পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উবায়দুর রহমান খান নদভী : সংকীর্ণ মনের মানুষেরা সব সময়ই ঘৃণ্য। যাদের মন, চিন্তা ও তৎপরতা সংকীর্ণ তারা চিরদিনই পৃথিবীর বুকে অন্ধকারের প্রতিনিধিত্ব করে এসেছে। আলোর পথের যাত্রীদের পথ রোধ করে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছে। অথচ মহান আল্লাহ, যিনি বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা প্রভু, স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, যারা আমাকে বিশ্বাস করে ঈমান এনেছে আমি তাদের অভিভাবক ও বন্ধু। আমি তাদের বের করে আনি আঁধার থেকে আলোর পথে। আর যারা অবিশ্বাসী, বেঈমান তাদের বন্ধু ও অভিভাবক হচ্ছে খোদাদ্রোহী শয়তানি শক্তি, যারা তাদের আলোর পথ থেকে টেনে নেয় অন্ধকারের দিকে। আর এরাই জাহান্নামবাসী, দোযখের আগুনে দগ্ধ হবে এবং এতে তারা থাকবে অনন্তকাল (আল-কোরআন)।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে এসব মন্দ ভাবনাকে বিশ্ব-সাহিত্য বা লোক-সংস্কৃতি ধারণ করেছে নানা কথা, কবিতা ও প্রবাদে। প্রাচীন সাহিত্যে দেখা যায়, পূর্ণিমার চাঁদের বিরুদ্ধে কুকুরের ঘেউ ঘেউ করার বিষয়টি। ল্যাটিন সাহিত্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ, এমনকি দূরপ্রাচ্যেও এ কুকুরের ঘেউ ঘেউ ও পূর্ণিমার চাঁদ বিষয়টি পাওয়া যায়। যেমন পাওয়া যায়, দাফাদিউল হিয়াদ বা ‘কুয়ার ব্যাঙ’ উপমাটি। কুয়ার ভেতর যে ব্যাঙ জন্মায় এবং সেখানেই তার জীবন কাটে, সে বাইরের জগৎ সম্পর্কে খবর রাখে না। সে নদ-নদী, বিল-ঝিল, হাওর-বাঁওড় কিংবা সাগর-মহাসগর সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না। তার কাছে তার কূপটিই মহাসমুদ্র। বিশ্বলোক সাহিত্য ও সাধারণ সাহিত্যে ছোটমনা এসব লোকেদের সাথে দিনের আলোয় চামচিকা ও বাঁদুড়ের তুলনাও দেয়া হয়েছে। যারা রাতেই বের হয়, নিশাচর দিনান্ধ এসব প্রাণীকে মূলত এ ধরনের জঘন্য লোকেদের চরিত্র বোঝাবার জন্যই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এদের ব্যাপারে বলেছেন, উলা-য়িকা কাল্ আনআ-মি বালহুম আদাল্ল। এরা চতুষ্পদ জীব-জন্তুর মতই বরং তারচেয়েও অধম ও অধিক দিকভ্রষ্ট। (আল-কোরআন)
পবিত্র কোরআন ও হাদীসে জিহাদ কথাটি বহুবার এসেছে। যার অর্থ, সত্য ও ন্যায়ের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা, সংগ্রাম-সাধনা অব্যাহত রাখা। এ কাজটি দুনিয়ার সকল মানুষই পছন্দ করে এবং সত্যপন্থী মানুষ আজীবন জিহাদ করেই চলে। জিহাদের একটি পর্ব সশস্ত্র যুদ্ধ। দুনিয়ার সকল ধর্ম, রাষ্ট্র, সরকার ও সভ্যতারই প্রতিরক্ষার জন্য, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য, দুষ্টের দমনের জন্য এ যুদ্ধের ব্যবস্থা অনুমোদিত ও চর্চিত। সভ্য জগতে এমন কোন রাষ্ট্র কি কল্পনা করা যায়, যার প্রতিরক্ষা বিভাগ, সশস্ত্র বিভাগ, সামরিক বিভাগ তথা যুদ্ধ বিভাগ নেই? যদি এ বিষয়টি ছাড়া সভ্যতা চলতে না পারে, তাহলে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা মহান ইসলাম কীভাবে এছাড়া পূর্ণাঙ্গ হতে পারে? কোরআন ও সুন্নাহ জিহাদের সামগ্রিক অর্থকেই বারবার উৎসাহিত করেছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ওহে