পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের মানুষের ৯২ ভাগ মুসলমান। ধর্মীয় বিধান মেনে রমজান মাসে প্রায় প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানই রোজা রাখেন। রমজান উপলক্ষে স্বাধীনতা পরবর্তী সব সময়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। গতবছরই করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এবারও একই ঘোষণার কারণে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে। রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক। তারা মনে করেন, রোজার সময় মায়েদের সেহরি-ইফতার প্রস্তুতি, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলেরই রোজা রাখা, প্রচণ্ড গরম, দেশজুড়ে ডায়ারিয়াসহ নানা রোগব্যাপীর প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, তীব্র ট্রাফিকের মধ্যে স্কুলে ছুটে যাওয়া সকলের প্রতি অমানবিক নির্যাতন। আর রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রোজায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে ঈদের পর বাড়তি ক্লাস করে ঘাটতি মেটানোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-অভিভাবকরা। তাদের আপত্তির মধ্যেও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করতে রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে।
আজ থেকে শুরু হয়েছে রমজান মাস। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস চলবে ২০ রমজান পর্যন্ত। আর মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠান ২৪ রমজান পর্যন্ত চালু রাখার কথা জানানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর ধরে পাঠদানে যে ঘাটতি হয়েছে সেটি পূরণে রোজার মধ্যে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রতিবছর রমজান মাসেই রোজাদারদের কথা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছিল। গতবছর রমজান মাসে ক্লাস চালুর কথা বলা হলেও শিক্ষক-অভিভাবকদের সমালোচনার মধ্যে গতবছর মন্ত্রণালয় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। আবার এবার রমজানেও একই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই ইস্যুটি গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। উচ্চ আদালত বলছে, স্কুল বন্ধ বা খোলার রাখার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না । এটি সরকারের পলিসিগত বিষয়।
স্কুল খোলার রাখার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বইছে। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত দিচ্ছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বড় একটি অংশ বলছেন, রমজানে স্কুল-কলেজ খোলা রাখলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভোগান্তি বাড়বে। তাদের মতে, এক দিকে গরমের তীব্রতা, এর মধ্যে আবার রোজা রেখে ক্লাস নেওয়াটা অমানবিক হবে। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী রোজা রাখে। রোজা রেখে তীব্র গরমে স্কুলে যাওয়া ও ক্লাসে মনযোগী হওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে।
শারমিন জাহান নামে একজন অভিভাবক বলেন, বন্ধ রাখা উচিত। যে উদ্দেশ্যে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিলো তা কাজে আসবে না। তিনি বলেন, দু’বছর বন্ধ ছিলো তখন শিখন যা ঘাটতি হলো তা এই রোজার কয়েটা দিনে পূরণ করা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। তার থেকে সারা বছরের ছুটি থেকে কিছু কিছু ছুটি কমিয়ে চেষ্টা করা যেতেই পারত।
কানিজ নিপা নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, এখন গরমটা একটু বেশিই পড়েছে। এই সময়ে রোজা রেখে ক্লাস কঠিন। বিশেষ করে মহিলাদের সমস্যা সবচেয়ে বেশি।
মাহিন মুজতবা নামে এক অভিভাবক বলেন, রমজান মাসে যদি ক্লাস নিতেই হয় তাহলে অনলাইনেই নেয়া যায়। তীব্র গরম ও ভেঙে পড়া ট্রাফিক সিস্টেমের মধ্যে ঘর থেকে বের করে রোজাদারদের উপর এক প্রকার নির্যাতন করা হবে। তিনি বলেন, মাত্র এই কয়েকদিন ক্লাস না নিলে শিক্ষার্থীদের এমন কি ক্ষতি হবে? বরং এটি অভিভাবকদের জন্য বিশাল পেরেশানি ও কষ্টদায়ক হবে, রমজান মাসে রাস্তায় যানজট বেড়ে যায়, এখন ভীষণ গরম, তার ওপর রোজা মুখে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে দৌড়াঝাঁপ করতে হবে, সেহরি খাওয়ার পরে স্কুলে যাওয়ার টেনশনে ঘুম বা বিশ্রাম কোনোটাই হবে না, স্কুল শেষে আবার বাচ্চাদের বাসায় নিয়ে আসার টেনশনে আরো অনেক বেশি কষ্ট ও ক্লান্তি বেড়ে যাবে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু ঘাটতি পোষাণোর জন্য ক্লাস চালু রাখাকে ইতিবাচক মনে করেন। তবে তিনি বলেন, রোজা রেখে শিক্ষার্থী-শিক্ষক কেউই ক্লাস করতে পারবে না। ক্লাসে যেভাবে মনোযোগ রাখা উচিত তা কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না। অন্যদিকে রাজধানীতে রোজার আগেই যানজটের যে অবস্থা তাতে রোজার দিনে যানজট কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে তা অকল্পনীয়। এতে রোজাদারদের চরম ভোগান্তি হবে।
