Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনগণের ভোট বেশি পেয়েও হেরে গেলেন হিলারি, পিছিয়ে থেকেও জিতলেন ট্রাম্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জটিলতাপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ব্যবস্থা

প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৭ পিএম, ১১ নভেম্বর, ২০১৬

ওয়াইবিএফ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে একটি বিপর্যয়কর ঘটনা বললেও কম বলা হবে। এই নির্বাচন শেষ হয়েছে। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ ও আরো অনেক জটিল বিভাজন এবং পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ায় আমেরিকান ভোটাররা তাদের ভোট দেয় যা আপনাকে একটা ধাক্কা দিতে পারে অথবা আপনি হয়তো এই দৃশ্যকল্প প্রত্যাশা করে থাকতে পারেন। এটা বিস্ময়কর যে ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী হিলারি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট বেশি পেয়েও নির্বাচিত হতে পারেননি। অথচ তার চেয়ে কম ভোট পেয়েও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জিতে গেলেন।
মার্কিন ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন্যতম একটি বড় বিপর্যয়কর ঘটনা হলো যে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছেন এবং তিনিই এখন আমাদের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এতে আপনি যতই আহত হোন না কেন এটাই সত্যি। এটা উল্লেখের প্রয়োজন নেই যে এই নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে রিপাবলিকানরা এখন একচ্ছত্রভাবে কংগ্রেস পরিচালনা করবেন। তারাই এখন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে নেতৃত্ব দেবেন।
কেমন করে ট্রাম্প নির্বাচিত হলেন
বিস্ময়করভাবে ট্রাম্প ৩০৬টি ইলেক্টোরাল ভোট নিজের কব্জায় নিয়ে নেন। যদিও ফল প্রকাশের আগে সারারাত এটা ছিল এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই যা আমাদের আশাবাদকে জিইয়ে রেখেছিল। অনেক দোদুল্যমান রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ছিল দশমিক শূন্য এক শতাংশ থেকে এক শতাংশের মধ্যে। এই নির্বাচনের বিস্ময় হচ্ছে ট্রাম্পের প্রতি প্রচুর নীরব সমর্থন ছিল যা আগে অনুমান করা যায়নি। এটা আশ্চর্যজনক নয় যে শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে ট্রাম্প এবং হিলারির পক্ষে পড়েছে ৩৭ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ভোট। ইলেক্টোরাল কলেজ গঠনে শ্বেতাঙ্গ ভোটেরই প্রাধান্য। ৬৯ শতাংশ ইলেক্টোরাল কলেজ গঠিত হয় শ্বেতাঙ্গ ভোটেই।
এই জটিল ও বিভাজন প্রক্রিয়ায় দেখা যায় যে লিঙ্গ ভিত্তিতে হিলারি পুরুষদের ভোট পেয়েছেন ৪১ শতাংশ আর নারীদের ভোট পেয়েছেন ৫৪ শতাংশ। নারী ভোট তার আরও বেশী পাওয়া উচিত ছিল। ট্রাম্প পুরুষ ভোট পেয়েছেন ৫৩ শতাংশ এবং নারী ভোট পেয়েছেন ৪২ শতাংশ। অথচ ধারণা করা হয়েছিল যে মহিলাদের ভোট তিনি আরো অনেক কম পাবেন।
জাতি-বর্ণভিত্তিক ভোট
শ্বেতাঙ্গদের ভোট হিলারি পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৫৮ শতাংশ। কৃষ্ণাঙ্গদের ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি আর ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট পেয়েছেন মাত্র ৮ শতাংশ। হিলারি হিসপানিক/ল্যাটিনো ভোট পেয়েছেন ৬৫ শতাংশ এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ২৯ শতাংশ। এশিয়ানদের ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি আর ট্রাম্প এশিয়ান ভোট পেয়েছেন ২৯ শতাংশ। অন্যান্য গোষ্ঠির ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ।
বয়স গ্রুপভিত্তিক ভোট
১৮ থেকে ২৯ বয়স গ্রুপের মধ্যে হিলারি পেয়েছেন ৫৫ শতাংশ এবং ট্রাম্প এই গ্রুপের ভোট পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ। ৩০ থেকে ৪৪ বছর গ্রুপের ভোট হিলারি পেয়েছেন ৫০ শতাংশ আর এই গ্রুপের ভোট ট্রাম্প পেয়েছেন ৪২ শতাংশ। ৪৫ থেকে ৬৪ বছর বয়স গ্রুপে ভোট হিলারি পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ এবং এই গ্রুপের ভোট ট্রাম্প পেয়েছেন ৫৩ শতাংশ। ৬৫ বছর ও তদুর্ধ বয়স গ্রুপের ভোট হিলারি পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৫৩ শতাংশ।
