পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘অবাক পৃথিবী! অবাক করলে তুমি/ জন্মে দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি’ (সুকান্ত ভট্টাচার্য)। সত্যিই গোটা বিশ্ব অবাক। রাজনীতিতে নেমে দেড় বছরের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ট্রাম্প’ কার্ড ছুড়েই তাসের ঘরের মতো ভেঙে চুরমার করে দিলেন ক্যারিয়ার রাজনীতিক হিলারি ক্লিনটনের হোয়াইট হাউজ প্রবেশের স্বপ্ন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই যাত্রাপথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। সুকান্তের কবিতার পঙ্ক্তির মতোই স্বদেশভূমির মানুষই শুধু নয়; দলের অনেক নেতাও ছিলেন তার ওপর বিক্ষুব্ধ। সবকিছু মাড়িয়েই তার এই বিস্ময়কর বিজয়। লাগামহীন বেফাঁস কথাবার্তায় নিন্দিত-ধিকৃত অথচ গোটা পৃথিবী তাকিয়ে তাঁর দিকে। কেউ বলছেন ঝড়; কেউ বলছেন ভূমিকম্প। ঘুমন্ত শ্বেতাঙ্গদের জাগিয়ে রেভ্যুলেশন ঘটিয়ে তছনছ করলেন ডেমোক্র্যাট শিবির। জয়ী হয়ে শেষ হাসি হাসলেন জনমত জরিপে পিছিয়ে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প। হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউজের দখল নিশ্চিত করলেন রিপাবলিকান এই প্রার্থী। শুধু প্রেসিডেন্ট হননি; নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ নিয়ন্ত্রণেই ছিল; এবার সিনেট তুলে দিলেন রিপাবলিক্যানদের হাতে। প্রেসিডেন্ট হতে ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮ ভোটের মধ্যে প্রয়োজন ২৭০ ভোট। অথচ ট্রাম্প জিতে নিয়েছেন ২৯০ ভোট। আর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি পেয়েছেন ২১৮ ভোট। ভাবা যায়!
প্রথম থেকেই নির্বাচনী ¯্রােত ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের বিপক্ষেই ছিল। মিডিয়ার সরাসরি বিরোধিতা, জনমত জরিপে পিছিয়ে থাকা এবং নিজ দলের জাঁদরেল নেতারা যান দূরে সরে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি মার্কিনীদের শত্রু; চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ায় দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী তার বিপক্ষে যায়। কিন্তু না! কোনো কিছুই দমাতে পারেনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী অগ্রযাত্রাকে। সবার বিরোধিতা আর ধিক্কারের জবাব দিয়েছেন ব্যালটের মাধ্যমে পরাজিত করে। তার হয়ে এ কাজটা করে দেয় ঘুমিয়ে থাকা শ্বেতাঙ্গরা। বিশ্বের তাবৎ রাজনৈতিক বোদ্ধারা মত দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারির বিজয় সুনিশ্চিত এবং ট্রাম্পের পরাজয় নির্ঘাত। নির্বাচনের জরিপে মিডিয়াগুলো শেষ মুহূর্তে হিলারির জয়ের সম্ভাবনা দেখেছিলেন ৯১ শতাংশ। প্রায় ৯৯ ভাগ সংবাদ মাধ্যমের জরিপের আগাম বার্তা বিজয়ের হাসি ফুটবে হিলারির মুখে। গাধার পিঠে চড়ে হিলারি হোয়াইট হাউজে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আড়াইশ’ বছরের প্রথা ভেঙে তৈরি করবেন প্রথম নারী প্রেসিডেন্টের নতুন ইতিহাস। কিন্তু অবাক কা-! গণতন্ত্রে শেষ বিচারে রায় দেয়ার মালিক জনগণ। সেই জনরায় গেছে ট্রাম্পের পক্ষে। ট্রাম্পকেই তারা দেখতে চেয়েছেন হোয়াইট হাউসে ৪৫তম মালিক হিসেবে। তাই শ্বেতাঙ্গ জনগণের ব্যালটের বিপ্লবে পরাজিত হয়েছে অন্য সবার চাওয়া-পাওয়া ও প্রত্যাশা। ব্যবসায়ী হিসেবে শুধু আকাশছোঁয়া বিল্ডিং নির্মাণ নয়; তিনি রাজনীতিতে নেমে সাফল্যের আকাশ ছুঁইলেন।
এবারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নানা দিক থেকে ছিল ব্যতিক্রম। হাউজিং ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতিতে ‘রাজসিক উত্থান’ অবাক করার মতো। গত ১৮ মাস তিনি অবাক করে গেছেন দুনিয়ার সব মানুষকেই। দলে ১৬ জনকে পরাজিত করে তিনি রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হন। প্রতিকূল পরিবেশে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনে শ্বেতাঙ্গদের নীরব ভোটবিপ্লবে শেষ চমক নিয়ে হাজির হন তিনি। ভোটযুদ্ধ শেষে রেওয়াজ অনুযায়ী যখনই ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়; তখনই বুঝা যাচ্ছিলো মার্কিনিদের আকাশে ট্রাম্প ঝড় আসছে। এই ঝড় যে ডেমোক্র্যাটদের উড়িয়ে দিয়ে চমক সৃষ্টি করবে তা কারোই কল্পনায় ছিল না। নির্বাচনী যুদ্ধে যেসব রাজ্যে ট্রাম্পের জয় কেউ কল্পনাও করেননি; সেসব রাজ্যে নির্বিঘেœ জয়ী হয়েছেন তিনি। ঐরাবত তাড়িয়ে দিয়েছে মানুষের উপকারী প্রাণী গাধাকে।
