পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে না বলে মনে করছে উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশে সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি এডিমন গিনটিং বলেছেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। এ ছাড়া জিডিপির তুলনায় ঋণ-অনুপাত সহনীয় অবস্থানে আছে। সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নেই। শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশ তাই সংকটে পড়বে না।
গতকাল বুধবার এডিবির প্রতিবেদন ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। গিনটিং বলেন, বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো। শ্রীলঙ্কার সেটা ছিল না। তাই সংকটে পড়েছে দেশটি। সার্বিকভাবে বলা যায় বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো ঘটনা ঘটবে না।
তবে দুটি বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এডিমন গিনটিং। এগুলো হলো, ঋণ ব্যবস্থাপনা নীতিকে আরও শক্তিশালী করা এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বাড়ানো। অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মধ্যে তুলনাই চলে না
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দুই কোটি জনসংখ্যার দেশটির অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার পর তাদের বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধই শুধু অনিশ্চয়তায় পড়েনি, নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক সংকট। দেশটির জনগণ যখন সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে, তখন বাংলাদেশে কথা উঠেছে, এই দেশের সামনেও এমন আশঙ্কা আছে কি না। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও অর্থনীতির বিশ্লেষকরা ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটির বিপর্যয়ের যেসব কারণ তুলে ধরছেন, সেগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকিগুলো সেভাবে নেই।
শ্রীলঙ্কা যেসব কারণে বিপর্যয়ে পড়েছে, তার একটি কারণও বাংলাদেশের নেই। দেশটির বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে করোনার কারণে পর্যটন খাত মুখ থুবড়ে পড়া। দেশটির জিডিপির ১০ শতাংশের বেশি আয় হতো এই খাত থেকেই। দুই বছর ধরেই প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে তা।
এ ছাড়া করোনার সময় রফতানি আয়, রেমিট্যান্স কমে গেছে। অর্গানিক কৃষি চালু করতে গিয়ে উৎপাদন কমে গেছে। এর মধ্যেও নানা মেগা প্রকল্পের জন্য নেয়া বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে ভীষণ চাপে পড়েছে রিজার্ভ। এটি নেমে এসেছে দুই বিলিয়ন ডলারে। চলতি বছর যে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, সে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও নেই দেশটির।
অন্যদিকে করোনায় বাংলাদেশের রিজার্ভ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানির গতি ঊর্ধ্বমুখী। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। পর্যটননির্ভরতা নেই বাংলাদেশের, অন্যদিকে বাংলাদেশের নেয়া মেগা প্রকল্পগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না, এমন কোনো বক্তব্য অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা কখনও বলেননি।
বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বাড়তে পারে জানিয়ে এডিবি বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ‘সঠিক পথেই’ আছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। সেই হিসাবে এডিবির প্রাক্কলন কিছুটা কম। অবশ্য বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে এবার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
করোনা মহামারি শুরুর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা ছিল তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হওয়ার হিসাব দেয় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের ভেতরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি সঞ্চার হয়েছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস। মহামারির অভিঘাত সামাল দিতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন এবং রেমিট্যান্স প্রবাহও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এই ধারা চললে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পৌঁছাতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশে।
অবশ্য প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বাড়ার পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে পৌঁছাতে পারে ৬ শতাংশে।
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় শীর্ষে ভিয়েতনাম
চলতি অর্থবছরে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অর্থনীতি। গত অর্থবছরে এ অঞ্চলের গড় প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও এবার তা ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হবে পলে আভাস দিয়েছে এডিবি। চলতি অর্থবছরে এ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষে থাকবে ভিয়েতনাম। দেশটি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে করবে। এছাড়া মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন ৬ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ৫, সিঙ্গাপুর ৪ দশমিক ৩, থাইল্যান্ড ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। অথচ চলতি অর্থবছরে মালয়েশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুরের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি অর্জনে এ দুটি দেশকেও পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ।
ঘুরে দাঁড়াবে প্যাসিফিক অঞ্চল
করোনা সংকটে ঘুরে দাঁড়াবে প্যাসিফিক অঞ্চল। এ অঞ্চল চলতি অর্থবছরে গড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত বছর ছিল মাইনাস শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে ফিজি, দেশটি চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। গত অর্থবছরে ছিল মাইনাস ৪ দশমিক ১ শতাংশ। পাপুয়া নিউ গিনি চলতি অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে, যা গত বছর ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ মাত্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।