শিক্ষাস্তর ভিত্তিক ভোট
হাইস্কুল বা তারচেয়ে কম পড়–য়া ভোটারদের মধ্যে হিলারি পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৫১ শতাংশ ভোট। কলেজ পড়–য়া বা সমপর্যায়ের ডিগ্রি পড়–য়াদের ভোট হিলারি পেয়েছেন ৪৩ শতাংশ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫২ শতাংশ। কলেজ গ্রাজুয়েটদের ভোট হিলারি পেয়েছেন ৪৯ শতাংশ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ। পোস্টগ্রাজুয়েটদের ক্ষেত্রে হিলারি পেয়েছেন ৫৮ শতাংশ এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ।
শ্বেতাঙ্গ নারীদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ ভোট দিয়েছেন ট্রাম্পকে আর ৪৩ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ নারী ভোট দিয়েছেন হিলারিকে। কৃষ্ণাঙ্গদের ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি। তিনি মিলেনিয়ালের প্রায় অর্ধেক ভোট ভোটও পেয়েছেন। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে যে নির্বাচনে হারার জন্য কেবলমাত্র কৃষ্ণাঙ্গদের দায়ী করা উচিত হবে না যদিও কিছু কিছু মিডিয়া আফ্রিকান-আমেরিকানদের দিকে আঙ্গুল তোলার চেষ্টা করেছিল। সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে অনেক শ্বেতাঙ্গ নারী ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে। নারীদের নিয়ে কুৎসিত, নোংরা ও জঘণ্য সব মন্তব্য করায় ধারণা করা হয়েছিল যে ট্রাম্প নারীদের ভোট তেমন পাবেন না। কেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ট্রাম্পকে ভোট দিলেন তা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবা উচিত।
বর্ণভিত্তিক শিক্ষিত শ্রেণীর ভোট
শ্বেতাঙ্গ কলেজ গ্রাজুয়েটদের মধ্যে হিলারির বাক্সে ভোট পড়েছ ৪৫ শতাংশ আর ট্রাম্প তাদের ভোট পেয়েছেন ৪৯ শতাংশ। কলেজ ডিগ্রিবিহীন শ্বেতাঙ্গদের ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৬৭ শতাংশ ভোট। অশ্বেতাঙ্গ কলেজ গ্রাজুয়েটদের ৭১ শতাংশের ভোট পেয়েছে হিলারি আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩ শতাংশ। কলেজ ডিগ্রিবিহীন অশ্বেতাঙ্গদের মধ্যে হিলারি ভোট পেয়েছেন ৭৫ শতাংশ এবং ট্রাম্প তাদের ভোট পেয়েছেন ২০ শতাংশ।
আয় গ্রুপ ভিত্তিক ভোট
বছরে ৩০ হাজার ডলারের কম আয় লোকদের ৫৩ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি এবং তাদের ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। ৩০ হাজার থেকে ৪৯ হাজার ৯৯৯ ডলারের মধ্যে যাদের আয় তাদের ৫১ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি এবং ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছে ট্রাম্প। ৫০ হাজার থেকে ৯৯ হাজার ৯৯৯ ডলারের মধ্যে যাদের আয় তাদের ৪৬ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি এবং তাদের ৫০ শতাংশের ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। এক লাখ থেকে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ ডলারের মধ্যে যাদের আয় তাদের ৪৭ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৮ শতাংশের ভোট। ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯৯ ডলার পর্যন্ত যাদের আয় তাদের ৪৮ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি এবং তাদের ৪৯ শতাংশের ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। আড়াই লাখ বা তারচেয়ে বেশী যাদের আয় তাদের ৪৬ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৮ শতাংশ ভোট।
রেসিডেন্স ভিত্তিক ভোট
৫০ হাজার বাসিন্দার বেশী শহরগুলোতে হিলারি পেয়েছেন ৫৯ শতাংশ ভোট আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৫ শতাংশ ভোট। শহরতলীগুলোতে হিলারি পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৫০ শতাংশ ভোট। ক্ষুদ্্র শহর বা পল্লী এলাকায় হিলারি পেয়েছেন ৩৪ শতাংশ ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৬২ শতাংশ ভোট।
দলীয় সমর্থক ভিত্তিক
ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের ৮৯ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৯ শতাংশ। রিপাবলিকান সমর্থকদের ৭ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৯০ শতাংশ ভোট। স্বতন্ত্র ও অন্যান্যদের ৪২ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৮ শতাংশ।
