পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রি। সারি সারি সমাধি। নানা প্রকারের ফুলগাছ ও বিভিন্ন প্রজাতের গাছ সুবিন্যস্তভাবে সাজানো রয়েছে পুরো সমাধিক্ষেত্র জুড়ে। সমাধিক্ষেত্রের পশ্চিমে রয়েছে শ্বেতপাথরের হলিক্রস। ওই হলিক্রসের পাদদেশে সমবেত হয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনারগণ প্রতিবছর নভেম্বরের দ্বিতীয় শুক্রবার সমবেত হন। দিনটি তাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন বীরযোদ্ধার আত্মার শান্তি কামনা করে গতকাল ওই হলিক্রসের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রার্থনা অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাত দেশের হাইকমিশনার ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিহত সৈনিকদের স্মরণ করেন।
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা মধ্য দিয়ে কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে সকাল সাড়ে ১১টায় সাত দেশের হাইকমিশনার ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সমবেত হন। বেলা পৌনে ১২টায় কুমিল্লা ময়নামতি স্কুল এন্ড কলেজের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা মো. কামরুল হাসানের কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাধিস্থলের পশ্চিমে হলিক্রস সীমানায় সকল নিহত সৈনিকদের স্মরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। তারপর পবিত্র বাইবেল পাঠের পর ঢাকা হলিক্রস স্কলাস্টিকের যাজক ফাদার পেট্রিক ডি গাফনে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিসেস আলিসন ব্লেক। তারপর ব্রিটিশ সামরিক উপদেষ্টা লে. কর্নেল ডমিনিক স্পেনসার আর ওয়েলস নিহত সৈনিকদের স্মরণে প্রার্থনা করেন। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। নীরব নিস্তব্ধ হয়ে ওঠে পুরো সমাধিক্ষেত্র। কিছুক্ষণ নীরবতা পালন শেষে শুরু হয় নিহত সৈনিকদের স্মরণে হলিক্রস পাদদেশে ফুলেল শ্রদ্ধা অর্পণ পর্ব। প্রথমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কুমিল্লা এরিয়া কমান্ডারের পক্ষে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল রাশেদ আমিন পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং গার্ড অব অনার প্রদান করেন। তারপর পর্যায়ক্রমে ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিসেস আলিসন ব্লেক, কানাডার হাইকমিশনার বিনট পিয়েরে লারমে, স্পেনের হাইকমিশনার ইদোয়ারডুডি লাইজলেসিয়া, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জুলিয়া নিবলেট, ফ্রান্সের হাইকমিশনার সেফিওয়েব, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হাইকমিশনার পিয়েরে মায়াদোন ও জাপানের ডেপুটি হাইকমিশনার তাকেশি মাৎসুনাগা হলিক্রসে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে এক নয়নাভিরাম জায়গা জুড়ে অবস্থিত ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রি বা কমনওয়েলথ রণসমাধি ক্ষেত্র। এখানে ১৩ দেশের ৭৩৭ জন যোদ্ধার মধ্যে ব্রিটেনের ৩৫০ জন, কানাডার ১২ জন, নিউজিল্যান্ডের ৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ১ জন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন, ভারতের ১৭২ জন, বার্মার ১ জন, দক্ষিণ রোডেশিয়ার ৩ জন, বেলজিয়ামের ১ জন, পোল্যান্ডের ১ জন, জাপানের ২৪ জন এবং বেসামরিক ১ জনকে সমাহিত করা হয়। ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত সৈনিকদের মধ্যে মুসলিম ধর্মের ১৭২ জন, বৌদ্ধ ধর্মের ২৪ জন, হিন্দু ধর্মের ২ জন এবং বাকিরা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। সমাধিক্ষেত্রের প্রথম ধাপে রয়েছে ইউরোপিয়ানদের এবং ওপরের দ্বিতীয় ধাপে এশিয়া উপমহাদেশের যোদ্ধাদের সমাধি। লন্ডনভিত্তিক কমনওয়েলথ গ্রেভস কমিশন নামে একটি সংস্থা ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রির সার্বিক তদারকির দায়িত্বে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।