পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন ও হাসান সোহেল : বাংলাদেশে এক দশক ধরেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে অনলাইন ব্যাংকিং। যখন-তখন ঘরে বসে অর্থ বিনিময়ের এবং কেনা-কাটার সুযোগ থাকায় দ্রুতই অনলাইন ব্যাংকিংয়ের প্রতি ঝুঁকছে সাধারণ মানুষ। দূর থেকে পাঠানো টাকা হাতে পাওয়ার জন্য অপেক্ষার দিনও ফুরিয়েছে। পাশাপাশি নানা ধরনের বিলও এখন ঘরে বসে পরিশোধ করছে ব্যাংকের মাধ্যমেই। এ সবই ঘটছে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের কল্যাণে। কেউ আর সনাতন পদ্ধতির লেনদেনের নিয়মে অফলাইনে থাকতে চান না। তাদের আগ্রহ লাইভ অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। গ্রাহক চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে পাল্লা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। রীতিমতো প্রতিযোগিতাও চলছে। সেলফোন থেকে ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে জানতে পারছেন। ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনা-কাটা চলছে প্রায় সর্বত্রই। আবার প্রয়োজনে জমার অতিরিক্ত টাকাও তুলতে পারছেন। সেলফোন থেকেও টাকা পাঠাতে পারছেন গ্রাহকরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এতোসব সহজলভ্যতার চেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে অনলাইন ব্যাংকিং ও লেনদেনের নিরাপত্তা ঝুঁকি। অনলাইনেই একজনের ব্যাংক একাউন্ট থেকে অজ্ঞাতসারে টাকা উত্তোলন, এটিএম বুথের মাধ্যমেও একজনের কার্ডের টাকা অন্যজন উত্তোলন করার ঘটনায় ভীতি সঞ্চার করছে গ্রাহকদের মধ্যে। গত শুক্রবারও ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেডের ২১ জন গ্রাহকের টাকা জালিয়াত চক্র উত্তোলন করে নিয়েছে। নিয়মিতভাবেই এ ধরনের প্রতারণার নানা ঘটনা ঘটছেই। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হওয়া এবং দক্ষ জনশক্তি ব্যবহার না করার কারণে এধরনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অনলাইন কিংবা এটিএম বুথকে ব্যবহার করে জালিয়াতির বড় ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে এখনো ঘটেনি। তবে এখনই প্রযুক্তির নিরাপত্তা ও লোকবল দিয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জালিয়াতি চক্র এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে এই সেক্টর।
সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিংয়ে নাগরিক জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি বেড়েছে ঝুঁকিও। সচেতনতা, দক্ষতা আর নিরাপত্তাব্যবস্থা শতভাগ নিচ্ছিদ্র না হওয়ায়ই এই ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ব্যাংকের তথ্যভা-ার (ডাটাবেইসের) সুরক্ষার অভাব, অনলাইন ব্যাংকিংয়ে তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভরশীলতা, অনলাইন ব্যাংকিং ঝুঁকিমুক্ত করতে গ্রাহক ও স্টাফদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের অভাব এবং গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ না নেয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি বাড়ছে। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে ‘গ্রাহকের গোপন নম্বর’ গোপন না থাকা কিংবা তা চুরি হয়ে যাওয়া বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পিন নম্বর চুরি, বুথ থেকে পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয়া এবং ফ্রড কলের মতো ঘটনাও ঘটছে।
এদিকে এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে ইস্টার্ন ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকদের স্বার্থে এটিএম বুথগুলোতে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপন, নিয়মিত ভিত্তিতে ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ এবং কোন ব্যক্তি যাতে বুথে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন বা মেরামত করতে না পারে সে ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা। এছাড়া গত ৭ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের যে সব ক্রেডিট-ডেবিট কার্ডের ডাটা জালিয়াতি হয়েছে তার তালিকা তৈরি গ্রহকদের অবহিতকরণ, উক্ত কার্ড বাতিল এবং পরিবর্তে সম্পূর্ণ নতুন কার্ড ইস্যুর কথা বলেছে। তবে যে সব বুথে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে সেসব বুথে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস ছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তদন্ত টিম কাজ করছে। তবে কয়েকটি বুথে এই ডিভাইস ছিলো না বলে জানান।