যারা ঈমান এনেছ, তোমাদের কি আমি এমন একটি ব্যবসা বা কারবারের কথা বলব না, যা তোমাদের রক্ষা করবে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে? এ ব্যবসাটি হচ্ছে, তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহর উপর এবং তার রাসূলের উপর। আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে তোমাদের জান এবং মাল দিয়ে, জীবন এবং সম্পদ দিয়ে। এটিই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা ব্যাপারটি বুঝে থাক। (আল-কোরআন)। আল্লাহর মহান রাসূল (সা:) বলেছেন, আল জিহাদু মাদিন ইলা ইয়াওমিল কিয়ামাহ। কিয়ামত পর্যন্তই জিহাদ চলবে। মুসলমানদের সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাধনা চিরদিনই অব্যাহত থাকবে। কিয়ামত পর্যন্ত জিহাদ জারি থাকবে। এ ধরনের শতাধিক আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করা যাবে, যাতে জিহাদ জারি থাকার কথা, সশস্ত্র প্রতিরক্ষার কথা এবং ন্যায়ের জন্য যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, মহান ইসলামের এ পবিত্র বিষয়টি, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর এ মহিমাময় শব্দ বা পরিভাষাটি সংকীর্ণ মনের একশ্রেণীর মানুষ তাদের আগ্রাসী ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণার মাধ্যমে দূষিত করে ফেলার চেষ্টা করছে। জিহাদ শব্দটিকে একটি ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য শব্দে পরিণত করতে চাইছে। তারা এটিকে ভীতিকর ও নিন্দিত একটি পরিভাষায় রূপ দিতে সচেষ্ট রয়েছে। ইসলাম, কোরআন সুন্নাহ ও শরীয়তের এ পবিত্র ও অপরিহার্য শব্দটি অর্থ ও মর্ম বিকৃত করা হবে আর মুসলমান চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী, উলামা ও মাশায়েখরা নীরব থাকবেন, তা হতে পারে না। নিজের সীমিত পরিসরে হলেও প্রত্যেক ঈমানদারকে দুশমনের এ চক্রান্ত রুখতে হবে। জিহাদের পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে। এর সঠিক অর্থ ও মর্ম মানুষকে বোঝাতে হবে। দুনিয়াতে একজন প্রকৃত ঈমানদার বেঁচে থাকতে কোরআনের একটি হরফ কেউ বিকৃত করতে পারবে না। এর কোন শব্দ ও পরিভাষাকেও কেউ নিষিদ্ধ বা কলুষিত করতে পারবে না। কিন্তু বিষয়টি সকলকে জানতে হবে, বুঝতে হবে, সোচ্চার হতে হবে এবং সমস্যাটি মূলত কোন জায়গায় তা খুঁজে বের করতে হবে।
বিশ্বে বহু শক্তি এমন আছে অন্যায়ভাবে সন্ত্রাস করছে। পৃথিবীর দেশে দেশে যুগে যুগে সন্ত্রাস ছিল, এখনও আছে। সন্ত্রাসীরা যুদ্ধ করে, প্রতিরোধ করে, মোকাবেলা করে, কিন্তু তাই বলে কি ‘ওয়ার’ ‘স্ট্রাগল’ ‘ফাইট’ কিংবা ‘ডিফেন্স’ শব্দগুলো পচে গেছে? ভারতের মিডিয়ায় প্রতিদিন শোনা যায়, স্বাধীনতা যোদ্ধাদের বলা হচ্ছে ‘মুজাহিদে আজাদি’ যারা জীবন দিয়েছেন তাদের বলা হচ্ছে ‘শহীদানে ওয়াতান’। কই সেখানে তো সন্ত্রাসীদের ‘জিহাদি’ বলা হয় না। বিশ্বব্যাপী চরমপন্থীদের বলা হয় এক্সট্রিমিস্ট। মুজাহিদ তো বলা হয় না। টেররিস্টদের বলা হয় আতঙ্কবাদী, জঙ্গী বা জিহাদি তো বলা হয় না। