Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফের বেড়েছে দাম

সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে জানতে পেরেছি পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে : ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

রমজান মাসে ফের বেড়েছে ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম। দাম বাড়ানো-কমানো নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নাটক-সিনেমা পর সয়াবিন তেলের দাম দুই সপ্তাহ স্থিতিশীল ছিল। তবে দাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এখন রমজানের এক সাপ্তাহ না যেতেই বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সাপ্লাই কম থাকায় এবং ও চাহিদা অনুযায়ী অর্ডার না মেলায় তেলের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।

জানতে চাইলে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, মিলে দাম স্বাভাবিক থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরো বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে। এব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে, অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে পাঁচ পাইকারি ব্যবসায়ীকে ৪ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ বেশি দাম নিলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর্থিক দণ্ডসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। এছাড়া সিন্ডিকেট করে কেউ যদি দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও বিশেষ আইনে মামলা করা হবে।

গতকাল রোববার রাজধানীর কদমতলীয় থানার শনির আখড়ায় খুচরা ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন জানান, তিনি কয়েকদিন থেকে সয়াবিন তেল দোকানে রাখছেন না। কারণ সরকার বেধে দেয়া মূল্যের চেয়ে প্রতিকেজি তেলের দাম ৫ থেকে ৭ টাকা করে বেশি চায় পাইকাররা। তার অভিযোগ পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করতে পারলে সরবরাহ করা হবে। বেশি দাম হওয়ায় তিনি দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন। বললেন, এক কেজি, দুই কেজি ওজনের তেল রাখ: ৫ কেজির রাখি না। আধাকিলোমিটার দূরের গোবিন্দগঞ্জ বাজারের ভোগ্যতেলের এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানালেন, বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়ার জন্য চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম করার কৌশলের কারণে সয়াবিন তেলের দাম কমছে না। সরকার ভ্রাম্যমান আদালত, মিলে অভিযান এসব কার্যত নাটক। ভোক্তাদের বোঝানোর জন্যই এসব করা হয়।

রাজধানীর নিউ মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী হোসেন স্টোরের বিক্রয়কর্মী আরিফ অভিযোগ করে বলেন, তেলের দাম আরও বাড়তে পারে। কোম্পানিগুলো ঠিক মতো সাপ্লাই দিচ্ছে না। চাহিদা মতো অর্ডারের মালামাল না দিয়ে বলছে, দু-একদিন পর দিচ্ছি। বাজারে সাপ্লাই কম দেওয়ার পাশাপাশি দামও বেশি নিচ্ছে।
একই মার্কেটের অপর ব্যবসায়ী শারমীন স্টোরের আব্দুল জলিল বলেন, গত ৩ থেকে ৪ দিনে আবারও তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি লিটারে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। তবে বোতলের তেলের চেয়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।

ভোজ্যতেলের বাজারের অস্থিরতা কমাতে আমদানি-পাইকারি- খুচরোসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাট কমিয়েছে সরকার। এরপর নির্ধারণ করা হয়েছে তেলের নতুন দাম। তারপরও বাজারে বেশি দামে সব ধরণের ভোজ্যতেল বিক্রি করছে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা।

নিউ মার্কেটের মুদি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাজিব হোসেন সয়াবিন তেলের বাজারদর বিষয়ে বলেন, খোলা এবং বোতলজাত সব ধরণের সয়াবিন তেলের দাম আবারও বাড়ছে। রোজার আগেও এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৬৫ টাকা। সেখান থেকে ৫ টাকা কমে ১৬০ টাকায় নেমেছিল। গত দুই তিন ধরে আবার দাম বেড়েছে। এখন আবার ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকায় বিক্রি করছি। দুই লিটার তেলের দাম ছিল ৩২৫ ছিল, এখন ৩৩২-৩৩৪ টাকা আর পাঁচ লিটার বিক্রি করেছিলাম ৭৬৫-৭৭০ টাকায়। এখন তা আবার ৭৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

গত ২ মার্চ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় জানিয়ে বক্তৃতা দেয়ার পর ৩ মার্চ থেকে সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। সরকার নানান ভাবে চেষ্টা করেও ব্যবসায়ীদের তেল বাজারে ছাড়াতে বাধ্য করতে পারেননি। পরে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে মাত্র ৫ শতাংশ বহাল রেখে ভোজ্যতেলের আমদানি, পরিশোধন ও ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রিতে থাকা সব ধরনের ভ্যাট তুলে নেয় সরকার। এতোদিন ভোজ্যতেলের ওপর তিন স্তরে ৩৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য ছিল। পরে গত ২০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে সয়াবিন তেলের দাম কমিয়ে, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৩৬ টাকা (আগে ছিল ১৪৩ টাকা), বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা (আগে ছিল ১৬৮ টাকা) এবং পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল ৭৬০ টাকা (আগে ছিল ৭৯৫ টাকা) নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

অথচ রমজান মাসের প্রথম সাপ্তাহেই ব্যবসায়ীরা কৌশলে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি›র তথ্যেও এর প্রমাণ মিলেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাদামতলী, সূত্রাপুর, কচুক্ষেত, মৌলভীবাজার, মহাখালী, উত্তরা, রামপুরা, যাত্রাবাড়ি, নিউমার্কেট ও মিরপুর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সরকারি এ সংস্থাটি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ৯ এপ্রিল ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খুচরা এক লিটার বোতলজাত তেলের দাম ১৬৮ টাকা। এক সপ্তহ আগে ছিল ১৬০-১৬২ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬২ টাকা যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫৫ টাকা।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম বেড়েছে- এমন অজুহাতে সয়াবিন তেলের দাম আরও বাড়াতে চান আমদানি ও উৎপাদনকারীরা। গত ৬ এপ্রিল ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানিকারক ও মিল মালিকদের সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বৈঠকে এ দাবি করেন তারা। এসময় বৈঠকে সিটি, মেঘনা, এস আলম, বসুন্ধরা ও টি কে গ্রুপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভোজ্যতেলের বাজার সমন্বয় করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান। তবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদের পর মে মাসে এ দাম সমন্বয় নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। ##



 

Show all comments
  • নিয়ামুল ১১ এপ্রিল, ২০২২, ৭:০৭ এএম says : 0
    দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