Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের সাথে বর্বর আচরণ

প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবদুল লতিফ নেজামী
সূচনা : মিয়ানমারের পোড়ামাটি নীতির ফলে ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত জনপদ আরাকান এখন জ্বলছে। অবরুদ্ধ আরাকান জুড়ে রোহিঙ্গা শিশু আবাল-বৃদ্ধ বণিতার লাশ আর লাশ। লাশের মিছিলে প্রতি মুহুর্তে যোগ হচ্ছে নতুন লাশ। আরাকানে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিশ^ মোড়লদের দ্বৈতনীতি, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের নিষ্ক্রিয়তা ও আধিপত্যবাদী মিয়ানমারের আগ্রাসী নীতির ফলে রোহিঙ্গা জনগণ আজ অসহনীয় অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বসবাস করেও আরাকানের মুসলমানরা আজো পরদেশী। তারা নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন। তাদের নির্মূলন এখন মিয়ানমারের নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মিয়ানমারের ইতিহাস : দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত মিয়ানমারের এলাকা হচ্ছে ২,৬১,৯৭০ বর্গমাইল এবং লোকসংখ্যা পাঁচ কোটির ওপর (৫২ মিলিয়ন)। মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বৃটেন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। মিয়ানমারে ১৪০টি জাতিগত গোষ্ঠি রয়েছে। তবে মিয়ানমারের মুসলমানরা দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠি। এদের সংখ্যা ৭০ লাখ থেকে এক কোটি। মিয়ানমারের প্রায় সকল ছোট বড় শহরেই মুসলমানদের বসবাস লক্ষ্য করা যায়।
আরাকানের ইতিহাস : ২০ হাজার বর্গমাইল এলাকা সম্বলিত আরাকান আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে আরব, ডাচ, পর্তূগীজ এবং বৃটিশদের কাছে অতি পরিচিত। বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে রয়েছে আরাকানের সীমান্ত। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে আরাকান কখনো সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে মিয়ানমারের অংশ ছিল না। ১৮২৪ সালে বৃটিশ-বার্মা যুদ্ধে আরাকান বৃটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। আরাকান (সাবেক রোহাঙ্গ, রোশাঙ্গ, রাখাইন, রাখ্যাপুরা) মিয়ানমারের উত্তর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। এর রয়েছে ৩৬০ মাইল উপকূলীয় এলাকা। বর্মিরাজা বুদাপাওয়া কর্তৃক ১৭৮৪ সালে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ত করার আগ পর্যন্ত আরাকান স্বাধীন ছিল। কিন্তু ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভের সময় বৃটেন আরাকানের সার্বভৌমত্ব রেঙ্গুনের কাছে ন্যস্ত করে। জাতিসংঘের ১৫১৪-ঢঠ প্রস্তাব মোতাবেক, আরাকানের সার্বভৌমত্ব বার্মা ইউনিয়নের কাছে ন্যস্ত করা ছিল অবৈধ। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার আরাকানকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে ১ ডিক্রি বলে জেনারেল নে উইনের নেতৃত্বাধীন সামরিক জান্তা সরকার আরাকানের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করে। এককালের স্বাধীন-সার্বভৌম আরাকান প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাস বেশি। আর আরাকান মিয়ানমারের অংশ নয়। স্বাধীনতা প্রদানকালে বৃটিশ সরকার আরাকানকে স্বায়ত্তশাসনসহ মিয়ানমারের সাথে সংযুক্ত করে দিয়ে যায়। কিন্তু জেনারেল নে উইনের সামরিক সরকার ১৯৬২ সালে আরাকানের স্বায়ত্তশাসন রহিত করে এবং পরে মুসলমানদের বহিরাগত হিসেবে গণ্য করে তাদেরকে শুধু দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণতই করেনি বরং মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বৃদ্ধি করে, যাতে মুসলমানরা সেদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, যা আজো অব্যাহত আছে।
