পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক বলেছেন, গণতন্ত্র সুসংহত করতে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে। বিশেষ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত মনে করে যুক্তরাজ্য।
কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন কিভাবে গঠিত হবে সেটা বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণই ঠিক করবে। এ নিয়ে অন্য কোন দেশের মন্তব্য করা শোভন নয়। সোমবার কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন (ডিক্যাব) -এর সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ডিক্যাবের সভাপতি আঙগুর নাহার মন্টির সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান। ব্রিটিশ হাইকমিশনার অনুষ্ঠানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক, ব্রিটেনের ভিসা পদ্ধতি, কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি।
বারিধারার ব্রিটিশ হাইকমিশন কমপ্লেক্সে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ ভিসা সেন্টার ঢাকা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর এবং এ কারণে বাংলাদেশী ভিসা প্রার্থীদের হয়রানী হচ্ছে বলে সাংবাদিকরা জানালে তিনি জবাবে বলেন, বাজেট সঙ্কোচনের কারণে ঢাকা থেকে সেন্টারটি দিল্লিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলেই ব্রিটেন এ ধরনের ভিসা হাব করেছে। এখন দিল্লি সেন্টার থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ভিসা প্রক্রিয়া করা হয়। আর আধুনিক যুগে ইন্টারনেটের কারণে ঢাকা বা দিল্লি কোনো সমস্যা নয়। তবে সিদ্ধান্ত দিল্লি থেকে আসলেও ভিসার স্টিকার ঢাকা থেকেই দেয়া হচ্ছে বলে জানান ব্লেইক। তিনি বলেন, এ সেন্টারকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় এবং এ কারণে কোনো ভিসা প্রার্থী হয়রানীর শিকার হচ্ছেন না বলেও তিনি জানান। তবে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য আন্তরিক বলেও তিনি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু এখনো আরো উন্নতি প্রয়োজন। বিশেষ করে একজন যুবক বিমান বন্দরে ঢুকে নিরপত্তা রক্ষীদের উপর হামলা চালানোর ঘটনার পর এটা জরুরি যে নিরাপত্তার ব্যাপারে আরো নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ঢাকা-লন্ডন সরাসরি কার্গো আবারো চালু হতে পারে। এ বিষয়ে সময়সীমা নির্ধারণ সম্ভব না। এনিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।
অ্যালিসন ব্লেইক তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে যে দৃঢ় বক্তব্য রেখেছেন এবং জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি আরো বলেন, হত্যা কিংবা বর্বর সহিংস ঘটনাগুলোর তদন্ত না হলে, দোষীরা শাস্তি না পেলে নিরাপত্তা পরিস্থিতিই শুধু দুর্বল হয় না, তা আইনের শাসনকেই শেষ করে দেয় এবং এটা শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নয়, দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা সম্পর্কে শঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। তবে সাম্প্রতিক ব্রিটিশ ক্রিকেট টিমের বাংলাদেশ সফরকে তিনি চমৎকার ঘটনা বলে মন্তব্য করেন।
এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বারবার হামলার ঘটনা কখনই কাম্য নয়। এসব ঘটনা বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছি। আশা করা যায়, এ ধরনের নিন্দনীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা চলতে থাকলে সহনশীলতা ও সমল্পি^ত সংস্কৃতির দীর্ঘ ঐতিহ্যের বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশে ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পহেলা জুলাই হলি আর্টিসানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর অভিযান নিরাপত্তা সম্পর্কে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবে সন্ত্রাসবাদ এখন বৈশি^ক সঙ্কট এবং এর মোকাবেলায় সমন্বি^ত উদ্যেগ জরুরি। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি জানান। তবে সব নাগরিক যখন নিরাপদ বোধ করবে তখনই সবাই নিরাপদ। ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী ও পোষাক ক্রেতাদের একটি দল ঢাকায় এসে পুলিশের সাথেও দেখা করেছে এবং তারা কিছুদিন অবস্থানের পর ঢাকা ত্যাগ করেছে এবং তারা গামেন্টসের পোষাকের কোনো অর্ডার দেয়নি।
গণতন্ত্র এবং নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতন্ত্র সুসংহত করতে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্য বিশ^ব্যাপী কাজ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও কাজ করছে। বিশেষ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত মনে করে যুক্তরাজ্য। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন কিভাবে গঠিত হবে সেটা বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণই ঠিক করবে। এ নিয়ে অন্য কোনো দেশের মন্তব্য করা শোভন নয়। তবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ব্রিটেন। তবে এটি একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এনিয়ে ব্রিটেন বাংলাদেশকে কোনো ধরনের উপদেশ বা নির্দেশনা দেবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান কিভাবে লন্ডনে দীর্ঘ দিন বাস করছেন জানতে চাইলে হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক বলেন, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করার এখতিয়ার তার নেই।
ব্রিটেনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্রিটেন বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। দুইশত’র বেশি ব্রিটিশ কোম্পানি এদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এ ছাড়া ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো পায়রা বন্দর এবং পদ্মা ব্রিজের মতো মেগা অবকাঠামো নির্মাণে যুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশী তৈরী পোষাকের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার হলো ব্রিটেন।
ব্রিটেনের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে আমরা। বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সংযুক্ত একটি জাতি। ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত। তাই ইইউ ত্যাগে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি মনে করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।