পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমছে; তবে বেড়েছে ব্যাংক থেকে ঋণ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ২০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অথচ বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১৩ হাজার ৮৪৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। মূলত সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণ কমে যাওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারে সব জিনিসের দামই চড়া। পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য সব খাতেও খরচ বেড়েছে। এতে মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেছেন, সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর জন্য কড়াকড়ি আরোপ করার কারণেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে।
ব্যাংক আমানতের সুদহার কম। আবার সময়মতো গ্রাহকের অর্থ ফেরত না দেয়া, অনিয়মের কারনে দেউলিয়া হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষ আস্থা তলানিতে। শেয়ার বাজার বা বন্ড মার্কেট দীর্ঘদিন পর কিছুটা আস্থা ফিরলেও অতীত অভিজ্ঞতাও বেশ নেতিবাচক। দেশে প্রবীণ, কর্মহীন বা দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যাপক অর্থে কোন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। তাই সরকার অল্প আয়ের মানুষদের জন্য নিরাপদ সঞ্চয়ের সুযোগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বাড়তি সুদে বিনিয়োগের সুযোগ রেখেছিল। যাতে প্রবীণ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মহীন বা দরিদ্র মানুষ উপকৃত হন। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে নানা নিয়ম-নীতি ও শর্ত জুরে দেয়ায় সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমতে তাকে। আর গত সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্রের উপর সুদহার কমিয়ে দেয় সরকার। যার এর প্রভাবও পড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় এবং দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ সেখানেও পড়েছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সবশেষ মার্চ মাসে ১ হাজার ৮১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫২২ কোটি টাকা; জানুয়ারিতে বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে যে টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল, তার চেয়ে ৪৩৬ কোটি টাকা বেশি খরচ হয়েছে সুদ-আসল পরিশোধে। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে সরকার তার কোষাগার থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদ ৪৩৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। সবশেষ সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তারপর থেকেই বিক্রিতে ভাটা পড়ে।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার কারণ ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন বলেন, এমনিতেই দুই বছরের করোনা মহামারির কারণে মানুষের আয়-উপার্জন কমে গেছে। অনেকে চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। কারও বেতন কমেছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অর্থাৎ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে মানুষ আর আগের মতো সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছে না।
তিনি বলেন, সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হচ্ছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ; এখানে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেই, মাস শেষে বা নির্দিষ্ট সময় শেষে সুদ-আসল পাওয়া যায়। তাই সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেনি, তবে এখন সঞ্চয়পত্র কেনার মতো সঞ্চয় নেই মানুষের কাছে। সে কারণে কমে গেছে এ খাতে বিনিয়োগ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) গত মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে সরকার বা বিবিএসের দেয়া হিসাবের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বাস্তবে অনেক বেশি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, দেশে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হার বিবিএসের চেয়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। গত ৩ মার্চ ‘মূল্যস্ফীতি: সরকারি পরিসংখ্যান বনাম প্রান্তিক মানুষের বাস্তবতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সানেম। তাতে বলা হয়েছে, শহর এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখন ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর গ্রামে এই হার ১২ দশমিক ১০ শতাংশ।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, পণ্যমূল্য নিয়ে সরকারি সংস্থা বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে তা বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ক্ষেত্রে যদি সঠিক তথ্য তুলে আনা না হয়, তবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া টেকসই হবে না। নানা তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিবিএস পুরোনো ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। সেলিম রায়হান বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ খুবই চাপে আছে। ভাত না খেয়ে অন্যকিছু খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছে অনেক মানুষ।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই খাত থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে, ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়ে দেয় সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম সুদের হার, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম হার এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেক রকম হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হারে সরকার হাত দেয়নি। অর্থাৎ আগে যে হারে সুদ পাওয়া যেত, এখনও সেই হারে পাওয়া যাবে। এর আগে ২০১৫ সালে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার গড়ে ২ শতাংশের মতো কমিয়েছিল সরকার।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ব্যাংকমুখী হচ্ছে সরকার
বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরের সাড়ে নয় মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১৩ হাজার ৮৪৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। মূলত সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণ কমে যাওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।
তবে এখনও বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম ঋণ নিয়েছে সরকার। ঘাটতি মেটাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা আছে।
রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং ধারণার চেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ সহায়তা পাওয়ায় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ করার প্রয়োজন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মঞ্জুর হোসেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। আর বিদেশি ঋণ সহায়তা বেড়েছে ৫৫ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।