পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে সরিষা, সয়াবিন এবং সূর্যমুখীর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ঠ সুযোগ থাকলেও এখনো চাহিদার ৮০ ভাগ ভোজ্য তেলই আমদানি করতে গিয়ে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। এবার আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনসহ ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধির রেশ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও পড়ায় সাধারণ মানুষকে যেমনি চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে, তেমনি বাড়তি মূল্য পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপরও চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সরিষা, বাদাম ও সূর্যমুখী তেলবীজ উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অদিফতরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে দেশে মাত্র ৮ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা, সয়াবিন ও চিনা বাদামের আবাদ হয়েছে। এছাড়াও কিছু জমিতে তিল-এর আবাদ হয়েছে। যা থেকে ১১ লক্ষাধিক টন তেল বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তেলবীজের আবাদ ও উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হলেও তা চাহিদার এক-তৃতীয়াংশেরও কম।
তবে এখনো দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি সয়াবিন তেলের। যার প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। কারণ দেশে আবাদকৃত প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ১.৬০ লাখ টনের মতো সয়াবিন তেলবীজ উৎপাদন হলেও তা দিয়ে কোনো ভোজ্যতেল হচ্ছে না। এসব সয়াবিনের প্রায় সবটাই চলে যাচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের কারখানায়। বরিশালের হিজলা, মুলাদী ও মেহেদিগঞ্জ ছাড়াও ভোলা এবং লক্ষ্মীপুরের চরাঞ্চলে আবাকৃত বিপুল সয়াবিন তেল বীজ মাঠ থেকেই কিনে নিচ্ছে বিভিন্ন পোল্টি ফিড কারখানার নিয়োজিত ফরিয়ার দল।
অপরদিকে বিপনন ব্যবস্থার অভাবসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির ফলে সূর্যমুখীর আবাদও বাড়ছে না। সূর্যমুখী তেলবীজ উৎপাদনের পরে তা নিয়ে কৃষকরা চরম বিপাকে পড়ছেন ক্রেতার অভাবে। অথচ দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকায় সয়াবিন এবং সূর্যমুখীর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষিবীদগণ।
সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে দেশে প্রায় ৬ লাখ ১০ হাজার হেক্টরে সরিষা, ৮০ হাজার হেক্টরে সয়াবিন, ৯৫ হাজার হেক্টরে বাদাম ও প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টরে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রায় ২৪ হাজার হেক্টরে সয়াবিন, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরে সূর্যমুখী ১৩ হাজার হেক্টরে সরিষা এবং প্রায় ২৩ হাজার হেক্টরে চিনাবাদাম আবাদ হয়। গত বছরের চেয়ে এবার প্রতিটি তেল বীজের আবাদই সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও বেড়েছে। তবে তা কবে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছবে সে বিষয়ে কারো কিছু জানা নেই।
এখনো দেশে প্রায় ৩০ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদার ৮০ ভাগই আমদানি নির্ভর। এমনকি এবারো উপকূলীয় এলাকায় উৎপাদিত সয়াবিনের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। পোল্টি ফিড ও ভোজ্য তেলের দাম গত বছরের প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ বাড়লেও ফিড মিলের ফরিয়ারা সিন্ডিকেট করে মাঠ পর্যায়ে সয়াবিন গত বছরেরও কম, ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা মন দরে কিনে নিচ্ছে। ফলে কৃষকরা এবার সয়াবিন আবাদ করে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলেও অভিযোগ করছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল মানবদেহের জন্য যথেষ্ট উপকারী। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, সয়াবিনে ৪০ থেকে ৪৫% আমিষ এবং ১৯ থেকে ২২% পর্যন্ত তেল থাকে। যেকোন ডাল বা শুটি জাতীয় শস্যের তুলনায় সয়াবিনে আমিষের পরিমাণ বেশি। অপরদিকে সূর্যমুখী একটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট তেল ফসল হিসেবে বিবেচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ তেল বীজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তেল ফসল হিসেবে বিবেচিত। সূর্যমুখীর বীজে ৪০ থেকে ৪৫% পর্যন্ত লিনোলিক এসিড রয়েছে। অথচ এ তেলে কোন ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। হেক্টর প্রতি ফলনও ১.৭ থেকে ১.৯ টন পর্যন্ত’ বলে জানিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীগণ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি ইতোমধ্যে উন্নত প্রযুক্তির ও উচ্চ ফলনশীল প্রায় ৪০টি বিভিন্ন জাতের তেল বীজ উদ্ভাবন করেছেন। যার মধ্যে সয়াবিনের ৬টি এবং সূর্যমুখীর দুটি জাত রয়েছে। বারি ইতোমধ্যে ‘সোহাগ-পিবি-১’, বাংলাদেশ সয়াবিন-৪ বা জি-২, ‘বারি সয়াবিন-৫ ও বারি সয়াবিন-৬’ নামের একাধিক উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছে। এসব উন্নতজাতের সয়াবিনের ফলন হেক্টর প্রতি ১.৮০ টন থেকে সোয়া দুই টন পর্যন্ত। দো আঁশ, বেলে দো আঁশ ও এটেল দো আঁশ মাটি সয়াবিন চাষের উপযোগী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দেশে সয়াবিন এবং সূর্যমুখীসহ তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার আরো গুরুত্বারোপ করছে বলে জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।