আরাকান প্রদেশে মুসলিম সম্প্রদায় : আরাকানে রাখাইনদের পরেই মুসলমানদের অবস্থান। বিগত দিনে জাতিগত দাঙ্গা সংঘটিত হওয়ার ফলে আরাকান ক্রমবর্ধমানহারে মিডিয়ার দৃষ্টি আর্কষণ করতে থাকে। দুর্ভাগ্যজনক এই যে, আরাকান প্রদেশে বিগত শতাব্দির শেষ দিকে মুসলিম ও অমুসলিদের মধ্যে সম্পর্কের অবণতি ঘটে। ২০ লাখেরও বেশি মুসলমানদের উপস্থিতি সত্ত্বেও আরাকান প্রদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী সম্পর্কে বাইরের মানুষের খুব কমই জানা আছে। মুসলিমরা ৪টি গ্রুপে বিভক্ত। যথা : তাম্মুকিয়াস, তুর্কি-পাঠান, কামানচিস এবং রোহিঙ্গা। তাম্বুকিয়াসরা অষ্টম শতাব্দিতে আরব থেকে আরাকানে আসে রাজা মাহা তায়েঙ্গ চন্দ্রের আমলে (৭৮৮-৮১০)। তুর্কি-পাঠান জনগোষ্ঠিকে আরাকানের শহরতলীতে দেখতে পাওয়া যায়। আরাকানের রাজা মং-স মওন ওয়ার নরমেখলা (১৪০৩-৩৩) তার সিংহাসন পুনরুদ্ধার করে বাংলার সৈনিকদের সহায়তায়। এই রাজাই তাম্বুকিয়াসদের আরাকানে বসবাসের অনুমতি দেয়। কামানচিসরা আসে শাহ সুজার সাথে (১৬৩৯-৫৯)। রোহিঙ্গাদের পূর্ব পুরুষ হচ্ছে আরব, তুর্কি, ইরানী, পাঠান, মোগল, বাঙ্গালী এবং ইন্দো-মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত কিছু জনগোষ্ঠি। রোহিঙ্গারা ধর্মে মুসলমান তাদের রয়েছে পৃথক সংস্কৃতি ও সভ্যতা।
তাছাড়া সপ্তম শতাব্দিতে রোহান অথবা রোহাঙ্গ নামক মুসলিম অভিযাত্রীরা আরাকান প্রদেশের বর্তমান উত্তরাঞ্চল জয় করে। বলা হয়ে থাকে পশ্চিম দিক থেকে যা বর্তমান বাংলাদেশের ১১জন বাঙ্গালী জেলে রাজধানী আকিয়াবসহ আরাকান প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। আকিয়াবের বর্তমান নাম হচ্ছে “ছিটউই” আরাকান প্রদেশের রোহিঙ্গারা প্রাচীন কালের রোহানদের সাথে রক্তের সম্পর্ক দাবি করলেও এবং মিয়ানমারে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে বসবাস করে আসলেও সেখানে আজো মুসলমানদের বহিরাগত মনে করা হয়। এমনকি রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে বলা হয়, আরাকানের অধিকাংশ মুসলিম অধিবাসীরা নাকি বাংলা থেকে এসেছে এবং আন্তঃবিবাহের মাধ্যমে বর্তমান মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশে গেছে। মিয়ানমার সামরিক সরকার মুসলমানদের বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরকে সেখানে অবস্থান করতে দিতে অস্বীকার করে। মিয়ানমারের সামরিক সরকার ও সাধারণ নাগরিকরা গড়ে সবাই মুসলমানদের “কালাহ” বা বিদেশী বলে আখ্যায়িত করে। প্রকৃতপক্ষে আরাকানী মুসলমানরা বিগত ১৪০০বছর এই অঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত। রোহান বা রোহাঙ্গ নামে পৃথিবীতে অন্য কোন স্থান বা এলাকা নেই।
আরাকানের মুসলমান অধিবাসীরা নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি সমস্যায় ভুগছে। মিয়ানমার অধিবাসীদের নাগরিকত্ব নির্ধারণকল্পে ১৯৭৭ সালে নাগামিন সরকারি অভিযান চলাকালে মুসলিম জনতা দেশ ত্যাগের চাপের সম্মুখীন হয়। আরাকান প্রদেশে এই অভিযান চলাকালে সামরিক ও বেসামরিক উভয় দিক থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ শুরু হয়। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারে বসবাসকারী বহু মুসলমান নাগরিকত্বের প্রশ্নে হুমকির সম্মুখীন হয়। কারণ আইনে বৃটিশ দখলদারিত্বের আগের পূর্ব পুরুষদের সাথে সম্পর্কের যোগসূত্রের প্রমাণ দেয়ার কথা বলা হয় পূর্ণ নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে। এই আইন কেবল মুসলমানদের জন্যে বলবৎ করা হয়। অন্যদিকে স্যান, চিন, কারেন, রাখাইন এবং বারমনদের ক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগ করা হয়নি।
