Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জলবায়ুতাড়িত অভিবাসী সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিন -প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪১ পিএম, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহের সফল বাস্তবায়নে জলবায়ুতাড়িত অভিবাসী সমস্যা সমাধানে বৈশ্বিক উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ুতাড়িত অভিবাসীর চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে আমরা কখনোই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে সক্ষম হবো না।
শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার রাতে বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২২) উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ কথা বলেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব সুসংহত করার লক্ষ্যে সবাইকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান।
মরক্কোর সাবেক রাজকীয় শহর মারাকাসে তিনদিনব্যাপী জাতিসংঘ আয়োজিত এই উচ্চ পর্যায়ের বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২২) অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন’ নামে পরিচিত কপ-২২’-এর এই বৈঠকে বাংলাদেশসহ ১১৫টি দেশের ৮০জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং সিনিয়র মন্ত্রীরা অংশ নিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মারাকাস সম্মেলন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ গতবছর প্যারিসে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় অর্থবহ সহযোগিতা গড়ে তুলতে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তি চলতি বছর বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
গত বছর গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ এগিয়ে নেয়ার এটাই সময় একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তি অর্থবহ সহযোগিতার সুদৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রথম সারির দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করতে ব্যর্থ হলে কোটি কোটি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে নিরাপদ ও সুন্দর করতে আমাদের অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে আমাদেরকে অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে ৪ শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে সর্বপ্রথম ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট’ গঠন করেছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ু সম্পৃক্ত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণসহ বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের উল্লেখ করে বলেন, এসব পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে দুর্যোগকালে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি অনেক হ্রাস পেয়েছে।
পানি সম্পর্কিত জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের প্যানেলের সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানি নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে গত সেপ্টেম্বরে নিউইর্য়কে গৃহীত অ্যাকশন প্লানের প্রতি তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থানার মাধ্যমে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী পানি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি স্থানান্তরে সহায়তা করতে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহ, সুইজারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বারনাবাস শিবোসিসো দøামিনি, কুক আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হেনরি পুনা, ফিজির প্রধানমন্ত্রী জোসাইয়া ভি বাইনিমারামা, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উরো কেনিয়াত্তা, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামি, পলৌটমির প্রেসিডেন্ট ই রেমেনজেসাউ জুনিয়র এবং মার্শাল আইসল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মিজ হিলডা হেইনে।
এর আগে কনফারেন্স ভেন্যুতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, ইউএনএফসিসির নির্বাহী সম্পাদক পেট্রেসিয়া ইস্পেনোসা এবং কপ-২২ এর প্রেসিডেন্ট সালাহেদিন মেজোয়ার।
প্রধানমন্ত্রী কপ-২২ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার বিকেলে পৌঁছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে বাংলাদেশের ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার সফরসঙ্গী অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেনÑ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। গতকাল বুধবার বিকেলে দেশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মারাকাস ত্যাগ করার কথা রয়েছে। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসছেন বাংলাদেশে
চীনকে ঠেকাতে বাড়ছে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
দি টাইমস অব ইন্ডিয়া : চীন বাংলাদেশে তার কৌশলগত উপস্থিতি বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার প্রেক্ষাপটে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে বড় রকমের উন্নয়ন ঘটাতে ভারত এ মাসের শেষে তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকারকে ঢাকা পাঠাচ্ছে।
সরকারী সূত্রগুলো মঙ্গলবার জানায় যে, পারিকার দু’দিনের সফরে ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশে যাচ্ছেন। তার এ সফরকালে একটি নতুন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে যার মধ্যে থাকবে সন্ত্রাস দমনে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাসহ সামরিক সরবরাহ বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রশিক্ষণ ও যৌথ মহড়া।
একটি সূত্র জানান, ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এ বিষয়টি সম্পৃক্ত করা হতে পারে। উল্লেখ্য, পারিকার হবেন বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
সোমবার বাংলাদেশ চীন থেকে তার প্রথম দু’টি সাবমেরিন সরবরাহ নেয়ার পরপরই এ সফরের কথা জানা গেল। চীনের ডালিয়ান সমুদ্র বন্দরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন আহমেদের কাছে এ দু’টি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনাকে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে ব্যাপক সামরিক সহযোগিতা গড়ে ওঠার এক বড় ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
মধ্য অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করেন। ৩০ বছরের মধ্যে কোনো চীনা প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এ সময় চীনের সাথে ২৫ বিলিয়ন ডলারের ২৭টি চুক্তি হয়। চীনের অর্থনৈতিক পেশী বা তার নিজ প্রতিরক্ষা শিল্পের সাথে পাল্লা দেয়ার পর্যায়ে ভারত পৌঁছেনি।
কিন্তু ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলো শ্রীলংকা থেকে শুরু করে মালদ্বীপ, সিচেলিস ও মরিশাস থেকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও নেপালে চীনের প্রভাব বিস্তার ঠেকানোর চেষ্টা করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শ্রীলংকাকে ভারত বিমান প্রতিরক্ষা কামান, রাডার ও মাইন-প্রতিরোধক যান সরবরাহ ছাড়াও বর্তমানে দেশটির নৌবাহিনীর জন্য দু’টি অফশোর টহল জাহাজ (ওপিভি) নির্মাণ করছে।
সূত্র জানান, অনুরূপভাবে ভারত উদ্ভাবনী আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ওপিভি সরবরাহ করতে পারে। সার্বিক সামর্থ্য-বৃদ্ধির আওতায় ভারতের সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশী সৈন্যদের প্রশিক্ষণও বাড়ানো হবে।
ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সামরিক মহড়া সম্প্রীতির ষষ্ঠ পর্যায় বর্তমানে টাঙ্গাইলে চলছে। সন্ত্রাস দমনের উপর গুরুত্ব প্রদান করে এই মহড়া দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে আন্তক্রিয়া জোরদার করবে। নিয়মিত নৌ ও বিমান মহড়াও এখন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে সূত্রটি জানান।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিশ্চিতভাবে আরো একবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। দু’দেশই তাদের ভূখ-ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পরস্পরকে সমর্থন করেছে। সে সাথে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ বৈঠক বর্জনে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন দিয়েছে ঢাকা।
ভারত এ বছরের গোড়ার দিকে কক্সবাজারে সোনাদিয়া সমুদ্র বন্দর নির্মাণের চীনা উদ্যোগ বাতিল করে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপে স্বস্তি বোধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে চীনের আরো কয়েকটি প্রকল্প চলমান। বাংলাদেশ চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগও সমর্থন করে।
অপর পক্ষে ভারত গত তিন-চার বছর ধরে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। তাদের প্রধান একটি লক্ষ্য ছিল দু’দেশ একসঙ্গে দৃঢ়ভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করা।
ভারত ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের সাথে সরাসরি আর্মি-টু-আর্মি স্টাফ আলোচনা অনুষ্ঠিত করে আসছে। এই আলোচনার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যেতে পারে এ থেকে যে মাত্র মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশের সাথেই ভারতের এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ দেশগুলো হল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরাইল, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জলবায়ুতাড়িত অভিবাসী সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিন -প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