Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৫৫ বছরে বাংলাদেশ রেলওয়ে

৪৪টি উন্নয়ন প্রকল্প : মন্ত্রী বললেন ২ বছরে অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে

প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : ১৫৫ বছরে পা রাখলো বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই দেড়শ’ বছরে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আবার প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির গরমিলও আছে। তারপরেও বর্তমান সরকারের আমলে রেল অনেকটাই গতিশীল হয়েছে। বেড়েছে যাত্রীসেবার মান। রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য হাতে নেয়া হয়েছে ৪৪টি প্রকল্প। সেগুলো বাস্তবায়িত হলে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক অনেকাংশে কমে যাবে। জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ রেলওয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রেলওয়ের উন্নয়নে ৪৪টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে রেলওয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবে ইনশাল্লাহ।
রেলওয়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি ভারতের রানাঘাট থেকে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া পর্যন্ত ব্রডগেজ সেকশনটি চালু করে। এরপর গোয়ালন্দ পর্যন্ত সেশনটি চালু হয় ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি। এরপর ক্রমান্বয়ে পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর এবং পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ সেকশন চালু হয়। ১৮৮৪ সালের ১ জুলাই ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে আসে এবং ১৮৮৭ সালের ১ এপ্রিল তা নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ের সাথে একীভূত হয়। ঢাকা স্টেট রেলওয়ে নামক একটি ছোট কোম্পানী ১৮৮২ থেকে ১৮৮৪ সালের মধ্যে দমদম জংশন থেকে খুলনা পর্যন্ত প্রায় ২০৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ সেকশনটি চালু করে। ১৯০৪ সালের ১ এপ্রিল এটি ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে আসে। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ভেঙে নতুন রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। ২০১২ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান মোঃ মুজিবুল হক। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পরই শুরু হয় রেলওয়ের উন্নয়ন যাত্রা। মন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে রেলওয়ের বহরে যুক্ত হয়েছে বিলাসবহুল লাল-সবুজ কোচ। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ডাবল লাইনসহ বিভিন্ন রুটে রেলপথের উন্নয়ন করা হয়েছে। কমিয়ে আনা হয়েছে ট্রেনের রানিং টাইম। বেড়েছে ট্রেনের গতি, যাত্রীসেবার মান।
বর্তমানে বাংলাদেশে রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার। স্টেশনের সংখ্যা ৪৪৪টি। রেলপথে বছরে প্রায় ৪২ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হয়। পণ্য পরিবহন হয় প্রায় ৩২ হাজার মেট্রিক টন। সারা দেশে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা ৩৩৯টি। এর মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন আছে ৮৬টি, মেইল ১১৬টি এবং লোকাল ১৩৫টি। আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করে দুটি ট্রেন। বর্তমানে রেলওয়ের বহরে ২৮৫টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) আছে। এর মধ্যে ১৮৪টি লোকোমোটিভের ইকোনমিক লাইফ ২০ বছর অতিক্রম হয়েছে। ১০১টির বয়স ৪০ বছরের অধিক। এতে করে লোকোমোটিভের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ট্রেনের সময়সূচি বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া কোচ ও ওয়াগনের সংখ্যাও চাহিদার তুলনায় অনেক কম আছে। প্রায় ৩৪ শতাংশ কোচ ও ওয়াগনের বয়স ৩৫ বছরের অধিক। কোচ সঙ্কটের কারণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হয় না। ইতোমধ্যে এই সঙ্কট দূর করতে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৭০টি নতুন কোচ আমদানী করা হয়েছে। কয়েকটি ট্রেনে নতুন কোচগুলো সংযোজন করা হলেও অধিকাংশ এখনও পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে রাখা আছে। রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ক্রমান্বয়ে নতুন কোচগুলো ট্রেনের বহরে যুক্ত হলে রেলওয়ের যাত্রীসেবার মান অনেকাংশে বাড়বে।
রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য বর্তমানে ৪৪টি প্রকল্প চলমান আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প দুটি হলো, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেল লাইন প্রকল্প ও পদ্মাসেতু প্রকল্প। এর মধ্যে পদ্মাসেতু প্রকল্প তিনধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম প্রকল্পের মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রেল নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হবে ভারত থেকে বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও কোরিয়া হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত। তখন ট্রেনে চড়েই যাওয়া যাবে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর। ২০২২ সালের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে ট্রেন যাবে খুলনা ও বরিশাল। ঢাকা থেকে ট্রেনে খুলনা যেতে এখন সময় লাগে ১২ ঘণ্টা। রেলের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সময় লাগবে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা। একইভাবে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন ঘণ্টায় যশোর এবং চার ঘণ্টায় বরিশাল যাওয়া যাবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, মাওয়া, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, কাশিয়ানি, ভাটিয়াপাড়াঘাট, নড়াইল, যশোর হয়ে খুলনা যাবে ট্রেন। এর সাথে প্রকল্পের তৃতীয় অংশ বাস্তবায়িত হলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাদারীপুর হয়ে ট্রেন যাবে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালী। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক বলেন, দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পগুলো ছাড়াও ছোট ছোট প্রকল্পের কাজ চলছে। যাত্রীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে নতুন ট্রেনও চালু করা হয়েছে। আরও ট্রেন চালু করা হবে। তিনি বলেন, যাত্রীদের শতভাগ সেবা দেয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ১৫৫ বছরে বাংলাদেশ রেলওয়ে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