Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষ যখন হাসে তখন সব থেকে বেশি ভালো লাগে

ভূমিহীনদের ঘর প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সব বাধা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাব

ইয়াছিন রানা, চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা ঘর পেয়ে মানুষ যখন হাসে তখন আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে। জাতির পিতা এটাই তো চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা তো দুঃখী মানুষের মুখেই হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। এই বাংলাদেশ যেন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করে, সে জাতি পিছিয়ে থাকতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিব যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলছিলেন, তার চলার পথ বাধাগ্রস্ত করতে অনেক চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে তাকে তো সপরিবারে হত্যাই করলো। আমরা কিন্তু খুনি দুষ্কৃতকারীদের মুখে ছাই দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছি। সব বাধা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাবোই।

গতকাল মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে ৩২৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। পরে ভার্চুয়ালি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের খোকশাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যুক্ত থেকে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গৃহহীন-ভূমিহীন উপকারভোগী মানুষরা ইদের আগে জমিসহ ঘর উপহার প্রাপ্তির খুশির আনন্দে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না, পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম কেউ উদ্যোগ নিয়েছে কি না? কিন্তু আমরা জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক। আমি তো শুধু তার কন্যাই না, তার আদর্শ আমি বিশ্বাস করি। কাজেই আমার কাছে ক্ষমতটা হচ্ছে জনগণের সেবা দেয়া, জনগণের জন্য কাজ করা।

তিনি বলেন, আমরা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি। বাংলাদেশের মতো দেশ, যেখানে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, যেখানে অনেক বড় দেশ কল্পনাও করতে পারে না, আমরা কিন্তু করেছি। করোনার টিকা থেকে শুরু করে সবকিছু। করোনার টিকা কেনার টাকা হিসাব করলে হবে না। এটা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কত হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আমরা কিন্তু বিনা পয়সায় দিয়েছি। অনেক উন্নত দেশ এটা দিতে পারেনি।

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি, দুঃখী মানুষের মুখের এই হাসি দেখে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে। জাতির পিতা তো দুঃখী মানুষের মুখেই হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন। দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াবেন এবং তাদের মুখে হাসি ফোটাবেন। টাকা-পয়সা কোনো কাজে আসবে না। করোনায় তো প্রমাণ পাইছেন। ধন, সম্পদ, অর্থ কিছু না। সম্পদের পেছনে ছুটে নিজেকে মানুষের কাছে অসম্মানিত করার অর্থ হয় না। বরং মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে সেটা বড় পাওয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তো শুধু তার (বঙ্গবন্ধুর) কন্যাই না, তার আদর্শকে বিশ্বাস করি। কাজেই আমার কাছে ক্ষমতাটা হচ্ছে জনগণের সেবা দেয়া, জনগণের জন্য কাজ করা। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।

ভূমিহীনদের পুর্নবাসন ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটি মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে এটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সহায়তায় যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের দুভার্গ্য হল সেই অর্জন আর ধরে রাখা হয়নি।যারা পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসেন তারা যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়টাকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল, আদর্শকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আবার যেন এই পাকিস্তানিদের পদলেহন করে সেটাই বোধহয় তাদের লক্ষ্য ছিল। ২১ বছর পর আওয়াসী লীগ সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ যে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে সম্মান পেয়েছে সেই সম্মান নিয়ে বিজয়ী জাতি হিসাবে দেশকে আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে এগিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সেই সাথে সাথে কারো কাছে হাত পেতে নয় আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব এবং আমরা নিজের দেশকে উন্নত করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর পর অনেক বিদেশী সাংবাদিক জাতির পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এদেশে তো কিছুই নাই, আপনি কি দিয়ে দেশকে গড়ে তুলবেন। তিনি একটি কথাই বলেছিলেন, আমার মাটি আছে মানুষ আছে আমি এই মাটি-মানুষ দিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

২১ বছর পর সরকারের প্রথম মেয়াদে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প চালুর মাধ্যমে ভূমিহীনদের পুর্নবাসনের কাজ শুরু করার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আমরা সরকারে আসিনি। ৮টা বছর সময় নষ্ট হয়। ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আবার আমরা আমাদের এই পদক্ষেপ হাতে নেই। যাতে এদেশের মানুষের ভাগ্যটা আমরা পরিবর্তন করতে পারি।

তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে উঠবে। যে সমস্ত মানুষগুলি একেবারে ছিন্নমূল, যাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই যারা কখনো স্বপ্নই দেখতে পারে না, যারা একবেলা এক মুঠো খাবার জোটাতে পারে না, সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করা সেটাই হচ্ছে আমাদের সরকারের সবথেকে বড় লক্ষ্য।

সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবেহলিত মানুষগুলিকে খুঁজে বের করে তাদের পুর্নবাসনের কাজ আমরা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা সারাদেশে একটা সার্ভে করে দেখেছি সেখানে প্রায় ৮ লাখের উপর মানুষ পেয়েছি যারা ছিন্নমূল। এই প্রতিটি মানুষকেই আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব।
অর্থ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ফান্ড থেকে ৫ কোটি টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একটা আলাদা ফান্ড তৈরি করে দিয়েছি। সেখানে আমাদের অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকের মালিক অনেকেই সেখানে অনুদান দিয়েছে। যার ফলে আমরা এখন শুধু খাস জমির খোঁজ করছি না, আমরা নিজেরাও জমি কিনে ছিন্নমূল মানুষের নামে জমি কিনে বিনামূলে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রামের আনোয়ার উপজেলার হাজীগাও প্রান্তে ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। ফরিদপুরে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন ও জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। সিরাজগঞ্জে ছিলেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন আলী হাসান, জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ, প্রধানমন্ত্রীর সহকারি প্রেসসচিব সরওয়ার-ই-আলম জীবন। বরগুনায় যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সহকারি প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস রানা।



 

Show all comments
  • Unit chief ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ৫:১৬ এএম says : 0
    অনেক অনেক ধন্যবাদ,বিশ্ব মানবতার মা,গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,জননেত্রী -শেখ হাসিনা আপা????????????
    Total Reply(0) Reply
  • Neamat Ullah ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ৫:১৪ এএম says : 0
    Mother of humanity" উপাধির উজ্জ্বল দৃস্টান্ত আজকের দিন টি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে লক্ষাধিক গৃহ হীন মানুষ আজ খুজে পেয়েছে নিজের ঠিকানা। জয়তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
    Total Reply(0) Reply
  • Jaker ali ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ৫:১৫ এএম says : 0
    যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ , ততদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ । জয়তু দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
    Total Reply(0) Reply
  • কুনছুমা খাতুন ৯ মার্চ, ২০২৩, ২:০৯ পিএম says : 0
    61
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রীর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