পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের আসাম থেকে নেমে আসা ঢলে গত এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জের হাওরে হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। হাজার কৃষকের স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে গেছে। চলতি মাসে সিলেট শহর পানিতে ঢুবে গেছে ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে। এপ্রিলের শেষ দিকে হঠাৎ তিস্তার উজানে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা বাঁধ খুলে দেয়ায় তিস্তাপাড়ের শত শত বিঘার পেঁয়াজ, ধান-গম-আলু-বেগুন, চিনাবাদামসহ নানা ধরণের শর্স্য নষ্ট হয়েছে। উজানের দেশ ভারত নিজেদের ইচ্ছামতো পানি ছেড়ে দেয় আবার নিজেদের ইচ্ছামতো পানি ধরে রাখে। অথচ দুই দেশের স্বার্থ দেখতে যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন শুধুই ভারতের স্বাথ্যেই বৈঠক করে! ভাতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি ঝুলে রাখার পর ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ বার যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তিস্তার জট খোলেনি, মাঝখানে ভারত নিজের স্বার্থে ফেনি নদীর পানি চুক্তি করে সে পানি ত্রিপুরায় নিয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ ভারতের আসামের গুয়াহাটিতে ভারত-বাংলাদেশের দুদিন ব্যাপী নদী কনফারেন্স শুরু হচ্ছে। এর পরে আগামী ৩০ মে সোমবার নয়াদিল্লিতে জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক। আগামী জুনে ঢাকায় যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হতে পারে। গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে অংশ নেবেন ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এই প্রথম বাংলাদেশ এবং ভারতের রাজধানীর বাইরে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কোনো একটি অঙ্গরাজ্যে বৈঠক করছেন। ভারত-বাংলাদেশের পাশাপাশি এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন প্রতিবেশী কিছু দেশের প্রতিনিধিরাও। প্রশ্ন হচ্ছে এই বৈঠকে কি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার চুক্তি বা কারণে অকারণে বাংলাদেশের হাওর ভাসিয়ে দেয়ার বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে? নাকি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বৈঠকের নামে পিকনিক করে দেশে ফিরবেন? এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিস্তর বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এক কে আবদুল মোমেন ইনকিলাবকে বলেন, ওরা (ভারত) আমাদের দাওয়াত দিয়েছে। আমরা অংশ নেব। সেখানে হয়তো দুই দেশের নদী কানেকটিভিটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমরা চাইব, কিভাবে নদীপথে কানেকটিভিটি বাড়ানো যায়।
জানা গেছে, ৩০ মে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে সপ্তম জেসিসি বৈঠক। ঢাকার পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও নয়াদিল্লির পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এতে নেতৃত্ব দেবেন। বৈঠকে উভয়পক্ষের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিশেষ করে বাণিজ্য, কানেকটিভিটি, পানি, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুসহ নতুন নতুন অনেক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় উঠে আসবে। ঢাকার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সফর চূড়ান্ত করাসহ হাজার হাজার কোটি টাকা আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেশটিতে গ্রেফতার পি কে হালদারকে বাংলাদেশে দ্রুত ফেরত আনতে নয়াদিল্লির সহযোগিতা চাওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গুয়াহাটিতে ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ ফরমেটের আয়োজনে দুদেশের এজেন্ডাভিত্তিক কোনো আলোচনা হবে না।
সুত্র জানিয়েছে, গুয়াহাটির বৈঠকে তিস্তা, মনু, ধরলা, দুধকুমার, গোমতি, খোয়াই ও মুহুরি নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়েও আলোচনা হবে। পাশাপাশি সিলেট সীমান্তে কুশিয়ারা নদী থেকে বাংলাদেশ যাতে পানি তুলতে পারে সে বিষয়টিও আলোচনায় থাকবে। এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বছর ভারতে আসার জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়ে গেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস বলেন, দ্বিপক্ষীয় এজেন্ডায় যা যা আছে সবই থাকছে। ট্রেড আছে, কানেকটিভিটি আছে, কমার্স সেক্টর কো-অপারেশন, ওয়াটার কানেকটিভিটি আছে। সেখানে তিস্তা, কুশিয়ারা, ছয়টি অভিন্ন নদীসহ সব থাকবে। আরো অনেক নতুন নতুন ইস্যু আছে। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে Ñআইসিটি রয়েছে, ফুড সিকিউরিটি রয়েছে, রিনিউয়েবল এনার্জি, ক্লাইমেট ইস্যু আছে। এবারের বৈঠকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো সুখবর থাকছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব মাশফি বলেন, এখন বা এ বৈঠকে কোনো সুখবর পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি সপ্তম জেসিসিতে কোনো এমওইউ বা সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনাও নেই।
যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মো. মাহমুদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, গত ১১ বছর ধরে আমরা এই চুক্তি সাক্ষরের অপেক্ষায় আছি। তিস্তা চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনার কী আছে বুঝতে পারছি না। তবে এবার কিছু একটা হবে।
জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদি সরকার তিস্তার বাস্তব চেহারা শেখ হাসিনা সরকারকেও জানিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার কাছে তিস্তার পানি যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশে তিস্তার দুপারের চাষিদের সেচের পানি সরবরাহ করা। শেখ হাসিনা ও মোদি সরকার একাধিকবার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা করেছেন, চাষিদের সেচের পানি দেয়ার উপায় কি এবং কিভাবে এই তিস্তার পানি সরবরাহ করা যায় ও তিস্তার শুকনো ছবি কি করে বদলে দেয়া যায়। কারণ তিস্তা শুকনো থাকার কারণে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। দুই দেশ শুধু তিস্তা নয়, অন্য একাধিক নদীর চেহারা এবং তার চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিষয় ছাড়াও নদীর পানি কিভাবে দূষণ মুক্ত করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা করবে। দরকার হলে নদী দূষণ রুখতে দুই দেশ একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার রূপরেখা তৈরি করে নিয়ে এই কনফারেন্সে উপস্থিত হবে বলে জানা গেছে।
চুক্তির টেবিলে পৌঁছে যাওয়ার পরও ১১ বছর ধরে তিস্তা চুক্তি হয়নি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঢাকা সফরে গিয়ে বেঁকে বসেন মমতা। সেই থেকে ঝুলে আছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেকার তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরবর্তীকালে তিস্তার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নদী কমিশন গঠন করেন। কিন্তু সেই রিপোর্ট আজো প্রকাশ করা হয়নি। কখনো মুখ খোলেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কিংবা সেখানকার নদী কমিশনের চেয়ারম্যান। তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে নয় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য, চুক্তি হলেই তো হবে না। চুক্তি মোতাবেক পানি বাংলাদেশকে দিতে হবে কিন্তু নদীতে পানি নেই, তাহলে এই চুক্তি করে লাভ কি। তবে সেই থেকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে কার্যত ভিলেন হয়ে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিগত ১১ বছরে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে মমতার। বাংলাদেশের তরফ থেকেও কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এসব আলোচনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার একই কথা বলেছেন Ñতিস্তায় পানি কোথায়, বাংলাদেশকে চুক্তি করে দেবেন?
গবেষকরা বলেছেন, তিস্তা নদী সিকিম হিমালয়ের ৭ হাজার ২শ’ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে সৃষ্টি হয়ে দার্জিলিং এর শিবা নামে পরিচিত একটি গিরি সঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে। শিলিগুড়ি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সেবাকে করোনেশন সেতু পেরিয়ে তিস্তা পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা পেরিয়ে বাংলাদেশের রংপুর জেলার মধ্যে দিয়ে তিস্তা মিশেছে ব্রহ্মপুত্র নদীতে। সিকিমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় তিস্তা নদী অনেকগুলো গিরিখাত সৃষ্টি করেছে। তিস্তার পথে নানা ধরনের বনভূমি দেখা যায়। তিস্তা ভয়ঙ্কর চেহারা নেয় বর্ষাকালে। বৃষ্টি নামতেই তিস্তার দুপাশের অঞ্চল ছাপিয়ে বন্যা হয়। এই সময় তার আশপাশের পাহাড় ধ্বস নামতে দেখা যায়।
১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে স্থির হয় তিস্তা নদীর পানির ৩৬ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ এবং ৩৯ শতাংশ পাবে ভারত। বাকি ২৫ শতাংশ পানি নদীতে সংরক্ষিত থাকবে। কিন্তু কীভাবে এই পানি ভাগাভাগি হবে সে বিষয়ে তখন কোনো নির্দেশনা তৈরি করেনি দু’দেশ। পরবর্তীকালে ২০০৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একটি যৌথ বৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ শতাংশ দু’দেশের মধ্যে ভাগ করে অবশিষ্ট কুড়ি শতাংশ নদীর জন্য সংরক্ষিত করার প্রস্তাব দেয়। ভারত তখন এই প্রস্তাবে অসম্মতি জানায়। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নীলফামারীতে তিস্তা নদীর উজানে এবং পশ্চিমবঙ্গ জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার মহকুমায় গাজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে। এর বাইরে আছে সিকিমে নদীর ওপর পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প। ফলে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহের ক্ষতি হয়। এতে তিস্তার চেহারা বদলে বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠেছে। কমেছে নদীর নাব্যতাও। ফলে বর্ষার মৌসুমেও দেখা যায় নদীর বিভিন্ন জায়গার চর জেগে আছে। শুকনো মওসুমে তিস্তার পানি না পেয়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয় বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।