এমএসএনবিসি’র বিশ্লেষণ অনুযায়ী কলেজের ডিগ্রিধারী শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের ৪৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ট্রাম্পের বাক্সে। তাদের ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি। আগে আভাস দেয়া হয়েছিল যে কলেজের ডিগ্রিবিহীন শ্বেতাঙ্গ ভোটাররা বিপুলভাবে ট্রাম্পকে ভোট দেবেন এবং এটা ৬৭ শতাংশের মতো হতে পারে। ল্যাটিনোদের মধ্যে ২৯ শতাংশ ভোট দিয়েছে ট্রাম্পকে যা বিস্ময়কর। কারণ গোটা নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পকে ল্যাটিনোদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন। তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন। ধারণা করা হয়েছিল যে ট্রাম্প ল্যাটিনোদের ভোট মোটেই পাবেন না।
ধর্মীয় ভিত্তিতে ভোট প্রদানের প্যাটার্ন
প্রোটেস্ট্যান্ট বা অন্যান্য খ্রিস্টান ভোট হিলারি পেয়েছেন ৩৯ শতাংশ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫৮ শতাংশ। ক্যাথলিকদের ভোট হিলারি পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ, ট্রাম্প পেয়েছেন ৫২ শতাংশ। ইহুদীদের ভোট হিলারি ৭১ শতাংশ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২৪ শতাংশ। অন্যান্য ধর্মের লোকদের ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২৯ শতাংশ। ধর্মহীন লোকদের ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২৮ শতাংশ ভোট। শ্বেতাঙ্গ এভানজেলিক্যালদের সমর্থন হিলারি পেয়েছেন ১৬ শতাংশ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৮১ শতাংশ। শ্বেতাঙ্গ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে পুনরায় খ্রিস্ট-ধর্মে দীক্ষা লাভকারীদের সমর্থন হিলারি পেয়েছেন ৫০ শতাংশ, ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৫ শতাংশ। সপ্তাহে একবার বা একাধিকবার চার্চে যায় এমন লোকদের ভোট হিলারি পেয়েছেন ৪০ শতাংশ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫৬ শতাংশ। মাসে কিছু সময় চার্চে যায় তাদের ৪৬ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ শতাংশ। বছরে কয়েকবার চার্চে যায় এমন লোকদের ৪৮ শতাংশের ভোট পেয়েছেন হিলারি আর তাদের ৪৭ শতাংশের ভোট পেয়েছে ট্রাম্প। যারা কখনো চার্চে যায় না তাদের ৬২ শতাংশের ভোট হিলারি আর ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। বিবাহিতদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ সমর্থন করেছে হিলারিকে আর ট্রাম্পকে সমর্থন করেছে ৫৩ শতাংশ। গে, লেসবিয়ান, উভগামী, বা লিঙ্গ পরিবর্তনকারীদের সমর্থন হিলারি পেয়েছেন ৭৮ শতাংশ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ১৪ শতাংশ। লিঙ্গ পরিবর্তনকারীদের ৪৭ শতাংশ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে হিলারির প্রতি আর ট্রাম্পের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছে ৪৮ শতাংশ।
ডেমোক্র্যাটদের ৫৯ শতাংশ মনে করে আমেরিকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আগামী দিনগুলো ভালো হবে আর রিপাবলিকানদের একই রকম মনোভাব ৩৮ শতাংশের। এখন থেকে অবস্থা খারাপ হবে এমন মনোভাব পোষণ করে ৩১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানদের মধ্যে এটা ৬৩ শতাংশ। পরিস্থিতি একই থাকবে এমন মনোভাব পোষণ করে ৫৪ শতাংশ ডেমোক্র্যাট। রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৩৯ শতাংশ।
মার্কিন চাকরির বাজারে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের প্রভাব সম্পর্কে ৫৯ শতাংশ ডেমোক্র্যাট মনে করে এতে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। রিপাবলিকানদের মধ্যে অনুরূপ মনোভাব পোষণ করে ৩৯ শতাংশ। কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে মনে করে ৩১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানদের ৬৫ শতাংশ মনে করে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এর কোন প্রভাব নেই মনে করে ৬৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানদের অনুরূপ মনোভাব হচ্ছে ৩০ শতাংশের।
যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত অধিকাংশ অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কি করা উচিত এমন প্রসঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের ৬০ শতাংশ মনে করে যে তাদের বৈধ হওয়ার সুযোগ করে দেয়া আর অনুরূপ মনোভাব রিপাবলিকানদের ৩৪ শতাংশের। ১৪ শতাংশ ডেমোক্র্যাট মনে করে যে তাদের বের করে দেয়া উচিত আর তাদের বের করে দেয়ার পক্ষে বলেছেন ৬৫ শতাংশ রিপাবলিকান।
অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে মেক্সিকোর সঙ্গে মার্কিন সীমান্ত বরাবর দেয়াল করা উচিত এটা সমর্থন করে ১০ শতাংশ ডেমোক্র্যাট আর ৮৬ শতাংশ রিপাবলিকান দেয়াল নির্মাণ সমর্থন করে।
মার্কিন ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম উৎসাহব্যাঞ্জক বলেছেন ৭৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট, সন্তোষজনক বলেছেন ৭৫ শতাংশ, অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৪৫ শতাংশ আর ক্ষোভ প্রকাশ ১৮ শতাংশ। অপরদিকে রিপাবলিকানদের মধ্যে উৎসাহব্যাঞ্জক নয় মনে করে ২০ শতাংশ, সন্তোষজন নয় মনে করে ২০ শতাংশ, অসন্তোষজনক মনে করে ৫৯ শতাংশ আর ক্ষুব্ধ ৭৭ শতাংশ।
ভোটারদের মধ্যে ৫০ হাজার ডলারের কম উপার্জনকারীদের মধ্যে ৫২ শতাংশ ভোট দিয়েছে হিলারির বাক্সে। একই গ্রুপের ৪১ শতাংশ ভোট দিয়েছে ট্রাম্পকে। অপরদিকে বছরে ৫০ হাজার ডলারের বেশী আয়ের লোকদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ ভোট দিয়েছে ট্রাম্পকে আর হিলারিকে ভোট দিয়েছে ৪৭ শতাংশ।
ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের মধ্যে ৮২ শতাংশ মনে করে যে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের দক্ষতা হিলারির রয়েছে। হিলারির দক্ষতা রয়েছে রিপাবলিকানদের মধ্যে এমন মনোভাব রয়েছে ১৫ শতাংশের। হিলারির দক্ষতা নিয়ে সন্দিহান ৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাটআর রিপাবলিকানদের মধ্যে সন্দিহান ৮৯ শতাংশ। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনে ট্রাম্প দক্ষ এমনটা মনে করে ৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট আর ৯৪ শতাংশ রিপাবলিকান মনে করে ট্রাম্প এই দায়িত্ব পালনের যোগ্য। হিলারির সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে মনে করে ৯৪ শতাংশ ডেমোক্র্যাট আর হিলারির প্রতি অনুরূপ মনোভাব পোষণ করে রিপাবলিকানদের ৪ শতাংশ। ট্রাম্পের সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতি আস্থা রয়েছে ৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের মধ্যে আর রিপাবলিকানদের আস্থা রয়েছে ৯৪ শতাংশের।
এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে ট্রাম্পের বেশ কিছু সমর্থক ছিলে খুবই উচ্চকন্ঠ এবং তাদের এই চিন্তা-ভাবনার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে নির্বাচনে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ ভোটাররা হিলারিকে বেশী ভোট দিয়েছে। তিনি ট্রাম্পের চেয়ে পপুলার ভোট বেশী পেয়েছেন। গণনা শেষ হওয়ার আগেই ওয়াশিংটন পোস্টের হিসাব অনুযায়ী হিলারি পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮৩ হাজার ২৪৫ ভোট আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯২ লাখ ৯ হাজার ৮৫৪ ভোট। জনগণের সরাসরি ভোটে হিলারি পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ট্রাম্প ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এটা খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, তবে সুস্পষ্টভাবে হিলারি অগ্রগামী। তিনি জিতবেন এটাই পরিষ্কার ছিল। কিন্তু তিনি জিততে পারেননি। ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের জটিল প্রক্রিয়ার মারপ্যাঁচে হেরে গেছেন তিনি। আর জনগণের ভোটে পেছনে থেকেও ট্রাম্প জিতে গেলেন।
অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমন বিপর্যয়ের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। হিলারি হলেন পঞ্চম প্রার্থী যিনি জনগণের সরাসরি ভোটে এগিয়ে থেকেও নির্বাচিত হতে পারলেন না। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পঞ্চমবারের মতো এবং টানা দ্বিতীয়বারের মতো রিপাবলিকান প্রার্থী এ সুবিধা পেলেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যেক ভোটের সমান মূল্য থাকলেও মার্কিন নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেক্টোরাল সিস্টেমে তার সুষম ব্যবহার হচ্ছে না। এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার আনার দাবি উঠেছে।
