পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে দেশে প্রতিবাদ, উদ্বেগ। লন্ডনে মার্কিন দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ ঘিরে বিত-া। বার্লিনের পথে বিক্ষোভ। মরক্কোয় সম্মেলনে অংশ নেয়া পরিবেশকর্মীরাও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ট্রাম্পের এই জয়ে। নানা ধরনের সেøাগান। চোখা চোখা বাক্যে লেখা প্ল্যাকার্ড। সবই নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। শ’ দুয়েক মানুষ গত বৃহস্পতিবার লন্ডনের মার্কিন দূতাবাসের সামনে জড়ো হন। প্রতিবাদের নেতৃত্বে ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’ নামের সংগঠন। তারা ট্রাম্পের নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই সংগঠনের বক্তব্য, ‘আমেরিকার নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচার করেছেন ট্রাম্প। অসহিষ্ণুতাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন তিনি’। জমায়েতে হাজির ২৯ বছরের কেট সাম্পটারের মন্তব্য, ‘আমার বন্ধুদের অনেকে কৃষ্ণাঙ্গ, অনেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বী। আমি তাদের জন্য আতঙ্ক বোধ করছি’। ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’-এর সদস্যরা তাদের প্ল্যাকার্ডের ছবিতে ব্যঙ্গ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর খুশিতে উল্লসিত ট্রাম্পের মুখে হিটলারের গোঁফ এঁকে দেয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের আশঙ্কা, হিটলারের মতো জাতিবিদ্বেষের সংস্কৃতি নিয়ে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছেন। ময়া শোলনে নামের এক প্রতিবাদী বলেন, ‘আমি ইহুদি। ফ্যাসিবাদের শিকার আমরা। তাই ট্রাম্প আসায় মনে ভয় বাসা বেঁধেছে’।
সংখ্যায় কম হলেও ট্রাম্পের সমর্থকরাও পথে নেমেছেন। মর্কিন দূতাবাসের সামনে যখন বিক্ষোভ চলছে, তখন সেখানে ছিলেন ইংলিশ ডিফেন্স লিগের কয়েকজন সদস্য। চরম দক্ষিণপন্থী এই সংগঠনের সঙ্গে জাতিবিদ্বেষ বিরোধীদের বিত-া হয়। হাতাহাতিও হয়। এক প্রতিবাদী বলেন, ‘আমেরিকায় ডোনাল্ড বলে একটি হাঁস আছে। হাঁস ছাড়া আর কিছু থাকতে পারে না’। লীগের সদস্যরা ওই জমায়েত ভেস্তে দিতেই ঘটনাস্থলে হাজির হন। তাদের বক্তব্য, ট্রাম্প সব মার্কিনির প্রেসিডেন্ট। তিনি কাউকে আক্রমণ করতে চান না।
ইউরোপের অন্যত্রও প্রতিবাদ হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। জার্মানির বার্লিনে মার্কিন দূতাবাসের সামনে প্ল্যাকার্ড-সেøাগানে প্রতিবাদ করা হয়। একজন প্রতিবাদীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘পৃথিবীকে আবার সুন্দর করে তুলুন ভালোবাসা দিয়ে’। লক্ষ্য নিশ্চিতভাবে ট্রাম্প। বার্লিনের বিখ্যাত ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। সেখানে স্বাধীনতার ‘স্মরণে’ অভিনব প্রতিবাদ করা হয় মোমবাতি জ্বালিয়ে। মোমবাতির সামনে রাখা প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘ইন মেমোরি অফ ফ্রিডম’।
মরক্কোয় জাতিসংঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী পরিবেশকর্মীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্পকে নিয়ে। প্যারিসে আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তিকে ব্যঙ্গ করেছিলেন ট্রাম্প। তার কাছে এই সমঝোতা সারবত্তাহীন। আমেরিকাসহ আরো প্রায় ২০০টি দেশ এই চুক্তির অংশীদার। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই চুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন। পরিবেশকর্মীরা উদ্বিগ্ন, ক্ষমতার হাতবদল হওয়ায় এই সমঝোতা ধাক্কা খেতে পারে। তবে চুক্তির শর্ত অনুসারে, একবার তা কার্যকর হলে কোনো দেশ নিজেকে সরিয়ে নিতে পারবে না। তা হলে উদ্বেগ কিসের? মরক্কোর মারাকেশে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেয়া পরিবেশকর্মী ক্রিস ট্যানারের বক্তব্য, ‘ট্রাম্প মনে করেন না ক্রমশ বাড়তে থাকা তাপমাত্রায় পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হতে পারে। একজন রাষ্ট্রপ্রধানের এই ভাবনাটাই বিপজ্জনক। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বিভিন্ন রাজ্যে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় দেশটিতে হঠাৎ করে বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে। গতকাল মার্কিন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। সানজোস স্টেট ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, তাদের একজন ছাত্রীর হিজাব টেনে মাটিতে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে এক সাদা চামড়ার যুবক। অন্যদিকে সান দিয়েগো ইউনিভার্সিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তাদের ক্যাম্পাসে কয়েকজন ট্রাম্প সমর্থক হিজাবি এক মুসলিম ছাত্রীর ওপর হামলা করেছে। এ সময় ছাত্রীটিকে অপদস্ত করা হয়। হামলাকারীরা তখন বলছিল, এটা তাদের প্রতিরোধ। আগামী চার বছর এমন প্রতিরোধ চলবে।
