পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম; সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাঈল আ.) অবতরণ করেন প্রত্যেক কাজের জন্য তাদের রবের অনুমতিক্রমে। (সূরা কদর, আয়াত: ৩-৪)।’ মহান আল্লাহ এ বরকতময় রজনীতে মানবজাতির হিদায়াতের বাহক পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। এর চেয়ে বড় কোনো নিয়ামতের কথা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না।
গতকাল জুমার বয়ানে মসজিদের পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রমজানের তৃতীয় জুমায় সারাদেশের মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ঢল নেমেছিল। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও গুনা মাফের জন্য মসজিদে মসজিদে মোনাজাতে মুসল্লিদের মাঝে কান্নাররোল পড়ে যায়। নগরীর মসজিদে গাউছুল আজমেও প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত, যে রাতে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বস্তুুর সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, “হা-মীম, শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রাতে, আমি অবশ্যই সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়, আমার আদেশক্রমে, আমি রাসূল প্রেরণকারী। তোমার রবের অনুগ্রহে, তিনি তো সর্বশ্রোতা। (সূরা দুখান, আয়াত: ১-৬)। আল্লাহ তায়ালা অন্য এক স্থানে বলেন: “ শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম; সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাঈল আ.) অবতরণ করেন প্রত্যেক কাজের জন্য তাদের রবের অনুমতিক্রমে। (সূরা কদর, আয়াত: ৩-৪)।
খতিব বলেন, লাইলাতুল কদর একটি বরকতময় রজনী। মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট যে রাতের অনেক মহত্ব ও ফযিলত রয়েছে। তার মহত্বের প্রমাণ স্বরূপ এটাই যথেষ্ট যে, মহান আল্লাহ এ রাতে মানবজাতির হিদায়াতের বাহক পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। ‘লাইলাতুল কদর’ এর ফযিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরাতুল কদর নামে একটি সূরাই নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন: “নিশ্চয় আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি শবে কদরে (মর্যাদাপূর্ণ রাতে) আর শবে কদর সম্বন্ধে তুমি কী জানো? শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম; সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাঈল আ.) অবতরণ করেন প্রত্যেক কাজের জন্য তাদের রবের অনুমতিক্রমে, (এ রাতে) শান্তিই শান্তি, ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত। (সূরা কদর, আয়াত: ১-৫)।
গুলিস্তানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার খুৎবায় বলেন, রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ সুন্নতে মুআক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লার জামে মসজিদে কোনো রোজাদার মুসলিম ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে এ ধরনের সুন্নত আদায় হবে। তাই এলাকাবাসীর কেউ যদি ইতিকাফ না করে তা হলে সুন্নত ছেড়ে দেয়ার কারণে সবার সুন্নত তরকের গুনাহ হবে। ইতিকাফের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘মসজিদে ইতিকাফ হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতা; চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা। ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের সর্বোত্তম উপায়। এ জন্য রাসূল (সা.) নিজে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তাঁর বিবিরাসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এই সুন্নতের ওপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমল করেছেন।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা : ২/৪২)।
পবিত্র কোরআনে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) এর কথা উল্লেখ করে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১২৫)। ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর ১১৭১)। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)। রমজানের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ দিন হলো শেষ ১০ দিন। কেননা এ দশকেই রয়েছে পবিত্র শবেকদর। বিশেষ হেকমতের কারণে শবেকদরের দিনক্ষণ ঠিক করে দেয়া হয়নি। এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ইবাদতের প্রতি মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে। যারা এ রাতের রহমত ও বরকত থেকে বঞ্চিত, তারা সবচেয়ে হতভাগা। এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করে বান্দাদের ডেকে ডেকে বলেন, ‘কে আছ অসুস্থ আমার কাছে চাও আমি শেফা দান করব, কে আছ অভাবগ্রস্ত আমার কাছে চাও আমি প্রাচুর্য দান করব, কে আছ বিপদগ্রস্ত আমার কাছে চাও আমি বিপদমুক্ত করে দেব।’ বিশেষত শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে রমজানের অন্যান্য রাতের তুলনায় বেশি বেশি ইবাদত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল ও কোরআন তেলাওয়াত করা চাই। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই পুণ্যবান সময়কে ইতিকাফের মাধ্যমে কাজে লাগানোর তৌফিক দান করুন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের বারিধারায় বিধৌত হয়ে পাপের পঙ্কিলতা থেকে পরিচ্ছন্ন ও শুদ্ধ হওয়ার মাস রমজান চলছে। রমজানের গুরুত্বপূর্ণ শেষ দশক আমাদের সামনে সমাগত। শেষ দশকে ইতিকাফের মাধ্যমে একজন গুনাহগার বান্দা আল্লাহর কাছে সম্মানিত হয়ে যায়। জাহান্নাম থেকে মুক্তির মহা নেয়ামত অর্জিত হয় শেষ দশকের ইতিকাফের মাধ্যমে। ইতিকাফ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমÐিত ইবাদত। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আক্ষরিক অর্থেই আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যায়। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বর্ণনা করেন, নবী কারীম সা. আজীবন রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন। (বুখারী, মুসলিম)। খতিব আরও বলেন, ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হল শবে কদর প্রাপ্তি। রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়ে যায়। রাসূলে কারীম সা. বলেছেন: ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদরকে তালাশ করো। (মুসলিম)। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।
রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন জুমার বয়ানে বলেছেন, লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত্রিতে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। শবে কদরের রাতে ইবাদত করা হাজার মাস ইবাদত করার চেয়েও বেশি ফজিলত। শবে কদরের ফজিলত অন্য কোন উম্মতকে দেয়াা হয়নি, শুধু আখেরি নবীর উম্মতকেই দেয়া হয়েছে। শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত উম্মতগণ অল্প হায়াত পেয়েও অন্যান্য উম্মতের চেয়ে নেকিতে পিছিয়ে না থাকে সেজন্যই এই উম্মতকে এ ফজিলতপূর্ণ রাত্রি দান করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ মহান নেয়ামত কদর অর্জনে বেশি করে ইবাদাত-বন্দেগি করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।