Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যক্তিগত শত্রুকে শায়েস্তার জন্য নয়

প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়
ইনকিলাব ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়লাভের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট বুধবার একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। সেটি নি¤েœ উল্লেখ করা হলো :
‘যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ কথাগুলো কখনো লিখতে হবে তা আমরা ভাবিনি। কিন্তু নির্বাচনী বিশ্লেষকদের সব জল্পনাকে অসার প্রমাণ করে জিতে গেলেন ট্রাম্প। মার্কিন এস্টাবলিশমেন্টের বিরোধী গ্রামীণ এবং শ্রমিক শ্রেণির বিপুল ভোট তাকে বিজয়ী হতে সহায়তা করেছে। তবে এখন যদি হিলারি ক্লিনটন বিজয়ী হতেন, তবে ট্রাম্পের আচরণ হয়তো তেমনটা হতো না, যা পরাজিত হিলারি করলেন। জনগণের রায়কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষকে মেনে নিতে হবে। দেশ এবং সারা বিশ্বের জন্য যতটা সম্ভব ভালো কাজ করে যাওয়া উচিত।
এখন তাহলে কী হবে? প্রথমত, আমরা এখন আশা করব, আমাদের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে একজন ভালো প্রেসিডেন্ট হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সঠিক কাজে তাকে আমরা সমর্থন দেব। ট্রাম্পকে শিগগিরই কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। অত্যন্ত উন্নত আইনপ্রয়োগকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে নেতৃত্ব দিতে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণও থাকবে তার হাতে। আমাদের সর্বাঙ্গীণ প্রত্যাশা, তিনি বুঝতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা শুধু এক ব্যক্তির জন্য বা তাকে কেন্দ্র করে নয়। তিনি একা কেবল সবকিছু করতে পারবেন না। ওভাল অফিসের ক্ষমতা তার ব্যক্তিগত শত্রুকে শায়েস্তা করার জন্য নয়। নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার শত্রুদের শিক্ষা দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এমনকি নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধেও তিনি তার সেই ইচ্ছার কথা গোপন রাখেননি।
নতুন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই বিপুল এবং কঠোর সব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে। তিনি এমন এক সময় প্রেসিডেন্ট হলেন, যখন সারা বিশ্বে উদার গণতন্ত্র হারিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা নাজুক, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের পরিমাণ বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর রাশিয়া ও চীন তাদের পেশি দেখিয়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রেসিডেন্ট ওবামা অর্থনীতিকে একটা জুতসই চেহারা দিয়েছেন বটে, তবে সেখানে অনেক সমস্যা আছে। ধীর প্রবৃদ্ধি, অসাম্য, কেন্দ্রীয় বাজেটের দীর্ঘকালীন চাপÑ সবকিছুই অর্থনীতিকে একটি চাপের মধ্যে রেখেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় যেসব কথা বলেছিলেন, সেগুলো ভুলে গিয়ে এসব সমস্যা সমাধানে হঠাৎ করে খুব যৌক্তিক আচরণ শুরু করবেনÑ এতটা আমরা আশা করছি না। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে কারাগারে পাঠাতে চেয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন, তাদের সাজা দিতে চেয়েছিলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তিনি লক্ষাধিক অনিবন্ধিত অভিবাসী ফেরত পাঠাতে চেয়েছিলেন, বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের হুমকি ছিল তার, জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে গৃহীত প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি। তার এই প্রতিটি অবস্থানই বিপুল মানুষের ক্ষতি করবে। তিনি যদি তার এসব কথিত কাজ বাস্তবে করতে যান, তবে অন্যরা সাংবিধানিক আইন ও উন্নত সরকারের দাবিতে সোচ্চার হবে এবং এগুলোর প্রতিবাদ করবে। কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির নেতারা ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে তার পক্ষে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। তাদের পরীক্ষা দিতে হবে। আইন বহির্ভূতভাবে যাতে তাদের ব্যবহার না করা হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ- সবারই এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যক্তিগত শত্রুকে শায়েস্তার জন্য নয়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