Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাহুবলে বিপুল আয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে গোলমরিচ

প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আনোয়ার হোসেন জসিম, শ্রীমঙ্গল থেকে : পর্তুগিজ, ফরাসি ও ইংরেজরা যে কয়টি কারণে অভিবক্ত ভারতবর্ষে আগমন করেছিল তার মধ্যে মসলা সংগ্রহ একটি। ওই সময়কালে ভারতবর্ষে মসলার উৎপাদন হতো প্রচুর। ইউরোপীয় বণিকরা মসলা সংগ্রহে মূলত ভারতবর্ষে অভিমুখে জাহাজ প্রেরণ করতো। ভারতবর্ষের অন্যান্য এলাকায় প্রচুর মসলার চাষ হলেও বাংলাদেশে সে সময়ে মসলা চাষ হতো না।
আদিকালে বাংলাদেশের মসলার যোগান হতো ভারত থেকে। বর্তমানেও বাংলাদেশে যে মসলা উৎপাদন হয় তা খুবই অপ্রতুল। এখনো ভারত ও পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন জাতের মসলা আমদানি করে এ দেশের চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশেও মসলা উৎপাদন করা সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের মসলা দিয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করা সম্ভব এটি প্রমাণ করেছেন হবিগঞ্জের আলীয়াছড়া পান পুঞ্জির খাসিয়ারা। এ পুঞ্জির প্রায় ২ শত খাসিয়া গোল মরিচ চাষে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন, অর্থনৈতিকভাবে হয়েছেন লাভবান।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের মুছাই পাহাড়ে খাসিয়া পানপুঞ্জি আলীয়াছড়ার অবস্থান। এ পুঞ্জির বাসিন্দা খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাসিয়া পান, সুপারি, লেবু, আনারস চাষে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু বর্তমানে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। ২০০৫ সাল থেকে এ পুঞ্জির বাসিন্দরা নির্ভর করছেন গোল মরিচ চাষে। পুঞ্জির ৬০ একর এলাকাজুড়ে হাজার হাজার গোল মরিচ গাছ। অধিকাংশ খাসিয়া পান চাষি পানের বদলে গোল মরিচ চাষে অধিক পরিমাণে আগ্রহী হয়ে ওঠার ফলে পাল্টে গেছে আলীয়াছড়া-খাসিয়া পান পুঞ্জির অর্থনৈতিক অবস্থা।
সরেজমিনে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার আলীয়াছড়া পান পুঞ্জিতে গিয়ে গোল মরিচ চাষি খাসিয়াদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গোলমরিচের গাছ অনেকটা পান গাছের মতো। পান গাছের মতো গোল মরিচ গাছও অন্য বড় ধরনের গাছকে অবলম্বন করে বেড়ে ওঠে। প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় অর্থাৎ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে গোল মরিচ গাছের চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। চারা রোপনের ৪ বছরের মধ্যে প্রতিটি গোল মরিচ গাছে ফলন আসে। একটি গাছ থেকে মৌসুমে আনুমানিক ৩ কেজি গোল মরিচ উৎপন্ন হয়। সময়মতো গাছ থেকে গোল মরিচ সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করতে হয়। আদিবাসী খাসিয়া পান পুঞ্জি আলীয়াছড়ায় অসংখ্য সুপারি গাছ রয়েছে। এ গাছের অবলম্বন করেই আলীয়াছড়ার চাষিরা গোল মরিচ চাষ করছেন। এতে খরচ ও পরিশ্রম অনেকটা কমে যায়।
আলীয়াছড়া খাসিয়া পান পুঞ্জির বাসিন্দা গোল মরিচ চাষি অলমিক খাসিয়া জানান, তিনি তার ৪ একর জমিতে পানের বিকল্প হিসেবে গোল মরিচ চাষ করেছেন। তার গোল মরিচ গাছগুলোতে ফলন হয়েছে ভালো। মান ভালো হবার কারণে বাজারে মূল্যও পেয়েছের বেশি। তিনি জানান, তার জমিতে যে পরিমাণ গোল মরিচ উৎপাদন হয়েছে তাতে তিনি যে অর্থ উপার্জন করেছেন পান চাষে ওই সময়ে এতো অর্থ উপার্জন সম্ভব নয়। ফলে ওই খাসিয়া পান পুঞ্জির অধিকাংশ বাসিন্দা পানের বদলে গোল মরিচ চাষে অধিক পরিমাণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আলীয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে এখন গোল মরিচ চাষ শুরু হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, হবিগঞ্জের মাটি, পরিবেশ ও আবহাওয়া গোল মরিচ চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী। এ অঞ্চলের চাষিরা গোল মরিচসহ অন্যান্য মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন করতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সহায়তা করতে প্রস্তুত। তারা আরও জানান, দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার মসলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে ব্যাপক ও বাণিজ্যিকভাবে মসলা উৎপাদন করতে পারলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাহুবলে বিপুল আয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে গোলমরিচ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