান আনভীর-এর সভাপতিত্বে এক জমকালো অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে পুরস্কারের অর্থ, সনদপত্র ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। একই অনুষ্ঠানে মফস্বলের সাংবাদিকতায় অবদান রাখা ৬৪ জন প্রবীণ ও গুণী সাংবাদিককে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা বুবলি।
দেশের গণমাধ্যমে গত বছর প্রকাশিত ও প্রচারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিচার বিশ্লেষণ করে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ১১ জনকে বাছাই করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেনÑ মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে দ্য ডেইলি স্টারের রিপোর্টার আহমাদ ইশতিয়াক (প্রিন্ট), মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি কাওসার সোহেলী (টেলিভিশন), জাগো নিউজ ২৪.কম-এর সিনিয়র রিপোর্টার সালাহ উদ্দিন জসিম (অনলাইন), অপরাধ ও দুর্নীতি ক্যাটাগরিতে দেশ রূপান্তরের হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শোয়েব চৌধুরী (প্রিন্ট), জিটিভির স্টাফ রিপোর্টার জান্নাতুল ফেরদৌসী (টেলিভিশন), নিউজ বাংলা২৪.কম-এর ফ্রিল্যান্সার জেসমিন পাপড়ি (অনলাইন), নারী ও শিশু ক্যাটাগরিতে সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার রাজীব আহাম্মদ (প্রিন্ট), আনন্দ টিভির রিপোর্টার শওকত সাগর (টেলিভিশন), ঢাকা পোস্টের সিনিয়র রিপোর্টার আদনান রহমান (অনলাইন), অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রে মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মাজাহারুল ইসলাম (টেলিভিশন) এবং আলোকচিত্রে প্রথম আলোর স্টাফ ফটোসাংবাদিক দীপু মালাকার। তাঁদের প্রত্যেককে পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে আড়াই লাখ টাকা, সম্মাননা স্মারক এবং সনদপত্র দেয়া হয়।
এছাড়া বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান উপলক্ষে দেশের তৃণমূল সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি জেলা থেকে একজন করে মোট ৬৪ প্রবীণ ও গুণী সাংবাদিককে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। তাঁদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা, সম্মাননা স্মারক এবং সনদপত্র দেয়া হয়। পরিয়ে দেয়া হয় উত্তরীয়। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এ ধরনের বিরল সম্মানে ভূষিত হওয়ায় তাদের চোখেমুখে ফুটে ওঠে আনন্দের ঝিলিক। নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে অ্যাওয়ার্ড পান দৈনিক ইনকিলাব-এর স্টাফ রিপোর্টার মো. হাফিজুর রহমান মিন্টু।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সমাজের যাবতীয় অনিয়ম দায়িত্বশীলদের নজরে আনার কাজটি করে যান সাংবাদিকরা। তারা সমাজকে সঠিক পথে প্রবাহিত করতে যে ভূমিকা পালন করেন, তা অন্য কারো দ্বারা সম্ভব নয়। সাংবাদিকদের মেধা ও যোগ্যতার কোনো ঘাটতি নেই। এমন অনেক সাংবাদিক আছেন, যারা বিসিএস পরীক্ষা দিলে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে বড় পদে আসীন হতে পারতেন।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করায় বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ সকল সাংবাদিকদের মধ্যে উৎসাহ জোগাবে। একইসঙ্গে গুণী সাংবাদিকদের সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে তারা খুবই মহৎ কাজ করেছে। এ জন্য আমি বসুন্ধরা গ্রুপকে সাধুবাদ জানাই। পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানান তিনি।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে সরকারের আন্তরিকতার বিষয় তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমান সরকারের শাসনামলেও বেসরকারি টেলিভিশনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়। এটি গঠনের উদ্দেশ্যই সাংবাদিকদের সহায়তা দেয়া। এটি আজকে সাংবাদিকদের আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে। সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চারÑএমন সাংবাদিকরাও সহায়তা পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বে কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতির দেশ হলেও করোনা পরিস্থিতিতে একজন মানুষকেও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়নি। সরকারের আন্তরিকতায় দ্রুত করোনা টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের সাফল্যগুলো অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান তার বক্তব্যে বলেন, সারা দেশ থেকে প্রবীণ ও গুণী সাংবাদিকদের সম্মানিত করতে পেরে আমরা গর্বিত। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করার এ পদক্ষেপ দেশের নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। এ আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। আগামী বছর থেকে পুরস্কারের পরিধি আরো বাড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, কালের কণ্ঠ পত্রিকার মধ্য দিয়ে আমরা মিডিয়া জগতে পা রাখি। তারপর একে একে সাতটি মিডিয়া হাউজ খুলেছি। বাংলাদেশ প্রতিদিন বাংলাদেশের এক নম্বর পত্রিকা। সবার হাতে হাতে পত্রিকাটি দেখা যায়। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সত্যকে সত্য বলবেন, মিথ্যাকে মিথ্যা। আমাদের পত্রিকা প্রকাশনার উদ্দেশ্যই ছিল সত্য তুলে ধরা। দেশের অগ্রযাত্রায় ব্যবসায়ীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ব্যবসায়ীদের নিয়ে সমালোচনা করার আগে অবশ্যই তাদের অবদান স্বীকার করতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো অন্যায় জুলুমের শিকার না হন, সেদিকে আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। আমরা সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা একটি কঠিন কাজ। পেশাটিকে সামনে এগিয়ে নিতে কাজ করছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। তাতে সারা দেশ থেকে সাংবাদিকদের সহায়তা পাচ্ছি। জনগণের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরছেন অনেক ঝুঁকি নিয়ে। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশের সাংবাদিকরা আরও প্রাণবন্ত হবেন। আজকের এ পুরস্কারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়ন হবে। এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান।
জুরি বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান যারা মানোন্নয়নে সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন, যারা সংবাদ জনগণের কাছে বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করে যাচ্ছেন, যারা নিজেদের অবস্থানকে সৎ রেখেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আজ বিশ্বাস করি এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারা আরো শক্তি পাবেন এবং আমাদের ভবিষ্যতে আরো উন্নতির দিকে যাবে এইটুকু আশা করছি’।
পুরস্কার প্রদানের লক্ষ্যে জুরিবোর্ডে অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমানের নেতৃত্বে ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, সম্প্রচারে আসার অপেক্ষায় থাকা টেলিভিশন চ্যানেল ‘টিভি টুডে’র প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার সম্পাদক অমিত হাবিব, আলোকচিত্রী ও লেখক নাসির আলী মামুন, চলচ্চিত্র শিক্ষক গবেষক ও পরামর্শক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, দেশে বিদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া জুলফিকার আলি মাণিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাওন্তী হায়দার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।