পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান-উজ-জামান : নৈতিক ও সুশিক্ষার অভাব এবং মানবিকতার অবক্ষয়ের কারণে মানুষক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। বাড়ছে দুর্বল এবং নিষ্পাপ শিশুদের ওপর নিষ্ঠুর-নির্যাতন। গত বছরে চরম নিষ্ঠুরতায় নিহত শিশু রাজন ও রাকিব এবং গাইবান্ধায় ছাত্র সৌরভ এমপির পিস্তলের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় ওঠে। এসব আলোচিত ঘটনায় অনেকে গ্রেফতার এবং মামলার আসামি হয়েছেন। কিন্তু শিশু নির্যাতনের এ ধারাবাহিকতা যেন থামছেই না। বছরের শুরু থেকেই পারিবারিক ও সামাজিক গ-ির মধ্যে শিশু নির্যাতন ও হত্যার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তাদের মতে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, সকলের নিরপত্তায় রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা, নৈতিক মূল্যবোধ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলাসহ সর্বপরি নিজের বিবেককে সচেতন করলেই এ ধরনের বর্বরতা বন্ধ হবে।
চুরির অভিযোগ এনে গত শুক্রবার নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মাকুপাড়ায় স্কুলমাঠে তিন শিশু শিক্ষার্থীকে পিছমোড়া বেঁধে বেধড়ক পিটিয়েছে সেখানের ব্যবসায়ী মাতব্বররা। ঘটনার শিকার শিশু ফিরোজ আলী (৯), রুমন আলী (১২) ও মেহেদি হাসান (১৩)। তাদের পিতারা সবাই দিনমজুর। তারপরেও ওইসব পরিবার থেকে আদায় করা হয় জরিমানার নামে ৮ হাজার টাকা। পরদিন বিচারের নামে প্রহসন এবং পৈশাচিক নির্যাতন করা হয় এসব শিশুদের।
একই দিন মোবাইল চুরির অভিযোগে রাজশাহীর পবা উপজেলায় এক স্কুলছাত্রসহ দু’জনকে হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। শিশুদের ওপর নির্যাতনের এ দৃশ্য ক্যামেরায়ও ধারণ করা হয়। নির্যাতনের শিকার জাহিদ হাসানকে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অপর শিশু ইমনকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। নির্যাতনের শিকার অন্য শিশু ইমনের বাবা-মা বেঁচে নেই। জাহিদের অভিভাবকদের কাছ থেকে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে আদায় করে প্রভাবশালীরা।
গত শনিবার রাজধানীর ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউন আবাসিক এলাকা থেকে দশ-এগার বছরের অজ্ঞাত এক শিশুর ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ বলছে, শিশুটিকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পেটের ভুড়ি বেরিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধায় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলীপুর গ্রামে ৯ বছরের এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছে পাষ-। পিতৃহীন তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রী এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চিকিৎসাধীন রয়েছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সূত্র জানায় প্রতিবেশি ইউনুস শিশুটিকে তার বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে মুখ চেপে ধরে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী সরিষা ক্ষেতে। এরপর শিশুটির ওপর নির্যাতন চালায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী বলেন, আমরা ভালোবাসা দিবস পালন করি মহাসমারোহে। কিন্তু আমরা কি ভালোবাসতে জানি? সত্যি কি আমরা কাউকে আপন করে নিতে শিখেছি? দুঃখ হয়, যখন শিশুদের ওপর চরম আঘাত এনে তাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়। দিনে দিনে বেড়ে চলেছে এ অন্যায়। কিন্তু নেই কোন প্রতিকার। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য যে শিশুদের আদর, ভালোবাসা ও সুশিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা দরকার, তাদের ওপরই আক্রমণ করা হচ্ছে। কন্যা শিশুদের ধর্ষণ করে জীবন ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। কোথায় সেই ভালোবাসা, কোথায় বিবেক? একেই কি বলে সভ্যতা। তিনি বলেন, সকল অন্যায়ের উপুক্ত শাস্তি, নিরপত্তা এবং নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলেই এ ধরনের নিষ্ঠুরতা কমবে।
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০১৫ সালের সার্বিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল জানান, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে শিশু নির্যাতনের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। গত বছরের ৮ জুলাইয়ে সিলেটে শিশু রাজন ও ৩ আগস্ট খুলনায় শিশু রাকিব নিহত এবং ২ অক্টোবর গাইবান্ধায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সৌরভ গুলিবিদ্ধ হয়। আসক’র হিসাবে, ২০১৫ সালে হত্যা করা হয় একশ ৩৩ শিশুকে। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯০।
২০১৬ সালের বছরের শুরুর দিকেই শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনার পরিসংখ্যানে এরই মধ্যে যোগ হয়েছে চট্টগ্রামে ১১ বছরের আজিমকে জবাই করে হত্যা, খুলনায় প্রতিবন্ধী মেয়েকে হত্যার পর পিতার আত্মহত্যা।এছাড়া গাজীপুরের ১২ বছরের শিশু শ্রমিক মোজাম্মেলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা।
বছরের প্রথম দিকেই পারিবারিক ও সামাজিক গ-ির মধ্যে শিশু নির্যাতন ও হত্যার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলেন, মানসিক এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় এমন ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে।
সাবেক ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রোকন উদ-দৌলা (বর্তমানে যুগ্ম-সচিব, পরিচালক (আইন) রাজউক) বলেন, আমাদের সকলের চরিত্রের মধ্যে হিংস্র মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে সামাজিক মূল্যবোধ, উপযুক্ত সাক্ষ্য ও যথাযথ প্রমাণের অভাবে অনেক মামলায় অপরাধীরা শাস্তি পায় না। এটা রোধ করতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের প্রতি মায়া মহব্বত ও সহজাত মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। সর্বপরি নিজ বিবেককে সচেতন করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলীর মতে, শিশু নির্যাতন ও হত্যা বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতাও বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ মানবকল্যাণ সোসাইটির সভাপতি এসকে শিকদার বলেন, ক্রমেই যেন দুর্বল এবং শিশুদের ওপর আক্রোশ বাড়ছে। সুশিক্ষার অভাবে মানবিকতার অবক্ষয় ঘটেছে। নৈতিকতার শিক্ষা ও সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে এ অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। এছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক অস্থির পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শিশুদের জন্য সুন্দর জীবন গড়তে পারিবারিক কাউন্সিলিংয়েরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।