বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
সরকারি প্রচার-প্রচারণার ডামাডোলে সাধারণ নাগরিকদের ধারণা ছিল যে, সকল দিক দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলের সময় ব্যানার-পোস্টার ও ফেস্টুনে যে স্লোগানটি কবিতার মতো ছন্দ মিলিয়ে লক্ষ বা ততধিকবার বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল তা হলোÑ “উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে দুর্বার- এখন সময় বাংলাদেশের মাথা তুলে দাঁড়াবার।” এসব প্রচার-প্রচারণার রেশ মেলাতে না মেলাতেই খবর এসেছে যে, বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের সূচকে ১১ ধাপ পিছিয়ে ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৪ নম্বরে। অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়েও আরো মাত্র ৩৫ দেশের উন্নয়ন সূচকে নি¤েœ অবস্থান করছে। এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সে সূচকে মাত্র গত বছর ১০৩ নম্বরে অবস্থান করছিল, এক বছর পরে ১১ ধাপ পিছিয়ে এখন অবস্থান করছে ১১৪ নম্বরে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহু জাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান লিগাটাম ইনস্টিটিউট কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তভিত্তিক “প্রসপারিটি ইনডেক্স ব্যাংকিং-২০১৬” প্রকাশিত হলে জানা যায় যে, গত বছরের অবস্থান ১০৩ থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১১৪।
একুশ বছর পরে ১৯৯৬ সালের জুন মাসের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আওয়ামী লীগ পরবর্তী পাঁচ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। এরপর পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হয় বিএনপি সরকার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে সরকার গঠনে সমর্থ হয় আওয়ামী লীগ। ২০০৯ থেকে প্রায় নয় বছর যাবৎ একটানা আওয়ামী লীগের শাসনে বাংলাদেশ সকল দিকেই উন্নতি লাভ করেছে, বিশাল বাজেট গ্রহণ করে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশগুলোর তালিকায় উঠে এসেছে, দেশের মাথাপিছু আয় এখন প্রায় দেড় হাজার ডলার ইত্যাদি সরকারিভাবে বলা হচ্ছে। দলের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ বলে বেড়াচ্ছেন যে, দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুত এগিয়ে চলেছেÑ এই সকল প্রচারণা ও গলাবাজির মধ্যে লিগাটাম ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত উন্নয়নের বিশ্বসূচক আমাদেরকে হঠাৎ অত্যন্ত বিস্মিত ও হতাশ করেছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে আবার হয়তো শুনতে হবে যে, লিগাটাম বিএনপির দ্বারা প্ররোচিত হয়ে এসব তথ্য প্রচার করেছে। প্রকৃত পক্ষে যা বিভ্রান্তিকর ও বানোয়াট।
অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা-বিজ্ঞানের নির্ভরযোগ্য সাময়িকী “ল্যান্সেট”-এর ১০ নভেম্বরের সংখ্যায় প্রকাশিত বাংলাদেশে শিশু-মৃত্যুর উচ্চ হার সম্পর্কে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা হলোÑ গত এক বছরেই বিভিন্ন রোগের কারণে এক লাখ উনিশ হাজারেরও অধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে যে দশটি দেশে অধিক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, ওই রকম শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছে যে, নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিশু মৃত্যু রোধে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার রোলমডেল বা অনুকরণীয় দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ল্যান্সেটের তথ্যে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ উপযুক্ত সময়ের আগেই প্রসব সংক্রান্ত জটিলতা, বাল্যবিবাহ, গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিহীনতা, মায়ের বিভিন্ন রোগ ইত্যাদি কারণে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সরকার বাল্যবিবাহ রোধ করার ব্যাপারে আরো তৎপর হলে শিশু মৃত্যুর হার নিচে নামার সম্ভাবনা অধিক। এ ব্যাপারে সচেতনতা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমেছে বলে সরকারি প্রচারণা খুব জোরেশোরে করা হয়, অথচ এখনও ব্যাপক হারে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯টি দেশের মধ্যে ৯৯তম। লিগাটাম ইনস্টিটিউটের তথ্যে এটা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমলেও ল্যান্সেট সাময়িকীতে শিশু মৃত্যুর সর্বোচ্চ দশটি দেশের মধ্যে এখনও বাংলাদেশের নাম থাকাটা সরকারিভাবে দাবিকৃত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্য দেশের তুলনায়Ñ এমনকি ভারতের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে এমন দাবির অসারতাই প্রমাণ করে। আসলে জনগণের মধ্যে বিশেষ করে গ্রামে বসবাসরত জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা আরো বাড়াতে হবে, আরো ব্যাপকহারে শিশু মৃত্যুর ঘটনা প্রতিরোধে যথোপযুক্ত কর্মসূচি নিতে হবে।