জিয়াউর কবির দুলুসহ কোন কোন অভিভাবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলেও ক্লাসের সংখ্যা এবং খোলা রাখার সময় কমিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করলেও তারা কেউ নাম প্রকাশ করে কথা বলতে নারাজ।
উইল লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থীর অভিভাবক আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত ছিল রমজানের সময় বন্ধ রাখা। কারণ রমজানে এমনিতেই ঢাকা শহরে ব্যাপক ট্রাফিক থাকে। তার সাথে প্রচণ্ড গরম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সবমিলিয়ে অভিভাবকদের জন্য ভোগান্তিকর হবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোজার সময় অভিভাবকদের এমনিতেই বাড়তি ব্যস্ততা থাকে। সে সময় সন্তানদের নিয়ে স্কুলে ছুটা বাড়তি বিড়ম্বনা তৈরি করবে।
এদিকে গত ২৭ মার্চ পবিত্র রমজান মাসে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে ২০ রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক স্কুল খোলা রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। জনস্বার্থে আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ এ রিট করেন। আদালতে রিট আবেদন উপস্থাপন করা হলে আদালত জানিয়েছে আসন্ন রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা বা বন্ধ রাখা সরকারের সিদ্ধান্ত এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। রিট আবেদনকারী আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশে ৯০ ভাগ নাগরিক মুসলমান। তাদের ধর্ম ইসলাম। প্রথা ও রীতি অনুযায়ী রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে এটাই আইন প্রথা ও নীতি এবং ওইভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাহে রমজান মাসে বন্ধ থাকে। তাই সরকারের তর্কিত সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক। তিনি বলেন, রমজান মাসে শিক্ষকরা রোজা রেখে ক্লাসে লেখাপড়া শেখানোর বিষয়ে মনোযোগী হন না। করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনো যায়নি। এসব কারণে রমজান মাসে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে আরজি জানানো হয়েছে এবং রমজানে স্কুল খুলে রাখার সরকারের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক।
রমজান মাসে স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত সংবিধানের ২৬, ২৭, ২৮, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়। রিটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও শিক্ষাসচিবকে বিবাদি করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, রমজান মাসে স্কুল-কলেজ খোলা রাখলে সবার কষ্ট বেড়ে যাবে। যেহেতু দীর্ঘদিন ক্লাস বন্ধ ছিল, সে কারণে আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রোজার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাটা যেমন কষ্ট, তারচেয়ে বেশি কষ্ট সিলেবাস না পড়িয়ে পরীক্ষার হলে পাঠিয়ে দেওয়া। চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করাতে হবে। সব শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি মেটাতে রমজান মাসে স্কুল-কলেজ খোলা রাখা হচ্ছে। তবে আগামী ২৬ এপ্রিলের পরিবর্তে এসময় কিছুটা কমিয়ে ছুটি বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, করোনার কারণে গত ২ বছর শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে এসএসসি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের যদি ক্লাস না করানো হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে এবং সমস্যা হবে। বাড়িতে থাকতে থাকতে শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হয়েছে। এখন ক্লাস শুরু হয়েছে। তারা নিয়মিত ক্লাস করবে। রোজার কারণে এখন ক্লাস বন্ধ করাটা ঠিক হবে না। তবে কত তারিখ পর্যন্ত ক্লাস হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।