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ ব্যাংকিং সেবার পাশপাশি বিভিন্ন ব্যাংকের অটোমোটেড টেলার মেসিন (এটিএম) কার্ডের সেবা নিচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রযুক্তির এই ছোঁয়া গ্রাহকদের সময় এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে অনেক সহজ করেছে। ডিজিটাইজেশনের যুগে সবাইকে এ ব্যবস্থা আকৃষ্টও করেছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ১ কোটি গ্রাহক এটিএম কার্ডের সেবা নিচ্ছেন। এটিএম কার্ডের মধ্যে রয়েছে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড। বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ৭ হাজার এটিএম বুথের মাধ্যমে গ্রাহকরা এ সেবা গ্রহণ করছেন। এর মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে। যদিও গ্রাহকরা শুধুমাত্র এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকা লেনদেনই করছেন, এরবেশি কিছুই তাদের জানা নেই। এদিকে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হলেও এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে অধিকাংশ ব্যাংকই উদাসীন। বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে এভাবে ক্ষোয়া গেলেও নেয়া হয়নি কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার। পূর্বেও এ ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে প্রভাবশালীচক্র এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ পাওয়া গেছে। কিন্তু গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকার নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর কোন ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। আর এরই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার একই দিন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বুথ থেকে ২১ জন গ্রাহকের গচ্ছিত টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নেয়া হলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা এ ঘটনা টের পায়নি। এদিকে ইবিএল’র অটোমোটেড টেলার মেসিন (এটিএম) কার্ডের এই জালিয়াতির ঘটনায় নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে প্রয়োজন থাকলেও এটিএম দিয়ে টাকা উঠানো বন্ধ রেখেছেন। কারণ অধিকাংশ গ্রাহকরেই জানা নেই, তার কার্ডে কত টাকা আছে। কত টাকা উঠিয়েছেন। একাধিক গ্রাহক ক্ষোভের সঙ্গে জানান, এটিএম সেবা গ্রাহকদের সময় ও আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে সহজ করলেও ব্যাংকগুলো সঠিক তদারকি ও প্রযুক্তির ব্যবহার না করে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রত্যারণায় আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের মতে, এরআগেও এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে। অথচ ব্যাংক থেকে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি গোয়েন্দা সূত্রেও একাধিকবার এ ধরনের ঘটনায় ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু কোন ব্যাংক থেকেই নিরাপত্তার বিষয়ে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ছোট ছোট এ ধরনের ঘটনায় অনেকটাই অতিষ্ট গ্রাহকরা। এই অবস্থা চলতে থাকলে গ্রাহকরা এই সেবার প্রতি আস্থা হারাতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পূর্ব থেকেই সতর্কতা থাকলেও বুথে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস রাখা হয়নি কেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, এই নিয়ে তদন্ত কাজ চলছে। গ্রাহকদের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক বদ্ধপরিকর। তাই ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে দু’একটি বুথের সিসিটিভি দেখে কিছুটা হলেও জালিয়াত চক্রকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
