পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে কথা! বিনা টিকেটে ট্রেনের ক্যাবিনে রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনের তিন আত্মীয় ভ্রমণ করার সময় ট্রেনের ভ্রাম্যমান পরিদর্শক (টিটিই) মো. শফিকুল ইসলাম জরিমানা করেন। মন্ত্রীর আত্মীয়কে জরিমানা করার অপরাধে (!) ওই টিটিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। টিটিইকে বরখাস্তের ঘটনা এখন সর্বোত্রই আলোচিত। দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ অবস্থায় রেলমন্ত্রী বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করা আত্মীয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ‘ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। তবে ওরা আমার আত্মীয় নয়।’ মন্ত্রীর আত্মীয়কে জরিমানা করায় টিটিকে সাময়িক বরখাস্ত করার ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। অবশ্য কিছু গণমাধ্যম কর্মী ‘রেলমন্ত্রীর খাস কামরার লোক’ হওয়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে এ ঘটনায় রেল বিভাগের কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই টিটির চাকরি ফেরত না দেয়া হলে রেলকর্মচারীরা ধর্মঘটের মতো কর্মসূচিতে যেতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন ব্যপক বিতর্ক চলছে তখন রেলমন্ত্রীর রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গতকাল বলেন, ‘বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নয়; ওদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এ ঘটনার কিছুই তিনি জানতেন না দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ঘটনা সম্পর্কে তিনি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছেন ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, রেলের অফিশিয়াল কার্যক্রমের সঙ্গে মন্ত্রীর কোনো সংযোগ নেই। ঘটনার সঙ্গে মন্ত্রীর কোনো আত্মীয় জড়িত নন। রেল কর্মকর্তারা ওই টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রী কিছুই জানতেন না। মন্ত্রী জানান, বিনা টিকিটের যাত্রী যদি মন্ত্রীর আত্মীয়ও হয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। একইভাবে কোনো রেল কর্মকর্তাও যদি যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তাকেও শাস্তি পেতে হবে। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার কারণে টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেন, মাঝেমধ্যেই টিটিইরা বিভিন্নভাবে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন; বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। তবে একেবারেই ছাড় দিলে রেলের দুর্নাম হয়ে যায়। তাই টিটিইদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এর আগে রেলওয়ে পাকশী বিভাগের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণকারী ৩ যাত্রীর কাছ থেকে জরিমানাসহ টিকিটের টাকা আদায় করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।
জানা যায়, বরখাস্ত টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম রেলওয়ে পাকশী বিভাগের ঈশ্বরদী সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। বরখাস্ত হওয়ায় গত শুক্রবার তিনি কাজে যোগ না দিলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
ঘটনার বিষয়ে শফিকুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঈশ্বরদী থেকে ৩ জন যাত্রী বিনা টিকিটে এসি কেবিনে উঠে বসেন। তারা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। শফিকুল ওই ৩ যাত্রীকে নন-এসি টিকিটের ভাড়া হিসেবে ৩৫০ টাকা করে এক হাজার ৫০ টাকা নিয়ে নন-এসির টিকিট দেন। শফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের কাছ থেকে মোট ১ হাজার ৫০ টাকা ভাড়া আদায় করেছি এবং তার রিসিটও দিয়েছি। এ সময় তাদের সঙ্গে আমি কোনো খারাপ আচরণ করিনি এবং তারাও কিছু বলেননি। খারাপ আচরণ করার তো প্রশ্নই ওঠে না। এ সময় রেলের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে শফিকুল বলেন, তারা এসি কামরাতে বসেই ঢাকা এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে ট্রেনের মধ্যে কোনো সমস্যা না হলেও পরবর্তীতে ঢাকা পৌঁছানোর পর ওই যাত্রীরা আমার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন বলে শুনেছি এবং এরপর আমাকে বরখাস্ত করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় মো. ইমরুল কায়েস প্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষের কাছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫ মে দিবাগত রাত সোয়া ২টায় ঈশ্বরদী স্টেশনে গিয়ে টিকিট পাননি অভিযোগকারী। তখন ট্রেন চলে আসায় তিনি ও তার সঙ্গে থাকা অপর ২ জন ট্রেনে উঠে পরেন।
অভিযোগে তিনি লিখেছেন, ‘আমিসহ আমার ছোট ২ মামা তারাহুরা করে ট্রেনের যেখানে জায়গা পাব সেখানেই বসে পরব এমন অবস্থায় ট্রেন ছাড়ার অবস্থায় আমরা কোনোমতে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে দরজার সামনে উঠে পড়ি। ট্রেন চলার মিনিট ৩০ এর মধ্যে টিটিই আমাদের সামনে টিকিট চাইলো। আমি বলি ট্রেনে উঠতে তারাহুরাতে টিকিট কাটতে পারি নাই। টিটিই বললো কয়জন আমি বলি ৩ জন তখন বলে ৫০০ করে ১৫০০ টাকা দেন আমি তাকে টাকা দেই। বলি সাধারণত ৩০০ টাকা ভাড়া আপনি ৫০০ করে নিলেন। এবার টিকিট দেন ১৫০০ টাকার। উনি বলে টিকিট চাইলে ৩৬০০ করে ৩ জন দেন তাহলে টিকিট দিচ্ছি। আমি বললাম টেক্সটাইলে চাকরি করি আমার পক্ষে এতো টাকা দেওয়া সম্ভব না। আপনি ১৫০০ টাকার টিকিট দেন, এ কথা বিনয়ী সাথে বলেছি। হঠাত করে উনি অনেক উচ্চ স্বরে বলে যে ট্রেন কি তোর বাপের লাথি দিয়ে দরজা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিবো। তারপর বাবা, মা তুলে মুখে যা আসে তাই বলে আমাকে গালি দেই (দেয়)।’ এ ঘটনায় তিনি মর্মাহত উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘আমি বাংলাদেশ রেলওয়ের উর্দ্ধতম কর্মকর্তাদের জানাচ্ছি টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হক।
আবেদনে মো. ইমরুল কায়েস প্রান্তর সই রয়েছে। তবে, তার এবং তার সঙ্গে থাকা অপর ২ জনের সুনির্দিষ্ট পরিচয় জানা যায়নি। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের জন্য গত ৩ মাস আগে টিটিই শফিককে পাকশী দপ্তরে বুক অফ করা হয়। তারপর তিনি যাত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তাকে কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় ব্যাখ্যার জন্য টিটিই শফিককে রোববার ডিসিও পাকশী দপ্তরে তলব করা হয়েছে জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, সরকারি পরিবহন কর্মকর্তা পাকশীকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এই ঘটনা তদন্তে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ বিতর্ক হচ্ছে। একজন লিখেছেন ‘ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী অ্যাডভোকেট চেরি ব্লেয়ার বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করায় তার জরিমানা করা হয়েছিল। ভারতের মমতা ব্যানাজী ভারতের রেলমন্ত্রী থাকার সময় তার এক আত্মীয়কে বিনা টিকেটে ভ্রমণের জন্য জরিমানা করা হয়। ভারতের একই ঘটনা ঘটে লালু প্রসাদ যাজব যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন। কিন্তু বাংলাদেশে মন্ত্রীর আত্মীয় বলে কথা! ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।