Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৭৪ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোয় চলাচল ৭ গ্রামের মানুষের!

প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম থেকে  : ৭৪ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোয় চলাচল করছে এখানকার ৭ গ্রামের প্রায় ২০ শহস্রাধিক মানুষ। জীবনের শেষ সময়ে এসেও দুর্ভোগ দেখতে হচ্ছে এলাকার নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, স্কুল-কলেজ-মাদরাসাপুড়য়া ছাত্র-ছাত্রীসহ শ্রমসজীবী ও কর্মজীবী মানুষদের। জানিনা মৃত্যুর আগে দেখে যেতে পারি কি না এ সেতুর কোনো পরিবর্তন। দেশের সর্বত্রই চলছে উন্নয়নের জোয়ার, কিন্তু সেই জোয়ারের নাগাল যেন এখানের মানুষের কপালে ভর করছে না। অবহেলায় যেন এখানকার প্রজন্মদের আজন্ম পাপ। দীর্ঘ ৭৪ বছর থেকেই শুনে আসছি, দেশের জনপ্রতিনিধি নামক ভয়ঙ্কর দানবদের প্রতিশ্রুতি। আমরা গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষ। এত কিছু বুঝি না। রাত-দিন সমান তালেই চলছে পরিশ্রম, চলছে আবহেলার পথ চলা। আক্ষেপের সুরে একের পর এক এভাবেই বলে গেলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার উত্তরর্ভূষি গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মো: নুরুল ইসলাম ও ছৈয়দ নুরসহ অনেকেই।
জানা যায়, বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ কড়লডেঙ্গা-পটিয়া ধলঘাট সীমান্তবর্তী হারগাজি খালের উপর নির্মিত হয় এ সেতুটি। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেতুটি নড়বড়ে হয়ে একসময় খালের পানিতে ন্যূয়ে পড়ে বিলীন হয়ে যায়। এতে বোয়ালখালী-পটিয়া সিমান্তবর্তী এলাকার ৭ গ্রামের প্রায় ২০ শহস্রাধিক মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন এভাবে থাকার পর সেতুটি নির্মাণে কেউ এগিয়ে না আসায় নিজ উদ্যোগ ও অর্থায়নে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে প্রাথমিক যোগাযোগ স্বাভাবিক করেন এলাকাবাসী। এরপর দল-মত, মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি-মন্ত্রীসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনের পর আবেদন দিয়ে শুরু হয় সেতু প্রাপ্তির যন্ত্রণাদায়ক প্রত্যাশা। এভাবে চলতে চলতে এখন ৭৪ বছরে এসে ঠেকেছে বাঁশের সাঁকোয় দুই উপজেলার ৭ গ্রামের ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ নিত্য যাতায়াত।
এলাকাবাসী জানায়, দু’টি উপজেলার সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধি, এলজিইডি বা সরকারি দপ্তরের কর্তারা কোনোদিন দেখে যাওয়ারও গরজ মনে করেননি। তবে নির্বাচনের আগে এসে সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিতে ভুল করেননি কেউই। এলজিইডি বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলীরা এ ব্যাপারে কিছু জানেনই না। তারা শুধু ধরাকে সরা জ্ঞান করে পকেট ভারীতে লিপ্ত। পকেট ঠিক তো সবই ঠিক, লাখ লাখ মানুষ কষ্ট বা ঝুঁকিতে থাক তাদেরই বা কি আসে যায়? এমন কথা অকপটে বলেন এখানকার হাজারো মানুষ। জন্মাবধি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার মানুষগুলোর। ফলে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও অনগ্রসর রয়ে গেছে এ জনপদ। এখানকার জনপ্রনিধি, এমপি-মন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হাল ছেড়ে এবার প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এখানকার এক চাকরিজীবী মো: ইকবাল হোসেন বলেন, ব্রিটিশ আমলের সেতুটি ভেঙে গেলেও যাতায়াত সচল রাখতে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে প্রতিবছর বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করে থাকেন। সেতুটির উত্তর পাড়ে রয়েছে বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা ও দক্ষিণে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়ন। এ ছাড়াও সেতু লাগোয়া দক্ষিণ পাড়েই রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাচীন ধলঘাট বুড়া কালী মন্দির। এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দর্শনার্থীরা ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হয়ে থাকেন হাজার হাজার মানুষ। এযাবত অনেক ছাত্র-ছাত্রী, রোগী-পথচারীও এ সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছেন। শিশু মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে এ সাঁকো। একটি মাত্র সেতুর জন্য আমাদের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান আড়ম্বরপূর্ণভাবে করা যায় না। এই একটি মাত্র সেতু পাল্টে দিতে পারে এ জনপদের চিত্র। উন্নয়নের ছোঁয়ায় ভরে উঠতে পারে এখানকার হাজার হাজার মানুষের কপাল, এমনটাই ধারণা ওই জনপদে থাকা মানুষগুলোর।
এ ব্যাপারে কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদুল হক মান্নান বলেন, বোয়ালখালী-পটিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার জন্য সেতুটি নির্মাণ করা জরুরি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর একাধিকবার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বোয়ালখালী প্রকল্প কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেছিলাম। সম্প্রতি সেতুটি নির্মাণে ৫৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে বলে শুনেছি। তবে বোয়ালখালী উপজেলা প্রকৌশলী সুজিত কান্তি মজুমদার জানান, সেতুটি নির্মাণে প্রকল্পের বিষয়ে এখনো অবগত নই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৭৪ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোয় চলাচল ৭ গ্রামের মানুষের!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