Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ.লীগ জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলতে চায় -চট্টগ্রাম সমাবেশে মির্জা ফখরুল

বিএনপিকে পুলিশের বাধা কালুরঘাটে আ.লীগে সমাবেশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ১২:৩৪ এএম

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্য কেউ নন, জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক। আওয়ামী লীগ ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের নাম মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে চায়। বর্তমান সরকারের সময় শেষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। চট্টগ্রাম থেকেই গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার নতুন এক ‘যুদ্ধের’ ঘোষণা দিয়ে তিনি সবাইকে এতে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহŸান জানান। গতকাল রোববার নগরীর পলোগ্রাউন্ডে বিএনপি আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাকেন্দ্র কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি। তবে একই সময়ে সেখানে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ আহŸান করে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা গতকাল চট্টগ্রাম এসে প্রথমে নগরীর ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তারা সেখান থেকে কালুরঘাটের উদ্দেশে রওনা দিলে ষোলশহর ২নং গেইট এলাকায় পুলিশ তাদের আটকে দেয়।

এ সময় বিএনপি নেতাদের সাথে পুলিশের বাকবিতÐা হয়। ঠিক ওইসময়ে বিপুল সংখ্যক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সেখানে বিএনপির বিরুদ্ধে ¯েøাগান দেয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত কর্মসস্থলে পাল্টা সমাবেশ আহŸানের পর শনিবার রাত ১০টায় বিএনপি তাদের সমাবেশ নগরীর পলোগ্রাউন্ডে করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আহŸান করার ফলে কালুরঘাট এলাকায় কাউকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে সকাল থেকে সেখানে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা সমাবেশ করেন।

বিকেলে নগরীর পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন। বিএনপির সমাবেশ প্রতিহত করে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণায় নগরজুড়ে উত্তাপ-উত্তেজনার মধ্যেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। দীর্ঘদিন পর দলের মহাসচিব চট্টগ্রামের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দেয়ায় নেতাকর্মীরা ছিলেন উচ্ছ¡সিত।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়াউর রহমানকে ভয় পায় বলেই আওয়ামী লীগ আমাদের কালুরঘাটে যেতে দেয়নি। কারণ আওয়ামী লীগ যেখানে ব্যর্থ জিয়াউর রহমান সেখানে সফল ছিলেন। তিনিই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে সকলের অবদান স্বীকার করা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এক নেতার অবদানই শুধু স্বীকার করেন। অন্য কাউকে তারা সম্মান করতে জানেন না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন দানকারী বীর শহীদদের সাথে আওয়ামী লীগ প্রতারণা করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা একের পর এক দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র পরিণত করেছে তারা। এ সরকারের সময় শেষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরা এখন বেসামাল হয়ে পড়েছে। প্রথমে এরা রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এখন আবার চাপে পড়ে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিচ্ছে। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে হবে। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাদের সম্পর্কে কটুক্তি না করার আহŸান জানিয়ে বলেন, আপনারা জনগণের সেবক। ভবিষ্যতে বিএনপি নেতাদের নামে কটুক্তি করা হলে আপনাদের ওপর জনগণের নিষেধাজ্ঞা আসবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ইতিহাসের সত্য কথা বললে আওয়ামী লীগের গা জ্বলে। তাই আমাদের কালুরঘাট যেতে দেয়নি তারা। মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিতে আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যর্থ হয়েছিলেন। আর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নিজে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তারা তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে জিয়াউর রহমানের অবদানকে অস্বীকার করছে। ইতিহাস বিকৃত করে বেশিদিন টেকা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশের মুক্তিকামী মানুষ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তার নেতৃত্বেই এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ সরকারকে হটিয়ে মুক্তিকামী জনতা জনগণের সরকার কায়েম করবে।

সভাপতির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের তেমন অবদান নেই। তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। আর তখনই জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক, ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরি এ্যানি, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির আহŸায়ক ডা. শাহদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, আবু সুফিয়ান প্রমুখ।

কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে আ.লীগ
স্বাধীনতা ঘোষণার প্রচারকেন্দ্র কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে বিএনপিকে কর্মসূচি পালন করতে না দিলেও সেখানে বিএনপিকে ঠেকাতে দিনভর অবস্থান নিয়ে মিছিল-সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন। সকাল ৮টা থেকে নগরীর চান্দগাঁওয়ে বেতারকেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান নেয় নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাটে সমাবেশ করেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সমাবেশে তিনি বলেন, বিএনপি শ্রদ্ধা জানানোর নামে মিথ্যা ইতিহাস প্রচার করবে, ইতিহাসের খলনায়ককে নায়ক বানানোর চেষ্টা করবে, সেটা আমরা করতে দিতে পারি না। আমরা যারা সেদিন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আমরা এখনও বেঁচে আছি। আমরা ক্ষমতায় থেকেও রাজপথে আছি। আমরা যখন বিরোধীদলে ছিলাম, তখনও রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না। বিএনপিকে আর ইতিহাস বিকৃতির রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হবে না। সমাবেশ শেষে মেয়রের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বেতারকেন্দ্রে সামনে যান। সেখানে সমাবেশে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ঐতিহাসিক সত্য। এই সত্য যারা বিশ্বাস করে না, তারা স্বাধীনতার শত্রæ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার হলেও এরা নির্মূল হয়নি। এই ইতিহাস বিকৃতকারী স্বাধীনতার শত্রæদের নির্মূল করতে হবে। তাদের দুঃসাহস সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাদের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছিল সেনানিবাসে। তাদের কোনো রাজনীতি নেই। তাদের জন্ম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতিই তাদের একমাত্র রাজনীতি। জিয়া জীবদ্দশায় কখনো নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেছিলেন। ঘোষণাটি প্রথম পাঠ করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান। এটাই ইতিহাসের প্রকৃত সত্য। নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, খোরশেদ আলম সুজন প্রমুখ।

 



 

Show all comments
  • Mohammad Quayum ২৮ মার্চ, ২০২২, ৪:৫৮ এএম says : 0
    Mitha ar koto bolbe, historic event manush sob e jane , bangler manush akhon ar boka na !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফখরুল ইসলাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