পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ঋণে ব্যাংকগুলো যাতে ইচ্ছেমতো সুদ আদায় না করে এবং সময়মতো অর্থ ছাড় করে সেজন্য ‘অন্তবর্তীকালীন সময়ের’ সুদহার নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ইডিএফের ঋণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ের জন্য নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ১ শতাংশ সুদ নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ ইডিএফের আওতায় উৎপাদনের কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে ২ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত ১ শতাংশ সুদ নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী সকল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, আমদানি বিল পরিশোধ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডিএফ থেকে পুনঃঅর্থায়ন তারিখ পর্যন্ত সময়কে ‘অন্তবর্তীকালীন’ হিসেবে ধরা হবে। এই সময়ের জন্য ১ শতাংশ সুদ রফতানিকারকের ওপর আরোপ করা যাবে। বর্তমানে ইডিএফের আওতায় উৎপাদনের কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে রফতানিকারকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো ২ শতাংশ হারে সুদ আদায় করে থাকে। আদায় করা এই সুদের ১ শতাংশ পুনঃঅর্থায়নের সুদ বাবদ বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে হয়। বাকি ১ শতাংশ পায় সংশ্নিষ্ট ব্যাংক।
সম্প্রতি রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন উপকরণ আমদানির জন্য ইডিএফ থেকে ঋণের চাহিদা বেড়েছে। এতে ইডিএফের ওপর চাপ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সময়মতো পুনঃঅর্থায়ন করতে পারছে না।
জানা গেছে, আমদানি বিল পরিশোধ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডিএফ থেকে পুনঃঅর্থায়ন তারিখ পর্যন্ত এই সময়ের জন্য ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে রফতানিকারকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদ আদায় করে থাকে। এই সার্কুলার জারির ফলে ব্যাংকগুলো এখন আর ওই সুযোগ পাবে না। রফতানি বাড়াতে স্বাধীনতার পর বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় মাত্র ১ কোটি ৫০ ডলার নিয়ে ইডিএফ গঠন করা হয়। দেশের রফতানি আয় বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই তহবিলের আকারও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে এই তহবিলের আকার ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার।
ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বাড়াতে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিটিএমএ, নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএসহ অন্যান্য রফতানিকারক সংগঠনের সদস্যরা ইডিএফ থেকে ঋণ পেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে সুবাতাস বইছে। করোনা মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছিল। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের অবস্থা আরও রমরমা। এই অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) পণ্য রফতানি থেকে ৩৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন রফতানিকারকরা। এরমধ্যে ৩১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।
শতাংশ হিসাবে মোট রফতানির প্রায় ৮২ শতাংশই এসেছে পোশাক খাত থেকে। রফতানিতে এই উল্লম্ফনের কারণে ইডিএফ ঋণের চাহিদাও বেড়েছে।
রফতানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত নিট পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও আমরা পোশাক রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছি। এক্ষেত্রে ইডিএফ বেশ ভালো অবদান রেখেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সময়মত পুনঃঅর্থায়ন দিতে না পারায় কোনো কোনো ব্যাংক আমদানি বিল পরিশোধের দিন থেকে পুনঃঅর্থায়ন পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ের জন্য ৭ থেকে ৮ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করে থাকে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক মোটেই অর্থায়ন করে না। ফলে রফতানিকারকরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন।
বাংলাদেশ ব্যাংক অন্তবরর্তীকালীন সময়ের সুদহার নির্ধারণ করে দিয়ে একটি ভালো কাজ করেছে। এতে সকল খাতের উপকার হবে। ব্যাংকগুলো ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত সুদ নিতে পারবে না। তবে অর্থায়ন নিশ্চিত করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদাড়ি বাড়াতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।