মিয়ানমারে নৃতাত্ত্বিকতার অজুহাতে আদমশুমারিতে মুসলমানদের রোহিঙ্গা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। মিয়ানমার সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক নাগরিকত্ব আইনের মারাত্মক লংঘন। নৃতাত্ত্বিকতার ধুয়া তুলে আদমশুমারিতে মুসলমানদের রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত না করার যুক্তি ধোপে টেকে না। কেননা নাগরিকত্বের শর্ত শুধু একই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হওয়া নয়। বিশ্বের কোন দেশের লোকজন সবাই একই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয়। মুসলমানরা মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার এক ষষ্ঠমাংশ। ৬ষ্ঠ শতাব্দি থেকে মুসলিম জনগণ মিয়ানমারের শহর-বন্দর-গ্রামে বসবাস করে আসছে। মুসলমানসহ মিয়ানমারে ১৩৮টি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা সবাই একই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই নৃতাত্ত্বিকতার অজুহাতে রোহিঙ্গা হিসেবে মুসলমানদের আদমশুমারিতে তালিকাভুক্ত না করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মেনে নেবে না।
সাম্প্রতিককালে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠির গায়ে মুসলিম বিরোধী মানসিকতার ধাক্কা লাগে। ৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম ১৯৭০ এবং ১৯৯০এর শেষের দিকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। যদিও তাদের কাছে আরাকানের অধিবাসী হিসেবে প্রমাণের দলিল-দস্তাবেজ মজুদ ছিল। কিন্তু তাদের কোন কথাই শোনা হয়নি। তাই তাদের ওপর আরোপিত চাপকে তাদের পক্ষে অগ্রাহ্য করা সম্ভব হয়নি। বাঙ্গালী মুসলমানরা প্রথম আরাকানের বাসিন্দা এবং এখনো তারা প্রতিনিধিত্বশীল। উপনিবেশ যুগের ক্ষোভ এখনো সকল মুসলিমদের মাথার ওপর ঝুলছে। কারণ তাদেরকে প্রতিবেশী (বাংলাদেশ) দেশের জনগণের সাথে সমগোত্রীয় হিসেবে দেখা হয়। বৌদ্ধ, আরাকানি, মঘ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যবোধ এবং ধর্মীয় উত্তেজনা এই ক্ষোভকে কেবল বাড়িয়ে তুলছে। আর ফলত এটাই বিরোধের মূল কারণ।
বাংলাদেশের সাথে আরাকানের সম্পর্ক : ১৪০০ শতাব্দিতে বাংলার মুসলিম সুলতানদের আমলে বাংলাদেশের সাথে আরাকানের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ সাধিত হয়। আরাকানের অনেক বৌদ্ধ শাসক মুসলিম নাম গ্রহণ করে মুসলমানদের সরকারী পদে নিয়োগ করেন। এমনকি পবিত্র কালিমা খচিত মুদ্রা প্রচলন করেন। আরাকানী আদালতে ইসলামী নিয়ম-কানুন চালু করেন। বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত সম্পৃক্ততার কারণে আরাকান বাংলার সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় সুদূর অতীতকাল থেকে। আরাকানের রাজ সভায় বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। এ ক্ষেত্রে কবি আলাউল ও দৌলতকাজীর নাম বিশেভাবে প্রণিধানযোগ্য।
