পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আপিলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে : ইসলামী নেতৃবৃন্দ
স্টাফ রিপোর্টার
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন ইসলামী নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, পৃথিবীর প্রায় অর্ধশত দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে। ভারতে হিন্দুধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম রূপে বিবেচনা করা হয়। একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র নেপালেও রাষ্ট্রধর্ম হিন্দু। ৯৫% মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামই যৌক্তিক এবং সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম একটি মীমাংসিত বিষয়। এ বিষয় নিয়ে ড. রাজ্জাকের বক্তব্য সংবিধান পরিপন্থী।
আওয়ামী লীগের নীতি বিরোধী। তাই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিচারের আওতায় আনতেই হবে। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সম্পর্কে ড. আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য উস্কানিমূলক। তিনি বলেন, সংবিধান একটি দেশের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনা, ঈমান-আক্বিদার রূপায়ণ। তাই বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করা হয়। পৃথিবীর সব দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এটাই গণতন্ত্র। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সম্পর্কে ড. রাজ্জাকের অযৌক্তিক বক্তব্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে পুরানা পল্টনস্থ মাওলানা আতহার আলী (রহ.) মিলনায়তনে নেজামে ইসলাম পার্টি আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রশিদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এহতেশাম সারোয়ার, মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন, একেএম আশরাফুল হক, মুফতি আবদুল কাইয়ূম, সৈয়দ মোঃ আহসান, মাওলানা মমিনুল ইসলাম ও মোঃ নুরুজ্জামান প্রমুখ।
মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, প্রায় ৯৫ ভাগ মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা অনভিপ্রেত। ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রুনেই, কমোরস, মিসর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, ওমান, কাতার, সোমালিয়া, তিউনিসিয়াসহ প্রায় অর্ধশত দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম। ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম ছাড়াও অন্য কয়েকটি ধর্মকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ব্রিটেনসহ ধর্মনিরপেক্ষ ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই খ্রিষ্টধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও স্পেনে প্রধান ধর্ম রোমান ক্যাথলিক। ডেনমার্ক, জার্মানী, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে লুথেরান ধর্ম প্রাধান্য পায়। আর্জেন্টিনা, কোস্টারিকা, মাল্টা, মোনাকো ও সুইজারল্যান্ডের কিছু ক্যান্টন ও ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রধর্ম রোমান ক্যাথলিক। সাইপ্রাস ও গ্রিসে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অ্যান্ডোরা, ডোমিনিকান রিপাবলিক, এল সালভেদর, প্যারাগুয়ে, পেরু, পর্তুগাল ও সেøাভাকিয়ার সংবিধানে ক্যাথলিক ধর্মকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আর্মেনিয়ায় অ্যাপোস্টলিক চার্চ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। ইহুদী ধর্মই ইসরাইলের চালিকা শক্তি। বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র নেপালের রাষ্ট্রধর্ম হিন্দু। তাই রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে যারা বিতর্কের জালে নিক্ষেপের অপচেষ্টা করেন, তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার ও কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
গোপন ষড়যন্ত্রের মিশন : মজলিস
খেলাফত মজলিসের সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য একদিকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অনুভূতির বিরুদ্ধে আঘাত, অন্যদিকে বর্তমান সংবিধানেরও পরিপন্থী। নেতৃবৃন্দ বলেন, ড. আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য আওয়ামী লীগের ‘রাষ্ট্রধর্ম-ইসলাম বাদ দেয়ার’ গোপন মিশনের বহিঃপ্রকাশ। আর তা নাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
দলের নায়েবে মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন, এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, শেখ গোলাম আসগর, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক আবদুল হালিম, মাওলানা নোমান মাজহারি প্রমুখ।
ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
বাংলাদেশ ইসলামী আইজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট লুৎফর রহমান শেখ, ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এ এইচ এম শহিদুল হক তোতাসহ এডভোকেট সর্দার মোঃ মানিক মিয়া, অধ্যক্ষ এডভোকেট নুরুল হক, এডভোকেট মুহিব্বুল্যাহ, এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাতিল করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ মহল হীন চক্রান্তে লিপ্ত। তারা বলেন, এ বিষয়ে ড. রাজ্জাকের উস্কানিমূলক বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। কাজেই তাকে বহিষ্কার করে সাম্প্রদায়িক সংগঠন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে গভীর ও ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সুয়োমটো রুল জারি জরুরী।
নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দেয়ার কোন ষড়যন্ত্র করা হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতা যে কোনভাবেই তা প্রতিহত করবে।
কওমী মাদরাসা শিক্ষক ফেডারেশন
বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক বিচারিক রায়ে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, ইসলামই বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম। এই রায়ের বিরোধিতা মানেই আদালত অবমাননা। আর আদালত অবমাননা হল দেশদ্রোহিতা। কওমী মাদরাসা শিক্ষক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
সুতরাং ড. রাজ্জাককে এই অপরাধের দায়ে শুধু আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারই যথেষ্ট নয় বরং দেশদ্রোহিতা ও আদালত অবমাননার অভিযোগে অবিলম্বে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। কারণ, রাজ্জাকের এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগকে সন্দেহাতীত ভাবে বিব্রত করছে। ফেডারেশনের নিয়মিত এক পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেছেন।
ফেডারেশন সভাপতি মাওলানা আবদুল মাজেদ আত্হারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি মাওলানা হেদায়েত কবির, মহাসচিব মুফতী কামরুল ইসলাম ভূইয়া, অর্থ-সচিব মাওলানা মুমিনুল ইসলাম, প্রচার-সেলের প্রধান পীরজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ আহ্সান ও ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি ইমদাদ হুসাইন সাকী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।