এদিকে বিভিন্ন রাজ্যে বৃহস্পতিবার রাতেও ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে দ্বিতীয় রাতের মতো ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন।একটি বার্তা সংস্থা জানায়, বাল্টিমোরে প্রায় ৩শ’ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। তারা ‘আপনি আমাদের প্রেসিডেন্ট না!’ বলে সেøাগান দেয়। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন প্লাকার্ড। একটিতে লেখা ছিল, ‘আমরা ঘৃণ্য ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করিনি।’
শিকাগো, ডেনভার, ডালাসসহ বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভ হয়েছে। জনৈক শিক্ষার্থী কাইলা পিলো (২১) বাল্টিমোর সান সংবাদপত্রকে বলেন, ‘আমরা এখন কেবল তাই প্রদর্শন করছি যা আগামী চার বছর ঘটতে যাচ্ছে। চার বছর ধরে প্রতিরোধ চলবে।’
তিনি বলেন, তিনি ফেসবুকে ট্রাম্পবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার উদ্দেশ্য হাজার হাজার মানুষকে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উৎসাহিত করা। এর আগে বৃহস্পতিবার দিনের বেলা সান ফ্রান্সিস্কো, লস এঞ্জেলেস ও অন্যান্য নগরীতেও বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগ ছিলেন শিক্ষার্থী। তার স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন।
সান ফ্রান্সিস্কোতে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে সিটি হলের দিকে যায়। তাদের বেশিরভাগই ছিল হাই স্কুলের শিক্ষার্থী। তারা সেøাগান দিচ্ছিল, ‘আপনি আমাদের প্রেসিডেন্ট না!’। এ সময় তারা রাস্তাও অবরোধ করে। তাদের হাতে প্লাকার্ডও ছিল। কয়েকটিতে লেখা ছিল, ‘ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ট্রান্স’ এবং ‘সবার জন্য নিরাপদ আমেরিকা গড়ে তোল।’
পামেলা ক্যাম্পোস (১৮) সান ফ্রান্সিস্কো ক্রোনিকলকে বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভ করছি কারণ আমরা সবার অধিকারের জন্য দাঁড়াতে চাই।’ তার মতে, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন বর্ণবাদী। তিনি সকল অভিবাসী, সকল মুসলিমদের আক্রমণ করছেন। আমি গতকাল আমার সব সহপাঠিকে কাঁদতে দেখেছি।’ নাপা ও হেইওয়ার্ডসহ উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন নগরীতেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেছে। তারা বিভিন্ন প্লাকার্ড বহন করেছে। এতে লেখা ছিল, ‘ট্রাম্পকে ছুঁড়ে ফেলো’ ও ‘ট্রাম্পকে ঘৃণাকারীদের ভালবাসি’।
ডেইজি রিভেরা (২৪) ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘প্রথমে আমি তার নির্বাচিত হওয়াটা মেনে নিয়েছিলাম। তবে বুধবার যখন আমি হিলারির বক্তব্য শুনছিলাম। আমি তখন কান্না থামাতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, আমরা তার মত বর্ণবাদী, অভিবাসী ও নারীবিদ্বেষীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছি।’
নিউইয়র্কে ম্যানহাটনের ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে প্রায় ২শ’ ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভকারী জড়ো হন। গত বুধবারও বিভিন্ন নগরীতে হাজার হাজার মানুষ ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ করেন। আগামী সপ্তাহান্তেও বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন নগরীতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল। লস এঞ্জেলেসের মেয়র এরিক গারসেটি বিক্ষোভকারীদের প্রশংসা করেন। তবে তিনি রাস্তায় যান চলাচলে বিঘœ না সৃষ্টি এবং সম্পদের ক্ষতি না করতে বিক্ষোভকারীদের আহ্বান জানান। -সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স।
ওরেগনে ট্রাম্পবিরোধী ‘দাঙ্গা’
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ওরেগন অঙ্গরাজ্যের সর্ববৃহৎ নগর পোর্টল্যান্ডে বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করেছে। বিবিসি’র খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী নগরীর কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়। তারা দোকান ও গাড়ি ভাঙচুর করে, পটকা ছুড়ে মারে এবং আবর্জনার স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ওই পরিস্থিতিকে দাঙ্গা ঘোষণা করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পেপার স্প্রে এবং কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ব্যবহার করে। গ্রেফতার করা হয় অন্ততঃ ২৯ জনকে।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ব্যাট এবং পাথর ছিল। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে সেগুলো ছুড়ছিল বলে অভিযোগ করে পুলিশ। তবে অন্যান্য নগরীতে বুধবার রাতের তুলনায় বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা কম ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।