পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিন। এটা সবার দায়িত্ব। সংখ্যালঘুদের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সর্বতোভাবে সবার। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণকেও সজাগ থাকতে হবে। তিনি গতকাল শনিবার রাজশাহী বিভাগের জনগণের উদ্দেশ্যে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন।
কনফারেন্সের সঙ্গে সময় মিলিয়ে বিভাগের ৮ জেলার অন্তত ২ হাজার ৯শ’ ৮১টি স্থানে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ হচ্ছে। সেসব সমাবেশে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা। এসব সমাবেশের মধ্যে ৫টি সমাবেশে জড়ো হওয়া জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসকে আমরা কোনোদিন প্রশ্রয় দেব না। এই দেশের মাটিতে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- হবে না। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব না। আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সর্বতোভাবে নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই জনগণের প্রতি- সকলে আমার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। যে কারণে এটা আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ অন্তত নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কিন্তু এখনও কিছু কিছু যে সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো যেন আর না ঘটে।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। প্রত্যেক ধর্মের মূল বাণী তাই। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করতে পারবে, এটাই ইসলামের কথা। এটাই পবিত্র কোরআনের কথা। আমরা এটাই মেনে চলি।জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইসলামের পথ না। কাজেই এটাই চাইব, দেশের প্রত্যেকটা মসজিদে ইমাম সাহেবরা বা যারা জুমার নামাজের আগে খুৎবা দেন, সেখানে আপনারা এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নবী (স.) কী বলে গেছেন, কোরআনে কি আছে, ইসলাম ধর্ম কী বলে, এই বিষয়গুলো মানুষকে আরও ভালোভাবে জানাতে হবে। যাতে এই ধরনের আত্মঘাতী পথে পা না বাড়ায়। আমরা সব সময় চাই, আমাদের দেশে সম্প্রীতি বজায় থাকবে, দেশের উন্নতি হবে,বলেন শেখ হাসিনা।
বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করার কথাও তুলে ধরেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে গড়ছিলেন, দেশকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করছিলেন, তখন পরাজিত শক্তি চক্রান্ত করে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশে অন্ধকার নেমে আসে। তারপর ক্ষমতা দখলকারীরা লুটপাট শুরু করে।
২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এ সরকারের উন্নয়ন-জনসেবায় মানুষ বুঝতে পারে, সরকার জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ তার উন্নয়নের ধারা এখনও অব্যাহত রেখেছে।
বিএনপির এক নেতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের এক নেতা বলেছেন, তারা নাকি আন্দোলনের তীর দেখিয়েছেন, নভেম্বরে আন্দোলন দেখাবেন। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলের উল্লেখ করে বলেন, আমাদের মনে আছে রাজশাহীতে বাংলাভাই সৃষ্টি। প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীরা মিছিল করছে ট্রাকে। পুলিশ তাদের পাহারা দিচ্ছে। বিএনপির মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী তাদের মদদ দিচ্ছে। তারা প্রকাশ্যে এই সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়েছে, সেটা আমরা দেখেছি। আর এই রাজশাহীবাসীই সেটা প্রত্যক্ষ করেছেন- মানুষ হত্যা করে কিভাবে পায়ে বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকে ৮ টুকরা করা হয়েছে। নিরীহ মানুষ, পুলিশ হত্যা করেছে। জনগণ অতীতেও জ্বালা-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, এবারও রুখে দাঁড়াবে। আন্দোলনের নামে মানুষ খুন ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কোনোদিন জনসমর্থন পাবে না।
প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কড়া অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, এখন একটা শ্রেণী হয়েছে, তারা একদিকে ইসলামের নাম নিচ্ছে, আরেকদিকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চালাচ্ছে। আমাদের সরকার এই ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নয়। জঙ্গিবাদকে কখনো প্রশ্রয় দেবো না।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, এটা বাস্তবতা। আমি আগে যে বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, সেখানেও বলেছি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আপনাদেরও বলছি, জ্বালাও-পোড়াও-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সকলকে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিশ্ববাসী স্বীকার করে- বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি ৪৫ বছর হয়ে গেছে। আজকে যদি জাতির পিতা বেঁচে থাকতেন তাহলে এই বাংলাদেশ আরো বহু আগেই উন্নত হতে পারত। কিন্তু তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজ আমাদেরকে সম্পন্ন করতে হবে। মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ উন্নত জীবন পাবে, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুন-খারাবির পথটা এদেশে আবারো দেখিয়ে দিলো (পঁচাত্তরের জাতির পিতাকে হত্যার পরে) বিএনপি-জামায়াত, এটা এদেশে নতুন কিছু না। তাদের সেই গুলি কর বৃষ্টির মত গুলি কর। মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী- এই যে কথাগুলো সেগুলো নিশ্চয়ই বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। তারা ঐ গুলি কর, মানুষ খুন কর- এসবই তারা জানে। এই কাজ তারা বারবার করেছে এবং তারাই এদেশের ছেলে-মেয়েদের বিপথে নিয়ে গেছে। উস্কে দিয়েছে।
সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হবে অনলাইনে:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার জনগণের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সময় তিনি এ তথ্য জানান। এর আগে ডিভিও কনফারেন্সে বক্তব্য দিতে গিয়ে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া ব্যয় ও সময় সাপেক্ষ বলে উল্লেখ করেন। তিনি মেডিক্যালের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে নেয়ার অনুরোধ করেন।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বগুড়াবাসীর সন্তানদের দূর-দূরান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে আশপাশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরামর্শ দেন। আর ভর্তি পরীক্ষার জটিলতা দূর করতে তার সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনলাইনে যদি আমরা ঘরে বসে কেনাকাটা করতে পারি, তাহলে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারব না? আমরা ভবিষ্যতে সব ভর্তি পরীক্ষাই অনলাইনে করার ব্যবস্থা করব। এর ফলে পরীক্ষার্থীরা স্থানীয় ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। চাইলে বাসায় বসে তারা পরীক্ষা দিতে পারবে। এর ফলে সবার জন্য ভর্তি পরীক্ষা আরও সহজ হবে। এর ফলে পরীক্ষার্থীরা স্থানীয় ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। চাইলে বাসায় বসে তারা পরীক্ষা দিতে পারবে। এর ফলে সবার জন্য ভর্তি পরীক্ষা আরও সহজ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।