পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজ রোববার আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে। ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ প্রথম কাজ শুরু করে । ওই সময় ইরাক এবং নামিবিয়ায় দুইটি অপারেশনে অংশ নেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ২৫টি দেশে ত্রিশটির বেশি মিশনে অংশ নেয়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের অংশ গ্রহণ ১৯৮৯ সালে। এ পর্যন্ত ২১ টি দেশের ২২টি মিশনে ২০ হাজার ৭৯৪ জন পুলিশ সদস্য অংশ নেন। ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনে কর্মরত থাকা অবস্থায় লে. কর্নেল মো. ফয়জুল করিম নিহত হন। তিনি হলেন শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী প্রথম বাংলাদেশী অফিসার যিনি বিদেশে মিশন যারা মারা যান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২’ উপলক্ষ্যে এক বাণীতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, জাতির পিতার অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে শান্তিও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস ২০২২’ পালনের উদ্যোগকে প্রেসিডেন্ট স্বাগত জানান। এ উপলক্ষ্যে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সকল শান্তিরক্ষীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বিশ্বশান্তি রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারী বীর শান্তিরক্ষী সদস্যদের তিনি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিসংঘ মিশন ও বহুজাতিক বাহিনীতে দেশের শান্তিরক্ষীদের অনন্য অবদান বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং এ দেশকে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সমর্থন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের শান্তিরক্ষীরা যাতে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারে, সেজন্য সরকার সব রকম চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ঐসব দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। ‘বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে শান্তিরক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে যে গৌরব ও মর্যাদা লাভ করেছে, তা আমাদের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য পেশাদারিত্ব, সাহস, বীরত্ব ও দক্ষতারই অর্জিত ফসল।’
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা যায়, সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৮ জন সদস্য বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত হয়েছেন। আর এ কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর ১৩৯ জন সদস্য। ২০০৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় শান্তিরক্ষী বাহিনীর ১৫ জন বাংলাদেশি সেনা নিহত হন। ২০০৫ সালে কঙ্গোতে ৯ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ঘটনায় এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর ২৪০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ছয় হাজার ৩২৪ জন সদস্য মিশনে কর্মরত আছেন। এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর ৩৭১ জন নারী সদস্য জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। এই মুহূর্তে সশস্ত্র বাহিনীর ৪৩ জন নারী সদস্য মিশনে অবস্থান করছেন। বর্তমান নয়টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশের পাঁচজন নারী কর্মকর্তা সিভিলিয়ান পুলিশ অফিসার হিসেবে প্রথম ২০০০ সালের পূর্ব তিমুর মিশনে যোগ দেন। আমেরিকার দেশ হাইতি মিশনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি) রখফার সুলতানা খানমের নেতৃত্বে পুলিশের প্রথম নারী ইউনিট জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেন। ওই দলটি সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করে। দারফুর মিশনে ২০০৮ থেকে ২০২১ সালে মিশন শেষ হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। বতর্মানে একটি নারী ফর্মড পুলিশ ইউনিট কঙ্গোতে কাজ করছে। ২০১১ সাল থেকে ওই দলটি নিয়োজিত আছেন। বতর্মানে বিভিন্ন মিশনে পুলিশের ৫০১ জন সদস্য নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে নারী পুলিশ সদস্য ১৪৮ জন। বিশ্ব শান্তিরক্ষার এ কার্যক্রমে পুলিশের ২১ জন সদস্য নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। ২০১৯ সালে কঙ্গে মিশন পরিদর্শনকালে তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি রওশন আরা বেগম মৃত্যুবরণ করেন।
আইএসপিআর জানায়, আজ রোববার সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। সকাল সাড়ে ১০ টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।