পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রমজানের আগে ভোজ্যতেলসহ কিছু পণ্যের শুল্ক কমানো, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাক্সফোর্স গঠন, কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্যবিক্রি এবং কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হয়। পবিত্র রমজান মাসে দেশের রোজাদারগণ পণ্যের জন্য যেন ভোগান্তিতে না পড়েন সে জন্যই এত উদ্যোগ। কিন্তু রোজায় কোনো পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। রমজান মাসে বাজারে যেন প্রতিটি পণ্যের মূল্যে আগুন লেগেছে। এক হালি লেবুর দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআইকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তারা কেউ কথা রাখেননি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করেও লাভ হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য, খাদ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বাজারসংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়হীনতার কারণে পণ্যমূল্যে এই অরাজকতা তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, দেশে খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ে স্পষ্ট কোনো সরকারি পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। বেসরকারি যেসব তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলোও পর্যাপ্ত নয়। আর সরকারের দায়িত্বশীলরা সেগুলোকে পাত্তা দেন না। তথ্যের অভাব বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির পথে বড় ধরনের বাধা তৈরি করছে। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির পরও জাতীয় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির দাবি, ভোজ্যতেলসহ অন্য নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে দেশে তেলের দাম বেড়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের যথাযথ এবং সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে দাম কমে আসতে শুরু করেছে। অবশ্য গতকাল এ নিয়ে সংসদে ক্ষোভের মুখে পড়েন বাণিজ্যমন্ত্রী। অন্যান্য সংসদ সদস্যের মতে, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সিন্ডিকেট মূল্যবৃদ্ধি করতে পারে না। এদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সরকার যথেষ্ট উদ্বিগ্ন বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। মূল্য বাড়াতে কেউ কারসাজির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বিষয়টি স্বীকার করে নীতিনির্ধারকরাও বলছেন, তদারকিতে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর সমন্বয় করা গেলে খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হতো। যদিও শুধু খাদ্য পণ্যের দামই নয়; বাড়ছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। তেল ও চালের মতো ক্রেতার নাগালে নেই সাবান, ডিটারজেন্ট, এরোসল, টুথপেস্ট, টিস্যু, স্যাম্পুর মতো অনেক সামগ্রীও। এমনকি বেড়েছে আটা-ময়দার দামও। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তার ত্রাহি অবস্থা। আয় না বাড়লেও লাফিয়ে বাড়ছে পণ্যমূল্য। নানামুখী উদ্যোগেও ফিরছে না স্বস্তি।
এদিকে রমজানকে কেন্দ্র করে বেগুন, শসা, লেবুসহ বেশ কয়েকটি সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। তারা বলছেন, প্রতি বছর নিয়ম করেই বাড়ানো হয় দাম, তবে এবার অন্য শাকসবজির দাম কয়েক মাস ধরে বেশি ছিল। এবার রমজান সামনে রেখে আরেক দফায় বাড়ানো হলো দাম। তবে বিক্রেতাদের কেউ কেউ বলছেন, তাদের সরবরাহকারীরা দাম বাড়িয়েছেন। ফলে তাদেরও বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। যদিও সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই বলে দাবি করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, দেশি মসুরের ডালের কেজি ১২৫-১৩০ টাকা। এ ছাড়া মোটা দানার মসুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮০ টাকা। বেড়েছে খেজুরের দামও। মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বুটের ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। আর খেসারির ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। এদিকে আরেক দফা বেড়েছে মুরগি ও গরুর গোশতের দাম। সোনালিকা মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহ ছিল ২৮০ টাকা কেজি। গরুর গোশতের দাম উঠেছে ৬৫০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা দাম বাড়েনি বা নিয়ন্ত্রণে আছে ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসছে না পণ্যমূল্য। বাজার জুড়েই অস্বস্তি ও দীর্ঘশ্বাস। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে উদ্যোগ আছে, কিন্তু সুফল মিলছে না। তাই ভোক্তা স্বার্থ সুরক্ষায় আরো নতুন কৌশল গ্রহণ করা দরকার। তবে এ নিয়ে কাজ চলছে উল্লেখ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি দরকার। তারা যৌক্তিক লাভ করবে সেটাই আমরা চাই। তবে এ জন্য কেউ যদি ম্যানিপুলেট করে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন বাজারে গিয়ে জরিমানা করা বা আইনি প্রক্রিয়া আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। অর্থাৎ আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৪৬টি পণ্য সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কি-না তা তদারকি করবে কমিটির সদস্যরা। এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর, সরবরাহ পরিস্থিতি, উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারদর সংগ্রহ ও পর্যালোচনা ও সরেজমিনে বাজার পরিদর্শন করবেন এই কমিটির সদস্যরা।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাজারে প্রতিটি পণ্যের মজুদ চাহিদার চেয়ে বেশি। ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, সোলা, মসলাসহ সব পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। স্থিতিশীল রয়েছে দামও। সয়াবিন তেল নতুন করে কমিয়ে নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রয় হচ্ছে। সরকার যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর থেকে ট্যাক্স এবং ভ্যাট কমিয়েছে, তার সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন। বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ টাস্কফোর্স গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। বাজার অভিযান জোরদার করা হয়েছে, অনিয়ম হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষের সুফল ভোক্তা পাচ্ছে।
যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে কঠোর বাজার মনিটরিং করা কথা বলা হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে প্রশাসন। দাম বাড়াতে তৎপর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে রমজান মাসজুড়ে বাজার তদারকি করবে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। পুরো মাস বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮টি মনিটরিং টিম বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবে। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি ও অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থাকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ঢাকা সিটি করপোরেশন, র্যাব, নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর এবং জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করবে।
প্রথম রোজায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটে আকস্মিক সফরে যান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের নিম্নআয়ের এক কোটি পরিবারকে বিশেষ কার্ড দিয়ে টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেয়া হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত রমজান মাস সামনে রেখে চিনি বিক্রির আগ্রহ দেখিয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে। ভোজ্যতেলের দাম কমাতে তিন স্তরে ৩০ শতাংশ ভ্যাট কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মসুর ডালের আমদানি ও মজুদ সন্তোষজনক। রোজা সামনে রেখে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, প্রতি বছর বিভিন্ন উৎসবের সময়ে দেশের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। একই চিত্র দেখা যায় আমদানি পণ্যের উৎস দেশগুলোর বাজার পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও। এসব ক্ষেত্রে বিশেষ করে গম, তেল ও পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে লাগামহীনভাবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকেও (টিসিবি) তৎপরতা বাড়াতে হয়। প্রতি বছর শুধু বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েই সংস্থাটির ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকার মতো। আবার ওএমএসে চাল বিতরণসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও বাজারে এসব কর্মযজ্ঞের শক্ত প্রভাব দেখা যায় খুব কম।
এদিকে রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার ১৭ সদস্য বিশিষ্ট টাক্সফোর্স গঠন করেছে। এর নেতৃত্বে আছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। টাস্কফোর্সের সদস্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বলেন, দেশি এবং আমদানি করা কোনো ধরনের পণ্যের বাজারেই যাতে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে অথবা পণ্যের দাম কেউ বাড়াতে না পারে সেটাই আমরা প্রধানত দেখছি।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠন করা টাস্কফোর্স কতটা কার্যকরভাবে কাজ করে তার ওপর নির্ভর করছে রমজানে বাজার কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রথমে সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। সমস্যাকে সমস্যা মনে না করলে তো কাজে গতি আসবে না। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আছে। বাজার মনিটরিং-এর জন্য টাস্কফোর্স আগেও করা হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যন্ত কমিটি আছে। মনিটরিং তো হচ্ছে না। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা শহরে বাজার মনিটরিং-এর জন্য ১৬টি টিম আছে। আমরা একটি টিমও বাজারে দেখছি না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।