লিগাটাম ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে একটি দেশ গত এক বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ব্যবসার পরিস্থিতি, পরিবেশ দূষণ হ্রাস, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এরকম ১০টি খাতে কতটুকু উন্নতি করেছেÑ এসবের পরিসংখ্যানই তুলে ধরা হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকে বলা হয়েছে যে, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নয় বছরে বাংলাদেশ ১০৭ ধাপ থেকে ২০ ধাপ উন্নতি করে ৮৭ নম্বর অবস্থানে উঠে এসেছে। তবে বেকারত্ব পুরোপুরি দূর করতে পারেনি। জনগণের স্ব-প্রণোদিত প্রচেষ্টার ফলে বেকারত্ব হ্রাস পেলেও অসংখ্য তরুণ বিদেশে বৈধ বা অবৈধভাবে পাড়ি জমাচ্ছে। আসলে রাষ্ট্রীয়ভাবে অর্থনৈতিক দিকে অগ্রগতি বা উন্নয়ন ঘটলেও সাধারণ নাগরিকদের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয়। তৈরি পোশাক খাতের রফতানি ও প্রবাসী শ্রমিক ও চাকরিজীবীদের দ্বারা প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক-শক্তি হিসেবে উন্নয়নে অবদান রাখলেও, এক শ্রেণীর লোক ধনাঢ্য হিসেবে গজিয়ে উঠলেও রাষ্ট্রের সম্পদ ন্যায়সঙ্গতভাবে বিতরণের অভাবে নাগরিকদের শ্রেণী বিভেদ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। দলীয় নেতৃবৃন্দ দ্বারা বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে আদায়ের অযোগ্য খেলাপি ঋণের প্রায় পঁচিশ হাজার কোটি টাকার বোঝার দরুন অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভোগ্যপণ্য ও ব্যবহার উপযোগী সকল সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি জনগণের নাভিশ্বাস ও কষ্টের উদ্রেক করেছে। হতাশ জনগণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ইচ্ছা ও শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বাভাবিক স্ফীতকায় বাজেট প্রণয়ন করে সাধারণ জনগণের কোনো উপকারেই লাগানো হচ্ছে না। কাজেই অনবরত অর্থনৈতিক উন্নতির স্বীকৃতি লাভের পরে এক বছর সময়ের মধ্যেই ১১ ধাপ পিছিয়ে ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৮৭তম-তে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারে না।
পরিবেশ দূষণ হ্রাস ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আরো নি¤েœ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৮তম। সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ক্ষেত্রে অনেক প্রকল্প হাতে নিলেও সেসবের বাস্তবায়ন মন্থর। তার ওপর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সুন্দরবনের মাত্র পনের কিলোমিটার দূরে রামপাল প্রকল্প গ্রহণ করে দেশের ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছে। প্রতিটি দেশে বনভূমি থাকা দরকার দেশের আয়তনের পঁচিশ ভাগের মতো-এই হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মতামত। বাংলাদেশের বনভূমির আয়তন হচ্ছে মাত্র এগার ভাগ। যেখানে বনভূমির আয়তন আরো বাড়ানো দরকার সেখানে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব-ঐতিহ্য বলে স্বীকৃত সুন্দরবন ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। রামপাল প্রকল্প চালু হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে তাপমাত্রা নিঃসরণ হওয়ার কথা তাতে সুন্দরবনের বৃক্ষরাজি ও জীববৈচিত্র্য কয়েক বছরেই ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনাÑ সেখানে প্রকল্পটি সুন্দরবন থেকে আরও দূরে অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এতে গণতন্ত্রের প্রতি সরকারের মনোভাবও পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ছে।
শিক্ষা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ১১৯তম। শিক্ষার কোনো সন্তোষজনক মান না থাকায় দেশের বিত্তশালী পরিবারের তরুণ শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিক বা ¯œাতক পরীক্ষার পরেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরেও চালু রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন ধরনের শিক্ষা। কিন্ডার গার্টেনগুলোতে রয়েছে ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যম। পাশাপাশি রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও রয়েছে হযবরল অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও কোনো প্রস্তুতি ছাড়া নতুন নতুন বিভাগ চালু করার ব্যাপারটি নিয়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। শিক্ষার মান এতটাই নিচে নেমেছে যে, বিশ্বের মানসম্পন্ন পাঁচশত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয়নি। অনেক উচ্চ মাধ্যমিক ও ¯œাতকোত্তর শিক্ষা প্রদানে অনুমতিপ্রাপ্ত কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আনুপাতিক হার হচ্ছে ১-১৫০। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক সময়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য ছিল পড়াশোনার মান অত্যন্ত উঁচু থাকার জন্য। অনেক প্রবীণ শিক্ষালয়ের ভবন জরাজীর্ণ হলেও সংস্কার করা হচ্ছে না। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন, মাধ্যমিক স্কুল, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলোর মাসিক বেতন ও অন্যান্য খাতে অভিভাবকদের বিরাট অঙ্কের অর্থ গুনতে হচ্ছে। এ রকম অবস্থার কথা বিবেচনা করে সঙ্গতি থাকলে বেশির ভাগ অভিভাবকই তাদের সন্তানদের বাইরে পাঠিয়ে দেন উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য।