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ তাকে ‘ওয়ার অন টেররিজম’ বলা হলেও ওয়ার শব্দটি তো কলুষিত, ঘৃণিত ও পরিত্যক্ত হয়ে যায়নি। ফাইট শব্দটি সন্ত্রাসীদের বেলায় ব্যবহৃত হলেও এটি তো ঘৃণিত ও নিষিদ্ধ হয়ে যায়নি। প্রতিনিয়তই বিশ্ববাসী ব্যবহার করছে, ফাইট এগেইনস্ট ক্যান্সার, ফাইট এগেইনস্ট করাপশন, ফাইট এগেইনস্ট পভার্টি। রোগের সাথে যুদ্ধ করে যে মানুষটি জীবনে জিতে গেল, যে জাতি দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল, যে সমাজ দারিদ্র্য ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলÑ তারা কি খারাপ হয়ে গেল ? তারা কি ঘৃণিত ও পরিত্যক্ত হয়ে গেল ? সভ্য জগতে যুদ্ধ চলবেই। অন্যায়, অধর্ম, অশ্লীলতা, অপকর্ম, বদভ্যাস, রোগ-ব্যাধি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবেই। তাহলে এসবের বিরুদ্ধে জিহাদ চলবে না কেন? ওয়ার চলবে, ফাইট চলবে, প্রটেকশন চলবে, স্ট্রাগল চলবে, অফেন্স-ডিফেন্স চলবে, চলবে না কেবল জিহাদ। এ কেমন বিচার, এ কেমন যুক্তি? যুদ্ধ জাহাজ বৈধ, জঙ্গী বিমান বৈধ, বীরযোদ্ধা প্রশংসনীয়, শহীদ গাজী শ্রদ্ধার্হ। সমস্যা কেবল জিহাদ, মুজাহিদ ও মুসলমান সংগ্রামী শক্তির বেলায়। স্বদেশ, স্বাধিকার, রক্ত, সম্পদ, সম্ভ্রম ও জীবন কেড়ে নেয়া হলেও এদের জন্য পৃথিবী আজ প্রতিরোধ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম এদের জন্য সভ্য জগত এখন হারাম করে দিয়েছে। এ হতভাগা মানুষগুলোর জন্য আজ ন্যায়ের যুদ্ধ নিষিদ্ধ, প্রতিরোধ নিষিদ্ধ, লড়াই নিষিদ্ধ, জীবন দেয়া নিষিদ্ধ, বিপ্লব নিষিদ্ধ, মুক্তির সংগ্রাম নিষিদ্ধ, সংগঠন নিষিদ্ধ। কারণ, এরা মুসলমান, এরা আরব। এরা সুন্নী, এরা উম্মতে মুহাম্মদী।
বিশ্বের বিবেকবান মানুষের এ বিষয়টি ভাবা উচিত। শুধু ইসলামী শব্দ হওয়ায় ‘জিহাদ’ এখন বহু মানুষের এলার্জির কারণ হয়ে গেছে। সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসী বইপত্র নিষিদ্ধ করা, বাজেয়াপ্ত করা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। কিন্তু পবিত্র কোরআন, হাদীস, ইসলামী জ্ঞান ও সাহিত্যের যে কোন বই এখন হয়ে গেছে ‘জিহাদি বই’। কত গভীর চক্রান্তের শিকার হয়ে গেছে আজ বিশ্বের মুসলমান। তাদের ধর্মীয় সব বিষয়ই যেন আজ ঘৃণা, নিন্দা আর বর্জনের বিষয়। তাদের সব অধিকারই যেন এখন শুধু পদদলিতই হবে। উম্মতে মুহাম্মদীর কোন কল্যাণ যেন হতে না পারে এ জন্য ইসলামবিরোধী তাবৎ শক্তি এখন একাট্টা। তবে বিশ্বাসীদের মনে হতাশা নেই। নেই ভীতি ও শংকা। তারা গভীর রাতের শেষে নিশ্চিত ভোরের অপেক্ষায় সাহসে বুক বেঁধে আছে। কেননা, মহান আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন, যদি তোমরা আমার দীনের সাহায্য কর, আমি তোমাদের সংগ্রামে সাহায্য করব আর তোমাদের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করে জমিনের বুকে তোমাদের কদম মজবুত করে দেব। অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, তোমরা হীনবল হয়োনা, দুশ্চিন্তা করো না, চূড়ান্ত বিজয় তোমাদেরই হবে- যদি প্রকৃত ঈমানদার হতে পার (আল কোরআন)। বিশ্বব্যাপী ঈমানদারদের সাহায্য ও বিজয় সংঘটিত করা আমি আল্লাহ নিজের উপর অবধারিত করে রেখেছি। এ বিষয়ে আমি আল্লাহ সম্পূর্ণরূপে শক্তিশালী (আল কোরআন) শর্ত হলো ঈমানদারদের সামগ্রিক প্রস্তুতি ও উত্থান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।