পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১২ ঘণ্টা পর থানা থেকে মুক্ত হয়ে কথা বলতে রাজি হননি কলাবাগান মাঠ রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না। গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শুধু বলেছেন, তারা (থানা) আমাদের সঙ্গে কোনও অন্যায় করেনি, কেবল বসিয়ে রেখেছে। কখন থেকে বসিয়ে রেখেছে প্রশ্নে তিনি বলেন, সকাল ১১ টা থেকে। তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা বলেন, কোনও কমেন্ট করা যাবে না, রেস্ট্রিকশন আছে। এ সময় রত্নাও ইশারায় কথা না বলার কথা জানান। মেয়ের পাঠানো ইফতার করেছেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি খাইনি।
সৈয়দা রত্না বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য। তার ছেলে আইডিয়াল কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী। দুই জনকে দিনভর থানায় আটকে রাখা হয়। তাদের আটকের খবর পেয়ে বেলা ২টার দিকে ওই মাঠে যান মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা) সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উদীচীর ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফ নূরসহ কয়েকজন। গত রোববার সন্ধ্যার পর থেকে সৈয়দা রত্না ও তার ছেলের মুক্তির দাবিতে ঢাকার কলাবাগান থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করে অ্যাক্টিভিস্টরা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা, মানবাধিকারকর্মী এবং উদীচীর সদস্যরাও ছিলেন।
এক পর্যায়ে রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান ডিএমপির রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান। তবে এর আগে এই কর্মকর্তা পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় রাত্নার বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলায় তাকে সোমবার আদালতে তোলা হবে। এমন তথ্য গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন। পরে তিনি বলেন, রত্না মুচলেকা দিয়েছেন তিনি পুলিশের কাজে আর বাধা দেবেন না। এই পরিপ্রেক্ষিতে তার পরিবারের জিম্মায় রত্নাকে এবং তার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে রোববার সকালে সৈয়দা রত্না ফেসবুকে লাইভে গিয়ে ওই মাঠটি দখল হয়ে যাওয়া নিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। এ সময় কয়েকজন সাদা পোশাকধারী পুলিশ তাকে লাইভ করতে নিষেধ করেন। এর পরপরই ওই পুলিশ সদস্যরা তার মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং তাকে টেনে হিঁচড়ে একটি পুলিশ ভ্যানে তুলে নেন। সৈয়দা রত্নার লাইভের একটি অংশসহ এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একই ঘটনায় সমাজকর্মী সৈয়দা রত্নার ছেলেকেও আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে তারকাঁটার বেড়া দেয় পুলিশ। এ মাঠে কলাবাগান থানার নতুন ভবন নির্মাণ করার কথা রয়েছে। তবে মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে কলাবাগান ও এর আশপাশের এলাকার ছেলে-মেয়েদের খেলার জায়গা হিসেবে পরিচিত। খেলার মাঠটি রক্ষায় বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল শিশু-কিশোররা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না।
এদিকে গতকাল তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ঈদ বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা (মা-ছেলে) লাইভ ভিডিওতে এসে কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য প্রচার করছিলেন। সে জন্য তাদের বারবার নিবৃত করার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক পর্যায়ে যখন থামাতে পারেনি তখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সময়ে যেখানে খেলাধুলা করতাম সেই অবস্থাটা এখন আর নেই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা কষ্ট বোধ করি। ঢাকার ডিসি (জেলা প্রশাসক) মাঠের জায়গাটি খাস জমি বলে চিহ্নিত করে বরাদ্দ দিয়েছে কলাবাগান থানাকে। সব প্রক্রিয়া শেষে যখন ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন খেলার মাঠ রাখার দাবিতে অনেকে কথা বলেছেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি খেলার মাঠে বাচ্চারা খেলাধুলা করবে এটাই স্বাভাবিক। খেলার মাঠের ব্যবস্থা যেমন করতে হবে আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও থানার জন্য জায়গাটা জরুরি। জায়গাটায় কী করা যায়, এটা আমরা পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
তবে তেঁতুলতলা মাঠে চলমান নির্মাণ কাজ অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে দেশের নাগরিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্লাটফর্ম। সেই সঙ্গে সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে সৈয়দা রত্না ও তার সন্তানকে হেফাজতে নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছে তারা। গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার সময় স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘সৈয়দা রত্না ও তার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা পুলিশি হেফাজতে আটকে রাখা বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, আমরা এর ব্যাখ্যা চাই, কেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সারাদিন থানায় ছিলেন না। এই ২ জনকে কেন আটক করা হলো তার জবাব পুলিশের কেউই কেন দিতে পারেনি।
সংগঠনগুলো রত্নাকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার নিন্দা জানায় এবং এ কাজের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা অবিলম্বে এই নির্মাণ কাজ বন্ধ করার দাবি জানাই। ওই মাঠটি স্থানীয়দের জন্যই রাখতে হবে। এখানে সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, বয়স্ক মানুষ সন্ধ্যায় এখানে হাঁটাহাঁটি করেন, শিশুরা এখানে খেলাধুলা করে।
থানার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, থানায় ঢোকার মুহূর্তে কলাবাগান থানার গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সারাদিন ফোন রিসিভ করেননি। রত্না ও তার ছেলেকে আটক করার বিষয়ে কারও কাছে স্পষ্ট জবাব ছিল না।
তিনি আরও বলেন, এটাই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব? তারা কি থানায় মানুষের প্রবেশ সীমিত করতে পারে? সাধারণ মানুষকে তাদের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মানুষকে তুলে নেওয়া, পকেটে ইয়াবা রেখে দিয়ে আটক করা, মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করা দেশে রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই ধরনের অভ্যাসের প্রতিবাদ জানাই। তিনি জানান, এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন এবং আশা প্রকাশ করেন, থানা অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হবে।
সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে তুলে নেওয়ার ঘটনাকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে রিজওয়ানা বলেন, অন্যদের ভয় দেখানোর জন্য এটা করা হয়েছে, যাতে তারা খেলার মাঠ দখলের বিরুদ্ধে আওয়াজ না তোলে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নিজেরা করি’র খুশি কবির, শিল্পী মোবাশ্বের হোসেন, উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর গীতি ইমাম, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমেদ কারুজ্জামান মুজমদাসহ অনেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।