পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মসজিদে একাকী নির্জনে ইতেকাফে থাকলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তবে ইতেকাফ অবস্থায় কিছু কাজ করলে ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। ইতেকাফ যেমন-
ক. স্ত্রী সংসর্গ : স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে ই‘তিকাফ বাতিল হয়ে যাবে। (তাফসীরে কুরতুবী, বিদয়াতুল মুজতাহিদ : ১/৪৭০; ফতহুল বারী : ৪/২৭২; আস-সায়লুল জারার ২/১৩৬) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীগমন করো না যখন তোমরা মসজিদে ই‘তেকাফ অবস্থায় থাক’ (বাক্বারাহ : ২/১৮৭)
খ) শারঈ ওযর ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হওয়া : ই‘তিকাফকারী কোন অবস্থাতেই মসজিদ থেকে বের হবে না। তবে পানাহার, প্রস্রাব-পায়খানা এবং শারঈ কোন ওযর থাকলে বের হ’তে পারবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘মসজিদে ই‘তিকাফ অবস্থায় নবী করীম (স.) আমার দিকে তার মাথা ঝুঁকিয়ে দিতেন আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় তার চুল আঁচড়িয়ে দিতাম’। (বুখারী : ২০২৮) তিনি আরো বলেন,
ই‘তিকাফকারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, সে কোন রোগীর সেবা করতে মসজিদ থেকে বের হবে না। কোনো জানাজায় উপস্থিত হবে না। স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে না। (শারঈ) প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না। সিয়াম ব্যতীত কোনো ই‘তিকাফ নেই। জামে মসজিদ ব্যতীত কোনো ই‘তিকাফ নেই। (আবু দাউদ : ২৪৭৩, সনদ সহীহ; বায়হাক্বী : ৪/৩১৫)
ই‘তিকাফকারীর জন্য যা বৈধ : ক. মসজিদের একাংশে তাঁবু টাঙ্গানো : রসূলুল্লাহ (স.) যখন ই‘তিকাফের ইচ্ছা করতেন তখন আয়েশা (রা.) মসজিদে তাঁবু টাঙ্গিয়ে দিতেন। (সহীহুল বুখারী : ২০৩৩) মসজিদের পিছন দিকে ই‘তিকাফকারী ছোট্ট তাঁবু টানিয়ে সেখানে ই‘তিকাফ করতে পারবে। কেননা রসূলুল্লাহ (স.) যখন ই‘তিকাফ করতেন, তখন আয়েশা (রা.) তার জন্য একটি তাঁবু তৈরি করে দিতেন। আর এটি তিনি রসূল (স.)-এর নির্দেশেই করতেন। (বুখারী : ২০৩৩; মুসলিম : ১১৭৩) তিনি একবার একটি তুর্কী তাঁবুতে ই‘তিকাফ করেছিলেন। যার দরজায় একটি চাটাই ঝোলানো ছিল। (মুসলিম : ১১৬৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা : ২১৭১, ২২১৯)
খ. মসজিদে ওযূ ও গোসল করা : রসূল (স.)-এর খাদেম আনাস (রা.) বলেন, ‘রসূলুল্লাহ (স.) খুব অল্প পানি খরচ করে মসজিদে ওযূ করেছেন। (সহীহ্ আহমাদ : ৫/৩৬৪)
গ. মসজিদে বিছানার ব্যবস্থা করা : ই‘তিকাফকারীর জন্য মসজিদে বিছানা বিছানো যায়। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ‘একুশতম দিনের সকালে আমরা আমাদের বিছানা পত্র সরিয়ে দিলাম’। (সহীহুল বুখারী : ২০৪০)
ঘ. শারঈ প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া : মসজিদে পেশাব-পায়খানার ব্যবস্থা না থাকলে প্রস্রাব-পায়খানার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে। এছাড়া শারঈ কোনো প্রয়োজনে বের হওয়া যাবে। (আবূ দাঊদ : ২৪৭৩)
ঙ. স্ত্রীর সাথে কথা বলা : রসূলুল্লাহ (স.) তার স্ত্রী ছাফিয়া (রা.)-এর সাথে কথা বলেছেন। ছাফিয়া (রা.) বলেন, রামাযান মাসের শেষ দশ দিনে তিনি একবার রসূলুল্লাহ (স.)-কে দেখতে আসলেন। রসূলুল্লাহ (স.) তার সাথে অনেক্ষণ কথা বললেন। এরপর তিনি উঠে গেলে রসূলুল্লাহ (স.) তার সাথে উঠলেন এবং মসজিদের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। (সহীহুল বুখারী : ২০৩৫; সহীহ্ মুসলিম : ২১৭৫)
ঙ. মুস্তাহাযা মহিলার ই‘তিকাফ করা জায়েয : মুস্তাহাযা মহিলার ই‘তিকাফ করা জায়েয। তবে তাকে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন মসজিদে নাপাকি না লাগে। আয়েশা (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (স.)-এর সাথে তার এক মুস্তাহাযা স্ত্রী ই‘তিকাফরত অবস্থায় ছিলেন। তার লাল ও হলুদ বর্ণের রক্ত প্রবাহিত হ’ত। সলাত আদায়কালে আমরা অনেক সময় তার নীচে পাত্র রাখতাম। (সহীহুল বুখারী : ৩০৯; সুনান দারেমী ৮৭৭)
ই‘তিকাফকারীর শিষ্টাচার : ই‘তিকাফকারীর জন্য করণীয় হ’ল, সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার ধ্যানে মগ্ন থেকে বেশি বেশি সলাত আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, যিকর এবং আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। বিশেষ করে বেজোড় রাত্রিগুলোতে লায়লাতুল ক্বদর অন্বেষণ করা। শুধু ঘুমালে ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য হাছিল হবে না। অনেককে দেখা যায়, ই‘তিকাফে বসে দুনিয়াবী অহেতুক কথা, কাজ বা খোশ-গল্পে মত্ত থাকে, মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকে যা ই‘তিকাফের বৈশিষ্ট্য পরিপন্থী। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ইতিকাফকারীদের এসব থেকে মুক্ত রাখুন।
ই‘তিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই লোক দেখানো এবং দুনিয়াবী স্বার্থ পরিহার করে, শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ই‘তিকাফ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শরী‘আতের বিধান মেনে ই‘তিকাফ করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।