পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : ভালোবাসা দিবসে তরুণীরা এসেছিলেন তরুণের বাহু ধরে। এক হাতে বই, অন্য হাতে বাবার তর্জনী ধরে হেঁটেছে বালিকা। ধীর পদক্ষেপে সবার যাত্রা। গন্তব্য বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ভেতরে প্রবেশের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। ধুলাবালি, ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনি নতুন বইয়ের গন্ধ নেওয়ার আকুলতার কাছে।
কিছুটা হিম হিম হাওয়ার মধ্যেই বসন্ত এসেছে পরশু। তারই গায়ে গাঁ ঘেঁষে গতকাল আবার এসেছে হালের হাওয়া লাগা ভ্যালেন্টাইনস ডে’। তারই রং ছড়িয়ে পড়েছে সবার মুখে। ফাগুনের দ্বিতীয় দিনের উদাস হাওয়া আর ভালোবাসা দিবস নিয়ে অগণিত মানুষ গতকাল এসেছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। সন্ধ্যা ছয়টায় দেখা গেল, মেলার দুটি কেন্দ্রে যত মানুষ ভেতরে ঢুকতে পেরেছিল, তার দ্বিগুণ ছিল বাইরে অপেক্ষায়।
বই কেনার চির পরিচিত দৃশ্যের সঙ্গে যেন যোগ হয়েছিল ভালোবাসার আমেজ। তরুণীদের লাল রঙের শাড়ি, খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুল আর হাতে রিনিঝিনি কাঁচের চুড়ি। কেউ বা কপালে লাগিয়েছিলেন লাল টিপ। ভালোবাসার রঙে রঙিন এসব তরুণীর সঙ্গে বেমানান লাগছিল না তরুণদেরও। কারণ তারাও তো সেজেছিল ভালোবাসার রঙে। লাল পাঞ্জাবি, ফতুয়া বা কালো রঙের শার্ট পরে প্রিয়জনের হাত বাহুতে নিয়েই মেলায় ঢুকেছেন তরুণরা।
এদিকে শাহবাগে লাভ ফর ঢাকার কনসার্টের মাতন। এই উৎসব আবহে বইয়ের মেলায় লোক ঢুকছে লম্বা লাইন করে। যেন এক মন ভরিয়ে দেওয়া দৃশ্য। তাদের এ আগমন শুধু ভালোবাসার আবেগে ছুটে চলা ছিলো না। এই আবহে বই বিক্রিতেও লেগেছিল ধুম। ভিড়টা একটু বেশি ছিল উপন্যাস আর ছোটদের বইয়ের দোকানে। বইপ্রেমীদের এ উচ্ছ্বাস ছিল বসন্তের আর ভালোবাসা দিবসের।
পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের এ দুদিন মানুষের আনাগোনা আর বিক্রিতে খুশি প্রকাশকরাও। মেলায় লেখকরাও আসছেন। পাঠকের কেনা বইয়ে স্বাক্ষর করছেন। সবমিলিয়ে বইমেলা পুরোপুরি জমজমাট দুটি দিন পার করলো। মুক্তচিন্তার প্রকাশক জানালেন, এ দুটি দিন প্রেমের উপন্যাস আর কবিতার বই বেশি বিক্রি হয়েছে। ভালোবাসা দিবসের জন্য প্রকাশকরাও প্রেমের উপন্যাস, কবিতা ও প্রেমের গল্প সংকলন নিয়ে বিশেষ আয়োজন সাজিয়েছিলেন পাঠকদের জন্য। ঐতিহ্য প্রকাশনীর একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, সব ধরনের বইই বিক্রি হচ্ছে। তবে যুগলরা মূলত ভালবাসা সম্পর্কিত বই কিনছেন। একে অপরকে উপহারও দিচ্ছেন। মেলায় এসেছিলেন জনপ্রিয় লেখক ইমদাদুল হক মিলন। তিনি জানালেন, যারা অটোগ্রাফ নিতে এসেছেন, বেশিরভাগই নিজের নামটি নয়, প্রিয় কোনো মানুষের নামটি জানিয়ে তার জন্য শুভকামনা করাতে চাইছেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বৃষ্টি ও আশিক হোসেন এসেছিলেন মেলায়। তারা বলেন, ভালবাসাতো আর দিনক্ষণ দেখে হয়না। তবুও একটি উপলক্ষ্য। দু’জনে একসাথে সারাদিন ঘুরে বেড়ালাম। কিছু বই কিনব।
এদিকে গতকাল একুশে গ্রন্থমেলার ১৪তম দিনে নতুন বই এসেছে ৯৩টি। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা : অতীত থেকে বর্তমান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম, সায়েরা হাবীব এবং এ. এস. এম. সামিউল ইসলাম। নৃত্য পরিবেশন করেন ওয়ার্দা রিহাব ও তাঁর দল। এছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম, মাসুদা নার্গিস আনাম, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, শরণ বড়–য়া, স্বর্ণময়ী মন্ডল, দেবাশীষ বসাক, নাহিদ নাজিয়া এবং সাহিনা।
আজকের অনুষ্ঠান :
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে জীবনানন্দ দাশ চর্চা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কবি রুবী রহমান, কবি মুহাম্মদ সামাদ, পশ্চিমবঙ্গের জীবনানন্দ গবেষক প্রভাত কুমার দাস, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী এবং কবি পিয়াস মজিদ। সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট লেখক আহমদ রফিক। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।