Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এক কর্মী ছাঁটাইয়ের জের : বাংলালিংক ঢাকা ও সব আঞ্চলিক কার্যালয়ে ছুটি ঘোষণা

প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : এক কর্মীকে ছাঁটাইয়ের পর সৃষ্ট অসন্তোষের কারণে প্রধান কার্যালয় ও ঢাকার বাইরের সব আঞ্চলিক কার্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক। গতকাল (রোববার) বেলা দুইটায় এই ছুটি ঘোষণা করা হয়। বাংলালিংকের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা আংকিত সুরেকা বলেন, কার্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হলেও গ্রাহক সেবা কেন্দ্র ও কলসেন্টারগুলো খোলা থাকবে। তিনি বলেন, এটা শুধু আজকের (গতকাল) দিনের জন্য। হঠাৎ ছুটির কারণ জানতে জাইলে সুরেকা বলেন, বৃহস্পতিবারের ঘটনার জের ধরেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলালিংকের প্রধান কার্যালয়ের একজন কর্মী ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানে কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই গতকাল দুপুরের পর এই ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ।
বাংলালিংকে কর্মচারী ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্যে ইউনিয়নের নেতা প্রকৌশলী শরিফুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করা হলে কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কর্মচারী ইউনিয়নের বিরোধ শুরু হয়। এর জের ধরে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির প্রধান টেকনিক্যাল কর্মকর্তা (সিটিও) পিরিহেনি এলহামিকে তার কার্যালয়ে প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখেন কর্মীরা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনের মধ্যেই রোববার বৈঠক করে শরিফুল ইসলামের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেওয়ার পর ওইদিন গভীর রাতে আন্দোলনকারীরা অবস্থান তুলে নেন। এদিকে গতকাল অফিসের কাজ শুরুর আগে কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ অফিস শুরুর সময় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে এক ঘণ্টা এগিয়ে আনে। এরই মধ্যে দুপুরে বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক পাওয়ার অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার মো. মোস্তাককে কয়েকজন কর্মকর্তা ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বেলা ১১টার দিকে ‘স্বেচ্ছা বিচ্ছেদ পরিকল্প’ (ভলান্টারি সেপারেশন স্কিম) শিরোনামে একটি ইমেইল পান প্রতিষ্ঠানের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে বলা হয়, এল ১৮ থেকে এল ২৭ এবং এল-ডিএস গ্রেডের স্থায়ী কর্মচারীরা ২৪ মাসের মূল বেতন নিয়ে এ পরিকল্পের আওতায় অবসরে যেতে পারেন। আর এল-১৪ থেকে এল-১৭ গ্রেডের কর্মীদের মধ্যে যারা গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে দুই বছর ধরে স্থায়ী হিসেবে চাকরি করছেন, তারা চার মাসের মূল বেতন এবং দায়িত্ব পালনের প্রতি বছরের জন্য চার মাসের মূল বেতন ধরে সর্বোচ্চ ২৮ মাসের বেতন নিয়ে অবসরে যেতে পারবেন। আর এল-৩ থেকে এল-১৩ পর্যন্ত গ্রেডের কর্মীদের মধ্যে যারা গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে দুই বছর ধরে স্থায়ী হয়েছেন, তারা চার মাসের মূল বেতনসহ প্রতি বছরের জন্য তিন মাসের মূল বেতন ধরে সর্বোচ্চ ৩০ মাসের বেতন নিয়ে অবসরে যেতে পারবেন। এই মেইল পাওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে দুপুর দুইটার দিকে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ছুটির নোটিস পেয়ে টাইগার্স ডেনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী বেরিয়ে যেতে শুরু করেন।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে বাংলালিংকের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জ্বল পাল বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাদের নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি দিচ্ছে। আমরা কাজের সুস্থ পরিবেশ ফিরে চাই। একজন কর্মীকেও যেন আর চাকরিচ্যুত করা না হয় এর নিশ্চয়তা চাই।
এ ব্যাপারে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, উদীয়মান খাত হিসেবে টেলিযোগাযোগ খাতে অস্থিতিশীলতা আমাদের কাম্য নয়। বাংলালিংকের দুই পক্ষকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসতে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে বিটিআরসি। শাহজাহান মাহমুদ আরও বলেন, লেবারদের ইউনিয়ন করার অধিকার সবার আছে। সেটা আইনগতভাবে করা হয়েছে কি না সেটি পরিষ্কার করতে বাংলালিংক কর্মীরা শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাহায্য নিতে পারেন।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ভিম্পেলকম লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সেবা দিচ্ছে ২০০৫ সাল থেকে। বর্তমানে তাদের গ্রাহক সংখ্যা তিন কোটির বেশি।
এ বিষয়ে বাংলালিংকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ব্যবসার স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলালিংক একজন সিনিয়র ম্যানেজারকে অব্যাহতি দিয়েছে। এ ঘটনায় তার কয়েকজন সহকর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়ায়। দুর্ভাগ্যবশত কয়েকজন কর্মকর্তা, সাবেক কিছু কর্মকর্তা এবং কয়েকজন বহিরাগত বাংলালিংক কর্পোরেট অফিসে এসে প্রবেশ পথে বাধা দেয়। গতকাল সাধারণ আলোচনা চলাকালে এক কর্মী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু কর্মী আবেগবশত হয়ে আবারও উত্তেজনা ছড়ায়। এমতাবস্থায়, দুপুর দু’টার দিকে বাংলালিংক অফিস ছুটি দেওয়া হয়। উপরন্তু, বাংলালিংক ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক মানের ডিজিটাল অপারেটরে পরিণত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলালিংকের ভবিষ্যত চাহিদা পূরণ এবং ব্যবসায় ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কর্মীদের নিরাপত্তা এবং স্বতন্ত্র চাহিদার কথা মাথায় রেখে কর্মচারিদের উপকারের জন্য বাংলালিংক একটি স্কীম চালু করেছে যা মনোনীত কর্মীদের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা স্বচ্ছ ও ন্যায্য পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এক কর্মী ছাঁটাইয়ের জের : বাংলালিংক ঢাকা ও সব আঞ্চলিক কার্যালয়ে ছুটি ঘোষণা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