Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রথম দিনেই জমজমাট চকবাজার

রাজধানীর ইফতার বাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার মানেই যেন চকবাজারের লোভনীয় খাবারের আয়োজন। এই বাজারের ইফতারের বাহারি নাম আর লোভনীয় স্বাদের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। তাই রমজানের প্রথম থেকেই জমজমাট থাকে এখানকার ইফতারি আয়োজন। মূলত শাহী মসজিদকে কেন্দ্র করে বসে ইফতারির দোকানগুলো। গতকাল রোববার প্রথম রোজার দিনে চকবাজারে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। করোনাভাইরাসের প্রকোপে গত দুই বছরের হাহাকার কাটিয়ে চিরচেনা রূপে ফিরেছে চকবাজার। চকবাজারের ইফতার বাজার রোজার প্রথম দিনেই পেয়েছে পূর্ণতা। তীব্র গরম উপেক্ষা করে পুরান ঢাকাবাসীর পাশাপাশি চকবাজারে ইফতারসামগ্রী কিনতে দেখা গেছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের। তবে এবারের ইফতারির দাম একটু বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

দুপুরের পর থেকেই চুলায় টগবগ করে ফুটছে তেল। ডুবোতেলে ভাজা হচ্ছে বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ, জিলাপিসহ হরেক রকম খাবার। যেখানে রান্না, তার পাশেই টেবিল পেতে বিক্রি। দোকানের সংখ্যাও যেমন অনেক, ক্রেতাও তেমনই। চকবাজার শাহী মসজিদের সামনের রাস্তায় বরাবরের মতোই যান চলাচল ছিল বন্ধ। তবে গতকাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের এনিয়ে সমস্যা হলেও দুপক্ষের বচসা শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে ফের ইফতার সামগ্রীর দোকান বসানো শুরু করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শাহী মসজিদের সামনের গলিতে যেন পা ফেলার জায়গা নেই। ক্রেতা-বিক্রেতার হই-হুল্লোড়ে মুখরিত পুরো ইফতার বাজার। চলছে বেচাকেনাও। এখানকার অস্থায়ী দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে সুতি কাবাব, জালি কাবাব, টিক্কাসহ প্রায় ১০-১৫ ধরনের কাবার। কাবাবের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে ডিম চপ, কোয়েল, কবুতরের রোস্টসহ বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী। মিষ্টির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে শাহী জিলাপি, মিষ্টি, দই, ফ্রুট কাস্টার্ডসহ নানা কিছু।

ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এখানকার ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বিক্রি করেন ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। এবার আকর্ষণীয় এই ইফতারসামগ্রীটি আরও মুখরোচক করা হয়েছে বলে জানালেন এখানকার বিক্রেতারা। গরুর মগজ, কলিজা, মুরগির গোশত, কলিজা, ডিম থেকে শুরু করে ডাবলি, ছোলাসহ মোট ১৫-২০টি আইটেম ব্যবহার করা হয় এই পদটি তৈরিতে। সঙ্গে আরও প্রায় ২০ ধরনের মসলা ব্যবহার করা হয় বলেও জানান এখানকার ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে এই মসলাগুলোই ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ কে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তাদের দাবি, কেবল পুরান ঢাকার পুরনো কারিগররাই এই পদটিকে ঐতিহ্যের স্বাদে তৈরি করতে সক্ষম।

এছাড়া শিক কাবাব, সুতি কাবাব, ছোপা রুস্তম, মুঠিয়া, বটি কাবাব, জালি কাবাব, রেশমি কাবাব, পাখির রোস্ট, মুরগির রোস্ট, মুরগি মোসাল্লাম, সমুচা, শিঙ্গাড়া, ঘুগনি, ছোলা, পেঁয়াজু, জিলাপি-শত পদের সমাহার চকে। প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো বাজারে দুপুর থেকেই ক্রেতা আসেন। বিকেলে পা ফেলা দায় হলেও সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ভিড় হালকা হয়ে যায়। চকের চরিত্রই এমন। দুপুরের পর জমে ওঠে সন্ধ্যার আগেই শূন্য।

তবে নিত্যপণ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবারের ইফতারের আইটেমের দামও আগের তুলনায় বেশি। বড় বাপের পোলায় খায়-এর কেজি ৬০০ টাকা। গরুর গোশত দিয়ে তৈরি সুতি কাবাবের কেজি ১২০০ টাকা ও খাশির গোশতের কাবাব ১৪০০ টাকা। এরকম বাকিসব আইটেমেও দাম অনেক বেশি। এ বছর রোজায় গরমের তীব্রতা তুলনামূলক বেশি। সারাদিনের রোজা শেষে রোজাদারদের তৃপ্তি দিতে চকবাজারের ইফতারসামগ্রীতে রয়েছে নানা আয়োজন। চাহিদায় এগিয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী লাবাং, মাঠা ও বিভিন্ন ধরনের শরবত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