ব্যবসায়ের পরিবেশ ক্ষেত্রে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৬তম। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য বিদেশের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য বহু ধরনের সুবিধা দেয়া সত্ত্বেও বাস্তবে অনেক প্রকার হয়রানিমূলক ব্যবস্থা থাকায় কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিনিয়োগ বোর্ডের “ওয়ান স্টপ সার্ভিস”ও খুব একটা দ্রুততার সাথে সেবা দিতে পারছে না। দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও খুব শীঘ্র বিদ্যুৎ ও গ্যাস পাচ্ছেন না। ফলে বিনিয়োগ খুবই মন্থর। ব্যাংক ঋণের সুদের হারও অনেক বেশি। ব্যবসাবান্ধব হিসেবে বাংলাদেশ খুব বেশি পরিচিতি লাভ করতে পারছে না। তাই সূচকে ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ১১৬।
সূচকে সুশাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে ১০৯তম স্থান। এ ক্ষেত্রে সকলেই স্বীকার করবেন যে, এ দেশে সুশাসনের বড়ই অভাব। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখানে আসন গেড়ে বসেছে। তাই দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্তের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান বিচার করে এ দেশে সুবিচার পাওয়া যায়। রাজনৈতিকভাবে দলীয় বিবেচনায় অপরাধীদের ছাড় দেয়া হলেও প্রতিপক্ষের প্রতি এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে যে, তারা সকলেই অপরাধী। সাংবাদিক হত্যা, ভূমি দখল, সরকারি সম্পত্তি দখল, হত্যা, ধর্ষণ, ব্যাংক থেকে ভুয়া দলিলের দ্বারা হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নেয়া ইত্যাদি অপরাধীদের কোনো বিচার বা দ্রুত বিচার করা হচ্ছে না। সাধারণ নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পুলিশের কাছ থেকে বিচার না পেয়ে বিচার বিভাগে মামলা করলেও বিচার প্রার্থীরা বছরের পর বছর কোনো বিচারই পাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম। এই ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবার মান অত্যন্ত নিকৃষ্ট বলে ভুক্তভোগী সকলেই মনে করেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে যেমন অবস্থাপন্ন নাগরিকরা শিক্ষার মান অত্যন্ত নিচু স্তরের কারণে সন্তানদেরকে কষ্ট করে হলেও বিদেশে পাঠিয়ে দেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে, উচ্চবিত্তরা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করান, মধ্যবিত্তরা এমন কি নি¤œবিত্তরা চিকিৎসার জন্য ব্যাপক হারে ভারতে গমন করেন। শত শত কোটি টাকা বাইরে চলে গেলেও সরকার নিরাসক্ত ভূমিকা নিয়ে সমস্যাটি দেখেও না দেখার ভান করে। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীরা নি¤œমধ্যবিত্ত বা দরিদ্র শ্রেণীর হলেও কোনো সরকারি হাসপাতালে পরিপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন না। ওষুধ যাই দেয়া হয় না কেন, সাধারণ নিয়ম হচ্ছে রোগীরা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হন। দেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর ভুক্তভোগী চিকিৎসা প্রার্থীদের জন্য তা অনেক কষ্টসাধ্য।
এ ছাড়া অন্যান্য যেসব ক্ষেত্রে সূচকের মান উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে সামাজিক পুঁজি : ১২২তম, ব্যক্তি স্বাধীনতা : ১০৫তম, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ৭৬তম এবং অর্থনৈতিক মান ৮৭তম। সার্বিক অবস্থান ক্ষেত্রে ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে ১১৪তম দেশ। সব খাত বিবেচনায় এনে বাংলাদেশকে ১১৪তম দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে ছুটে চলা হচ্ছে আত্মসন্তুষ্টি লাভের একটি বিষয়। উন্নয়ন যতটুকুই হয়েছে তার জন্য প্রশংসার দাবি রাখে বেসরকারি প্রচেষ্টা, বিনিয়োগ ও বেসরকারি উদ্ভাবনী সাফল্য। তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে সরকারি প্রচেষ্টার প্রশংসার দাবিদার হলেও তথ্যপ্রযুক্তির সর্বশেষ পণ্যসামগ্রী দেশে এনে পরিচিত করার প্রয়াস বেসরকারি ব্যবসায়ীদেরÑ এ কথা স্বীকার করতেই হবে। এ খাতে সরকারি সহায়তা যেমনÑ ব্যাংক ঋণ, কর মওকুফ, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পণ্য খালাস ইত্যাদি সহজিকরণের জন্য সরকারি নীতি প্রণয়ন এবং সেসব কার্যকর করা হচ্ছে সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।
শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হ্রাস করার জন্য সরকার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়া সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে সে সকল সুবিধা ভোগ করার জন্য অধিকতর সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।
সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন সূচকে আরো উপরে ওঠার প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে।
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।