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ ডেমোক্রেট প্রার্থী আল গোরের চেয়ে অন্তত পাঁচ লাখ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু আল গোরের চেয়ে পাঁচটি ইলেক্টোরাল ভোট বেশি পেয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেবার আল গোর পপুলার ভোট পেয়েছিলেন ৪৮.৪ শতাংশ কিন্তু বুশ পেয়েছিলেন ৪৭.৯ শতাংশ। ২০১৬ সালে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় নির্বাচনী ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক রবার্ট শাপ্রিও বলেন, এ প্যাঁচানো ব্যবস্থা নিয়ে যত সমালোচনা হবে, ততই এটা নির্মূলের জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করা যাবে। বতর্মান নির্বাচনী ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রতিটি রাজ্যে প্রত্যেক দলের পক্ষ কিছু ইলেক্টর মনোনয়ন দেয়া হয়, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। যে রাজ্যে যে দল বেশি ভোট পাবে, সেই রাজ্যের সবকটি ইলেক্টোরাল ভোট বিজয়ী দলের বলে গণ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ এবারের নির্বাচনে টেক্সাস রাজ্যের কথা ধরা যাক। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহৎ জনবহুল রাজ্য টেক্সাসে ৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। ট্রাম্প ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হওয়ায় পুরো ৩৮টি ভোটই তার পক্ষে গিয়েছে। কিন্তু হিলারি ক্লিনটন ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে একটাও ইলেক্টোরাল ভোটের অধিকারী হননি।
শাপ্রিও আরও বলেন, যদি সর্বোচ্চসংখ্যক জনগণের ভোট পেয়েও কোনো প্রার্থী পরাজিত হয়, তাহলে স্বভাবতই এ প্রশ্ন উঠবে- আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা কতটা গণতান্ত্রিক! ২০১২ সালে বারাক ওবামা পপুলার ও জনগণের ভোট দুটোতেই জয়ী হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্পের সেদিনের ভাষায় ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থার সুবাদে ট্রাম্প আজ নিজেই ত্রুটিপূর্ণ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সুবাদে জনগণের ভোটে পিছিয়ে থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন।
নির্বাচনপূর্ব সকল জরিপেই ট্রাম্প পেছনে ছিলেন। জনগণের সরাসরি ভোটেও জরিপের প্রতিফলনই ঘটেছে। কিন্তু নির্বাচনী ব্যবস্থার জটিলতা ও পদ্ধতিগত মারপ্যাঁচের কারণে পরাজিত প্রার্থীর চেয়ে কম ভোট পেয়েও তিনি হলে গেলেন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট।



 

Show all comments
  • Md.Shaheduzzaman ১২ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:২৬ এএম says : 0
    আমেরিকার ২৫ টি শহরে আগুন জ্বলছে।নির্বাচনের পরাজয় সহ্য করতে না পেরে হিলারিপন্থীরা জ্বালাও পোড়াও করছে।ক্যালিফোর্নিয়া হতে স্বাধীনতার ডাক এসেছে।মিডিয়া এটিকে ট্রাম্পবিরোধী সচেতন জনতার বিস্ফোরণ বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে।অথচ আজ যদি হিলারি জিতত এবং জ্বালাও পোড়াও চলত তখন এই মিডিয়াই বলত এটি উন্মাদ,বর্ণবাদী,নারীবিদ্বেষী, অসভ্য ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের ধ্বংসাত্নক ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপ।বড় অদ্ভুত এই বৈপরীত্য!
    Total Reply(0) Reply
  • Nomani ১২ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৫৩ এএম says : 0
    বিধি সংশোধন প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • md.norollah monohordi ১২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৩ পিএম says : 0
    tramp president howa mane mosolmander akashe kalo megh udhito howa ja musolmander nijer hater kamay allah taala amaderke eay ...... teke hefajot koruk amin
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনগণের ভোট বেশি পেয়েও হেরে গেলেন হিলারি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