অবশ্য প্রযুক্তির সমস্যা প্রযুক্তির মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গিয়ে বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও একই রকম সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে এসব সমস্যার সমাধান প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই করতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোকে এই খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। দক্ষ প্রযুক্তিবিদ যারা রয়েছেন তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া ব্যাংক ও এটিএম বুথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা (ব্যক্তি ও প্রযুক্তি) বাড়াতে হবে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, এখন সব ব্যাংকই অনলাইন ও এটিএম পদ্ধতিতে চলছে। ব্যাংকের এটিএম থেকে এভাবে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে। তবে এই ধরণের ঘটনা যেনো পুনরাবৃত্তি না হয় এজন্য সরকার ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অনলাইন নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। সাইবার ও অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে পারে যে কমিটি অন্য দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিরাপত্তা জোরদার ও বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে।
গত শুক্রবার কতটি ব্যাংক থেকে জালিয়াতি চক্র টাকা উত্তোলন করে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ৩টি ব্যাংকের ৬টি এটিএম বুথ থেকে স্কিমিং ডিভাইস লাগিয়ে তথ্য নিয়েছে জালিয়াত চক্র। ইস্টার্ন ব্যাংকসহ ৩টি ব্যাংকের বুথ থেকে এই টাকা উত্তোলন করা হয়। শুভঙ্কর সাহা বলেন, ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে ২১টি অভিযোগের বিষয় জানা গেছে। অবশ্য অন্য দুটি ব্যাংকের নাম বলতে অপারাগতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তদন্ত কাজ শেষ হলেও বাকিগুলোদের সম্পর্কে জানানো হবে এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, ব্যাংকের পক্ষে কোন নিরাপত্তা ত্রুটি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আরোও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গ্রাহকদের স্বার্থে প্রয়োজনে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে।
এদিকে গ্রাহকের অজান্তে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুথ বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই এটিএম বুথ বন্ধ রাখা যাবে না। একই সঙ্গে স্বেচ্ছায় যদি কোনো ব্যাংক বুথ বন্ধ রাখে তবে সে ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা।
গত শুক্রবারের জালিয়াতির ঘটনা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, তারা জানতে পেরেছেন কয়েকটি ব্যাংকের ক্যাশ মেশিনে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ লাগিয়ে রেখেছিল কেউ। যে দুই-তিন দিন এই ‘স্কিমিং ডিভাইস’ লাগানো ছিল সেসময় যে গ্রাহকরা এই মেশিনগুলো ব্যবহার করেছেন তাদের কার্ডের তথ্য চুরি হয়ে গেছে। কার্ডের তথ্য চুরি করে সেই তথ্য ব্যবহার করে ক্লোন-কার্ড তৈরি করা হয়। যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা যদি এই ক্লোন কার্ডের পিন নাম্বারও জোগাড় করতে পারে তাহলে কার্ডটি ব্যবহার করে তারা টাকাও তুলে নিতে পারে। আমরা যতটুকু বুঝতে পারছি এরকমই কিছু আসলে ঘটেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সব ব্যাংককে এই ‘স্কিমিং জালিয়াতি’র বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছে।
তিনি আরোও বলেন, আমরা সব ব্যাংককে ই-মেইল করে বলেছি তাদের এটিএম বুথগুলোতে এরকম কোন স্কিমিং ডিভাইস কেউ লাগিয়ে রেখেছে কিনা তা যাচাই করে দেখতে। যাদের কার্ড এভাবে জালিয়াতি হয়েছে সেই সব গ্রাহককে অবিলম্বে জানিয়ে পুরানো কার্ড বাতিল করে নতুন কার্ড দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই কর্মকর্তা বলেন, শুধু ইস্টার্ন ব্যাংক নয়, আরও কয়েকটি ব্যাংক থেকেও তারা গ্রাহকদের টাকা চুরি যাওয়ার অভিযোগ পেয়েছেন।
এদিকে ইস্টার্ণ ব্যংকের এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়ার বিষয়টি গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অসাবধানতাকে দায়ী করেছেন। অধিকাংশ বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিলো না বা অচল ছিলো বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতিতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেক ভুক্তভোগী। অনেকেই এ ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজস থাকতে পারে বলে মনে করছেন। এছাড়া একদিনে ইস্টার্নসহ ৩টি ব্যাংকের ৬টি বুথ থেকে ইস্টার্ন ব্যাংকের ২১ জন গ্রাহকের গচ্ছিত টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নেয়া হলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা এ জালিয়াতের ঘটনা টের পায়নি। উল্লেখ্য, এর আগেও ইস্টার্ন ব্যাংকে একইভাবে জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। তারপরও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করেনি।
