Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাঁচামরিচ-বেগুন-গাজর শসা-লেবুর দামে আগুন

প্রথম রমজানেই রাজধানীর বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে মজুদ বেশি-সরবরাহ স্বাভাবিক, অনিয়ম হলেই কঠোর ব্যবস্থা সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিনে গতকাল নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন দেখা গেছে। সব পণ্য কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোলা, খেজুর, চিনি, ডাল, গরু ও মুরগির গোশত, গুঁড়া দুধ, শশা, লেবুসহ সব পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয় রোজাকে কেন্দ্র করে ফল ব্যবসায়ীরাও অতি মুনাফায় মেতেছেন বলেও অভিযোগ ক্রেতাদের।

চাহিদা বাড়ায় রাজধানীর বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে বেগুন ও শসার দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে কমপক্ষে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে এ দুটি সবজিতে। বেড়েছে কাঁচামরিচ ও গাজরের দামও। কারওয়ান বাজারে খুচরায় অন্যান্য বাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে সবজি পাওয়া যায়। তবে সে বাজারেও প্রতি কেজি বেগুন-শসা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, দুই দিন আগেও প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি করেছি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। এখন কেনাই পড়তেছে ৬০ টাকার উপরে। শসারও একই দাম, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা।

তিনি বলেন, রোজার ইফতারে তো সবাই পেয়াজু ও বেগুনি খায়। এর মধ্যে ডালতো কাস্টমার আগেই কিনেছে। বেগুন দুই-এক দিন পর পর কেনা লাগে। এখন সিজন শেষের দিকে, বাজারে বেগুনও একটু কম, আবার চাহিদাও বেশি, তাই দাম বাড়ছে। কাঁচামরিচের কেজিও তো ২০ টাকা বাড়তি। ৮০ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজারে রোজায় বেশি চাহিদা থাকে এমন সবজির মধ্যে টমেটো আগের মতোই ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৫ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বেগুনের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। তেজগাঁও বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. স্বাধীন বলেন, আগে বেগুনের পাল্লা ছিল দেড়শ’ টাকা, এই বেগুন আমগো কিনে আনতে হইছে ৬শ’ টাকা পাল্লায়। কারও কাছে ৮০ টাকায় বেচি, কারও কাছে ৮৫ টাকা। কিছু বেগুন নষ্টও থাকে, আবার মাপে ৪২ টাকা হলে দাম হইলে তো কাস্টমার দুই টাকা দেয় না।

রোজায় শরবত করতে ব্যবহার হয় লেবু, এতে পুরো মাসই লেবুর চাহিদা থাকে বেশি। এখনও বাজারে লেবুর দাম বাড়তি। ছোট আকারের এক হালি লেবু কিনতেও ক্রেতাদের ২৫ থেকে ৩০ টাকা গুনতে হচ্ছে। বড় আকারে লেবুর হালি ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রোজায় দরকারি মুদি দোকানে এমন পণ্য ছোলা প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮০, দেশি ছোট মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০, বড় দানা ১০৫ থেকে ১১০, মাঝারি দানা ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, মুগডাল ১৩০ টাকা, অ্যাঙ্কর ডাল ৬০, চিনি ৭৫ থেকে ৮০ এবং লবণ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

গোশতের বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৬৫ টাকা, সোনালি মুরগির দাম গত কয়েক দিনেই বেড়েছে রাজধানীতে, এখন প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ২৩০ থেকে ২৩৫ টাকা, গরুর গোশত ৭০০ টাকা, খাসির গোশত ৯৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া বরাবরের মতো দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ফল বাজারও। আপেল, কমলা, নাসপাতি, আঙুর, পেঁপে, তরমুজসহ সব ফল রমজান উপলক্ষে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, বিক্রেতারা অতি মুনাফার আশায় প্রতিবছরই রোজা আসলেই পণ্যের দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়। এটা শুধু এদেশেই হয়। বহির্বিশ্বে রোজা আসলেই প্রত্যেক পণ্যের দাম কমে। কিন্তু আমাদের দেশে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও দাম বেড়ে যায়। তবে প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোজায় নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আগে থেকে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো। প্রতিবছরের মতো এবারও সব পণ্যের দাম বাড়লেও কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তা সাধারণ।

এদিকে গতকাল ঢাকার কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটে আকর্ষিক পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাজারে প্রতিটি পণ্যের মজুদ চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। ভোজ্য তেল, ডাল, চিনি, ছোলা, মসলাসহ সকল পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, ঘাটতির কোন সম্ভাবনা নেই। মূল্যও স্থিতিশীল রয়েছে। সয়াবিন তেল নতুন করে কমিয়ে নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রয় হচ্ছে। সরকার যে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর থেকে ট্যাক্স এবং ভ্যাট কমিয়েছে, তার সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন। বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ টাস্কফোর্স গুরুত্বের সাথে কাজ করছে। বাজার অভিযান জোরদার করা হয়েছে, অনিয়ম হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষের সুফর ভোক্তা পাচ্ছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরাও এখন অনেকটা সতর্ক হয়েছেন, পণ্যের মূল্য তালিকা দোকানে দেখা যাচ্ছে। ভোক্তার সচেতনাও বেড়েছে। পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদেরও আন্তরিক হতে হবে, সততার সাথে ব্যবসা করতে হবে। দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোও এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করছি। আমরা সম্মিলিত ভাবে সততার সাথে চেষ্টা করলে চলমান অস্থির বিশ্ব পরিস্থিতিতেও আমাদের বাজার স্বাভাবিক থাকবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারকে বিশেষ কার্ড দিয়ে টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। এর প্রথম কিস্তির পণ্য বিক্রয় শেষ হয়েছে, দ্বিতীয় কিস্তির পণ্য নির্ধারিত কার্ড হোল্ডারদের কাছে মধ্য রমজানে বিক্রয় করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের অনিয়ম প্রমানীত হলে দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ এইচ এম শফিকুজ্জামানসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