Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

১২৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ

চকরিয়া বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

কক্সবাজারের বৃহত্তর উপজেলা চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। এই পার্কের উন্নয়ন কাজের জন্য সরকার ১২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই বরাদ্দের অনুকূলে যেসব কাজ চলমান, সেইসব কাজে ‘পুকুর চুরি’ হচ্ছে। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেনতেন ভাবে প্রকল্পের কাজ করছে। সিডিউল মোতাবেক রড, সিমেন্ট, বালি ব্যবহার না করে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে কোন রকম তদারকি ছাড়াই। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করার কারণে মারা যাচ্ছে দিন দিন বিভিন্ন মুল্যবান পশুপাখি। অদক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।

পার্কটি দেশের প্রথম সাফারি পার্ক হিসেবে নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক’ নামে। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পার্কে দেশ-বিদেশ থেকে আনা হয় নানা জাতের পশু-পাখি। ফলে পুরোদিন পার্কটি দর্শণার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

এক দশক পর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ এন্ডোজার ও উন্মুক্ত বেষ্টনীতে ফাটল ও রঙ উঠে যায়। ফলে হ্রাস পায় আকর্ষণ। দুই দশক পর সাফারি পার্কটি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ১২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ টাকা ব্যয়ে ১৮১টি আইটেম নির্মাণ-মেরামতের পরিকল্পনা করা হয়।

জিওবি’র ২০১৯-২০২০ থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মধ্যে নির্মাণ-মেরামতের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে ১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ ও কাজ না হওয়ায় একবছর বাড়িয়ে ২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত উন্নয়নের সময় বাড়ানো হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে পার্কে নির্মাণ-মেরামত করা হয় ২০ কোটি টাকার। ২০২১-২২ অর্থবছর অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে ২৮ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। ১২৬ কোটি টাকার মধ্যে অবশিষ্ট কাজ ২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে শেষ হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে চলমান ১২৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের বিষয়ে সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কক্সবাজারের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২৬ কোটি টাকা বরাদ্দে ১৮১টি আইটেমের কাজ চলছে। এরই মধ্যে সম্পন্ন ও চলমান রয়েছে বাঘের খাঁচার অভ্যন্তরীণ বেষ্টনী, ইনার বেরিয়ার, নাইট সেল্টার, সিংহের খাঁচার অভ্যন্তরীণ বেষ্টনী, স্টাফদের নিরাপত্তা টাওয়ার ৯টি, ৫ কিলোমিটার সড়ক মেরামত, জেব্রার ফিডিং স্পট, লেক খননসহ ৯টি আইটেম।

তিনি ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন করে নির্মাণ ও মেরামত চলছে কুমিরের ড্রেনের উন্নয়ন, ডরমিটরি মেরামত, দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ ও প্রধান সড়ক, সড়কের দুইপাশে ভূমির উন্নয়ন, ফুটপাত নির্মাণ, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, চত্বরের চতুর্পাশে দৃষ্টিনন্দন নিরাপত্তা দেয়াল, টিকেট কাউন্টার, মাইক্রোবাস, কার, মোটরসাইকেল ও বাসের পৃথক দুটি পার্কিং চত্বর, বাঘ ও সিংহের সাফারিতে প্রবেশ ও বের হওয়ার স্বয়ংক্রিয় সড়ক, পার্কে প্রবেশ ও বের হওয়ার পৃথক সড়ক, তৃণভোজীদের বেষ্টনী, শিশুদের অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ১০টি প্রাণীর এনক্লুজার নির্মাণ, জলজ পাখির বেষ্টনী নির্মাণ-উন্নয়ন-সম্প্রসারণ, কুমিরের জন্য জলাশয় নির্মাণ, কানেক্টিং রোড নির্মাণ, সরবরাহ লাইন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, কালভাট ও সেতু নির্মাণ, পিকনিক এলাকায় লেক নির্মাণসহ চলতি অর্থবছরে ৩২টি আইটেমের কাজ চলছে।

এসব চলমান কাজগুলো রড সিমেন্টের দামের দোহাই দিয়ে সিডিউল মোতাবেক রড-সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
অবশিষ্ট ১৪০টি আইটেমের কাজ হবে আগামী অর্থবছরে। স্থানীয়দের মতে, রাতে ঢালাইসহ নিন্মমানের কাজ করার কারণে সুফল ভোগের আগে দুর্ভোগে পড়তে হবে পার্ক কর্তৃপক্ষের। অদক্ষ ও অভিজ্ঞতাহীন কর্মকর্তাদের কারণে পার্কের বেশ কিছু মুল্যবান পশু পাখি মারা গেছে। পর্যটকরা আগামীতে বানরের পাল ছাড়া আর কিছু দেখতে পাবে না। তারা বলেন, পশু পাখির খাদ্য চুরিও রয়েছে অহরহ। সব মিলিয়ে পার্কের অদূর ভবিষৎ অন্ধকার দেখা যাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, পার্কের সর্বত্র উন্নয়ন কাজ চলছে নামমাত্র। নিজের পছন্দের ও আত্মীয়দের দেয়া হয়েছে উন্নয়নের কাজ। সরকারি সিডিউলে উল্লেখিত কাজের দর (রাইট) হুবহু দিয়ে টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পার্কের কাজের সার্বক্ষণিক তদারকি না করে চট্টগ্রামস্থ বাসায় ও অফিসে বসে দিন পার করা হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে।

তবে পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম বিষয়টি পাশ কাটিয়ে বলেন, নিজেও মাসে অন্তত দুইবার চট্টগ্রাম থেকে এসে দেখভাল করছেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্মাণ-মেরামতের কাজ শেষ হলে ফিরবে মুগ্ধতা এবং বাড়বে দর্শনার্থী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