সূত্রমতে, ২০১৩ সালের মে মাসে এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ। পরে ওই চক্রের ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই সময়ে গ্রেফতার হওয়া মোশাররফ হোসেন অস্ট্রেলিয়া এবং সুইডেন থেকে তথ্য-প্রযুক্তিতে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির কৌশল তিনি শিখেছেন সুইডেন থেকে বলে জানা যায়।
কিভাবে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড জাল করা হয়? এ সম্পর্কে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেজে কৌশলে বিভিন্ন এটিএম বুথে প্রবেশ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার নামে প্রবেশ পথে একটি ম্যাগনেটিক ডিভাইস স্থাপন করে আর তার মাধ্যমে টাকা তুলতে আসা গ্রাহকদের কার্ড পরীক্ষা করে। অনেক সময় এক্ষেত্রে ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জড়িত থাকেন বা সহায়তা করেন। এরপর বুথের ভেতরে একটি গোপন ক্যামেরা বসিয়ে গ্রাহকরা যখন টাকা তোলেন, তখন তাঁদের গোপন কোর্ড বা পিন নাম্বার জেনে নেয়। দুটি উপায়েই চক্রটির হাতে একজন গ্রাহকের গোপন পিন নাম্বার এবং কার্ডের সব তথ্য চলে আসে।
এ কাজের পর, জালিয়াত চক্র এসব তথ্য কম্পিউটারে দিয়ে জাল কার্ড তৈরি করে আর পরবর্তীতে সেই কার্ড থেকে টাকা উত্তোলন করে। ২০১৩ সালে গ্রেফতার হওয়া মোশাররফ হোসেনের দেয়া তথ্যমতে, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বিভিন্ন ব্যাংকের কমপক্ষে ২৫টি এটিএম বুথে তারা তাদের ডিভাইস এবং গোপন ক্যামেরা বসিয়ে গ্রাহকদের কার্ডের পিন এবং তথ্য নিয়েছে। কয়েক হাজার গ্রাহকের তথ্য রয়েছে চক্রটির কাছে। আটক মোশাররফ এই চক্রে জড়িত ৫ জনের কথা স্বীকার করেন। যাদের ৪ জনকে পরবর্তীতে গ্রেফতার করা হয়। যারা এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। এই চক্রটি তখন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা হাতিয়েছে বলে আশঙ্কা করেছিলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গত শুক্রবার ঘটে যাওয়া এটিএম জালিয়াতির সঙ্গে ওই চক্রের সম্পৃক্তা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ২০১৩ সংঘঠিত এটিএম জালিয়াতি ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর জারি করা এক সার্কুলারে বিভিন্ন ব্যাংককে এটিএম বুথের সেবা সম্পর্কে বিশেষ নিরাপত্তা সতর্কতার কথা বলা হয়। বিশেষ করে সিকিউরিটি গার্ডের সার্বক্ষণিক পাহারা নিশ্চিত, বুথে কেউ যাতে কোন ধরণের নতুন যন্ত্র মেরামত বা স্থাপন করতে আসলে সিকিউরিটি গার্ডের মাধ্যমে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ওই ব্যাক্তির পরিচয় নিশ্চিত করা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা মানা হয় না। অনেক বুথে সিকিউরিটি গার্ডও চোখে পড়ে না। একই সঙ্গে ওই সব ব্যাংকের কর্মকর্তারাও অনেক সময়ই সিকিউরিটি গার্ডকে প্রভাব বিস্তার করে সরিয়ে দেন।
বাংলাদেশে যেসব ব্যাংক ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড পরিচালনা করে তাদের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক একটি। ব্র্যাক ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজার ও এক্সটারনাল এফেয়ার মো. আবদুর রহিম জানান, আমাদের ব্যাংকে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। তবে ব্যাংকি খাতের সব ব্যাংককে এই ঘটনা নাড়া দিয়েছে। তাই ব্র্যাক ব্যাংক নতুন করে আরও সতর্কতা অবলম্বন করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র মতে, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকদের নামে ৯০ লাখের বেশি ব্যাংক কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫ লাখ ডেবিট কার্ড এবং পাঁচ লাখ ক্রেডিট কার্ড। অন্যদিকে দেশজুড়ে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় সাত হাজার এটিএম বুথ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ২১ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে লাখ লাখ টাকা তুলে নেয় জালিয়াত চক্র। এর আগে ২০১৩ সালেও একটি সিন্ডিকেট এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে একই ঘটনা ঘটায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।