পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বেনাপোল অফিস : ভারতে আকস্মিকভাবে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সেখানে অবস্থানকারী হাজার হাজার বাংলাদেশী। মোদি সরকারের মঙ্গলবারের এই ঘোষণার পর সেখানে বাংলাদেশীদের অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটছে।
অপরদিকে বড় দু’টি নোট বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশীদের লাখ লাখ টাকা গচ্চা যেতে বসেছে। তাদের অধিকাংশের কাছে ভারতীয় মুদ্রা বলতে যা আছে, তার প্রায় সবটাই ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। ভারতে চিকিৎসা বা অন্য কোনো কাজে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন, এমন বাংলাদেশী বহু মানুষের কাছেই রয়েছে ভারতীয় নোট। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে, এগুলো এখন অবৈধ। ফলে বিপাকে আছেন এই নোট সংগ্রহে রাখা ব্যক্তিরাও।
সরকারি ঘোষণার পর ভারতীয় মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ীরা ছোট নোটের অভাব সৃষ্টি করে বাংলাদেশী টাকার মান অর্ধেকে নামিয়ে এনে হরিলুট করছেন। চরম আর্থিক সঙ্কটের কবলে পড়ে অনেককে অসহায় অবস্থায় কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে। চিকিৎসা ব্যয় ও খাবার টাকা পর্যন্ত জোগাড় করতে পারেননি অনেকেই। বেনাপোল ও ওপারে ভারতের পেট্রাপোলে মানিচেঞ্জারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় এক হাজার রুপির নোটের বিনিময়ে বাংলাদেশী ৫০০ রুপির নোটের বিনিময়ে বাংলাদেশী ৩৫০ টাকা করে দিচ্ছেন। প্রথমেই তারা ‘রুপি নেয়া হবে না’ বলে ভ্রমণকারীদের মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছেন। তারপর নানা অনুরোধে কৌশলে এভাবেই টাকা বিনিময় করে দিচ্ছেন। উপায়ন্তর না পেয়ে ভ্রমণকারীরা এভাবেই বিপুল লোকসানে মুদ্রা বিনিময় করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া ব্যক্তিদের বড় অংশই রোগী এবং তাদের স্বজন। তারা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ছাড়াও চেন্নাই, ভেলোর, দিলিল্ল, মুম্বাইসহ বিভিন্ন নগরের বড় বড় চিকিৎসাকেন্দ্রে যান। কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতাল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস, অ্যাপোলো হসপিটাল, মেডিকা, সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউট, নাইটইঙ্গেল, কোঠারি, এএমআরআইয়ের মতো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এসব রোগীর আত্মীয়দের প্রায় সবাই থাকেন ওই সব হাসপাতাল-লাগোয়া হোটেল ও অতিথিশালায়। কেউ কেউ দৈনিক ভাড়ায় কোনো বাড়িতে বা হোটেলে ঘর নিয়ে থাকেন।
কিন্তু ইউএস ডলার বা বাংলাদেশী টাকা দেশ থেকে ভাঙিয়ে যত ভারতীয় রুপি তারা নিয়ে গেছেন তার বড় অংশই এখন আর বিনিময় করতে পারছেন না। মুদ্রা অচল হয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন স্বজনদের খাওয়া-দাওয়া জুটছে না, তেমনি সমস্যা হচ্ছে রোগীদের চিকিৎসার খরচ জোটাতে।
ওপার থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, গত বুধবার রাত থেকেই অধিকাংশ হাসপাতাল ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ৫০০ ও ১০০০ টাকার রুপির নোট নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। একই অবস্থা হোটেল, স্টেশন, বিমানÑ সবখানে। ফলে অনেক রোগী হাসপাতালে সময়মতো ভর্তিও হতে পারেননি। যাদের হাসপাতাল ছাড়ার কথা ছিল, তারাও বেরোতে পারেননি। অথচ রোগীর স্বজনদের হাতে রয়েছে প্রয়োজনীয় টাকা; যা এখন অচল।
পাঁচ দিন আগে খুলনার এক রোগী ভর্তি ছিলেন মুকুন্দপুরের একটি নার্সিং হোমে। বুধবার তার ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোগীর স্বজনদের হাতে থাকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার রুপির নোট হাসপাতাল নেয়নি। ওই রোগীর এক আত্মীয়া বলেন, ‘উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় আমাদের কয়েকজন আত্মীয় আছেন। তাদের সহায়তায় সমস্যার সমাধান হয়েছে। ওরা এসে বৃহস্পতিবার ডেবিট কার্ডে হাসপাতালের খরচ মিটিয়ে দেবেন। পরে আমরা দেশে ফিরে ওদের টাকা পাঠিয়ে দেবো।’
একই পরিস্থিতির শিকার হন মাগুরার রাওতাড়া এলাকার তানভির আহমেদ এবং শাহনাজ আলীর। চিকিৎসার জন্য তারা ভারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বড় নোট থাকায় সাংঘাতিক বিপদে পড়েন তারা। অবশেষে শতকরা ২০ রুপি অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে টাকা পাল্টাতে হয়েছে তাদের। অর্থাৎ ৫০০ রুপির নোট দিয়ে ৪০০ রুপি এবং এক হাজার রুপির নোট দিয়ে ৮০০ রুপির বাংলাদেশী বিনিময় টাকা পেয়েছেন। বৃহস্পতিবারের অবস্থা ছিল আরো ভয়াবহ। ভারতের কোনো হাসপাতালই বিদেশ থেকে আসা রোগীদের সাহায্য করতে হাত বাড়ায়নি বলে জানান তারা।
বাংলাদেশের হাজার হাজার রোগীর এই দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেছেন ভারতের ডাক্তাররা। তারা বলছেন, ভর্তি-অপারেশন দূরের কথা, বহু রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে পারেননি নোট বিভ্রাটের জেরে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। এর জেরে ভারতের মেডিক্যাল ট্যুরিজম ব্যাপক ধাক্কা খাবে।
পার্ক স্ট্রিট, মার্কুসি স্ট্রিটের বিদেশী মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়ছে ভিড়। সেখানে দিনভর ধরনা দিয়েও ৫০০ ও ১০০০ টাকার রুপির বিনিময়ে কাজ চালানোর মতো ১০০ রুপির নোট জোগাড় করে উঠতে পারেননি বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অনেকেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।