আরাকানে মুসলমানদের হয়রানি : ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন কর্তৃক মিয়ানমারকে সামরিকীকরণ ও মিয়ানমারিকরণ শুরু হওয়ার পর থেকেই জনমনে সন্দেহ ঘণীভূত হয়। বিভিন্ন ধর্মবলম্বীদের মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার পর মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সেই সময় থেকে কোন মুসলমানকে মিয়ানমার সরকারের উচ্চ পদে নিয়োগদান করা হয়নি এবং সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত অনেক মুসলমানকে বরখাস্ত করা হয়। মিয়ানমার নাগরিকদের পরিচয়ের জন্যে সরকারের পক্ষ হতে সাধারণ নাগরিকদের গোলাপী রংয়ের পচিয়পত্র দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলে ও সত্যি যে, মুসলমানদের সাদা রংয়ের অস্থায়ী নাগরিক পরিচয়পত্র দেয়া হয়। মুসলমানদের নাগরিক অধিকার ও সীমিত করা হয়। কোন মুসলমানকে বাসস্থান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করতে দেয়া হয় না। আরাকানে মুসলমানদের বাজার করারও সুযোগ দেয়া হয় না। মিয়ানমারের কলেজ, ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে উচ্চ শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে মুসলমান ছাত্ররা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ও একই বৈষম্য বিদ্যমান। সরকার রোহিঙ্গাদের মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জায়গা-জমি কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকেই দখল করে নেয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন কারণে সামরিক জান্তা মুসলমানদের বাড়ি-ঘর এবং তাদের জমি-জিরাত ত্যাগ করতে বাধ্য করে।
মিয়ানমারে দাঙ্গা : ২০০১ সালের প্রথমার্ধ মুসলিম-বৌদ্ধ জাতিগত দাঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত। ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি আরাকানের রাজধানী ছিটউইয়ে (আকিয়াব) মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা সংঘটিত হয়। দাঙ্গা চলাকালে নিরীহ মুসলিম যুবক এবং অসহায় মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই দাঙ্গায় ১৫০০জন গুম এবং ১০০০ লোক আহত হয়। মুসলমানদের মালিকানাধীন ২ হাজার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং ৩৭টি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। তাছাড়া বহু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং জনসাধারণের সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই বছর ১৬ মে বাগা বিভাগে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এতে ৪জন বিশিষ্ট মুসলিম নেতাসহ কমপক্ষে এক শো মুসলমান নিহত হয়। ২০টি মসজিদ এবং হাজার হাজার বাড়িঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ঐ বছর মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা অন্য আরো ৩টি জেলায় বিস্তৃত হয়ে পড়ে। ঐ দাঙ্গায় ৩শ’ লোক নিহত এবং অপর ১০হাজার লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে। এসব দাঙ্গায় সরকারি সংশ্লিষ্টতার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়া মিয়ানমারের ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন-এর সদস্যরাও সন্নাসী বেশে এসব দাঙ্গায় ইন্ধন যোগায়। দাঙ্গা দমনে বিলম্বে গৃহিত সরকারি পদক্ষেপ ছিল নেহায়েতই লোক দেখানো এবং খুবই নগন্য। আরাকানের রাজধানী ছিটউইয়ে অগ্নি˜গ্ধ কতিপয় বাড়িঘর স্থানীয় থানার একশ’ মিটারেরও কম দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত।
(চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গাদের সাথে বর্বর আচরণ
আরও পড়ুন