হোয়াইট হাউজে প্রবেশ নিশ্চিত তথা বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে ৭০ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি সবার প্রেসিডেন্ট। আমেরিকাকে আমি সব সময় শীর্ষে রাখব।’ পরাজিত হয়ে হিলারি তাকে অভিনন্দন জানান। আকস্মিকভাবে ট্রাম্পের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার খবরে বিশ্ব অর্থনীতিতে তাৎক্ষণিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমেরিকার ডলার আর মেক্সিকোর পেসোর দাম কমে যায়, দরপতন হয় জাপান, কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশের শেয়ারবাজারের।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় আড়াইশ’ বছরের রাজনীতির ইতিহাসে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প একমাত্র ব্যক্তি; যিনি দেশটির ‘প্রথম অরাজনৈতিক প্রেসিডেন্ট’ নির্বাচিত হলেন। এই বিজয় অর্জনে দেশের শ্বেতাঙ্গ মানুষের আস্থা অর্জনে যেমন ট্রাম্পকে নানান মিথ্যাচার করে একনিষ্ঠ হতে হয়েছে; তেমনি উত্তেজনা, ক্রোধ, বর্ণবিদ্বেষ, অভিবাসনবিরোধী অবস্থান, নারীবিদ্বেষ ও নারীর অশ্রুসিক্ত অপমানের আকুতিও অবজ্ঞা করতে হয়েছে। এমনকি নিজের মেয়েও ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। যারা অশীতিপর হয়ে নারী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিয়েছেন; তারাও হতবাক হয়ে দেখলেন মাত্র ১৯২০ সালে নারীর ভোটাধিকার অর্জনের এক শতাব্দী হওয়ার আগেই হিলারির মতো ক্যারিয়ার রাজনীতিককে (নারী প্রার্থী) পরাজয়ে একজন অরাজনৈতিক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী বাজিমাত করে প্রেসিডেন্ট হতে সক্ষম হলেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৭২ সালে নারী অধিকারে সোচ্চার ‘ইকুয়্যাল রাইটস পার্টি’ থেকে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ভিক্টোরিয়া ক্লাফলিন উডহালের মতো ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনেরও ‘ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট’ হওয়ার স্বপ্ন অধরাই রইলো।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন। ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েই একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন এই রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী। ওই সময়েই প্রতিবেশী মেক্সিকানদের ‘ধর্ষক ও সন্ত্রাসী’ বলে গালি দেন। সীমান্তে প্রাচীর দেয়ারও ঘোষণা দেন। ইসলামবিদ্বেষী এই হঠাৎ রাজনীতিক দেশের বিচারক, সাবেক মিস ইউনিভার্স, ফক্স নিউজের একজন উপস্থাপক, মুসলিম পরিবারের এক যুদ্ধাহতকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে ধিকৃত হন এবং খবরের শিরোনামে ওঠেন। নির্বাচনে প্রতিপক্ষ হিলারি শিবিরের বারবার প্রচারণা সত্ত্বেও একগুঁয়ে স্বভাবের ট্রাম্প ১৮ বছর ধরে দেয়া তার ট্যাক্স রিটার্নের কপি প্রকাশ করেননি। এড়িয়ে গেছেন তার দাতব্য সংস্থা নিয়ে করা বিভিন্ন সমালোচনাও। ভোটের পর বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় ৫৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। সিএনএন-এএফপি-বিবিসি-আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্লোরিডায় ২৯ ও টেক্সাসে ৩৮ ইলেকটোরাল ভোট ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। এছাড়াও তিনি আলাবামায় ৯, আরকানসাসে ৬, জর্জিয়ায় ১৬, আইডাহোতে ৪, ইন্ডিয়ানায় ১১, আইওয়াতে ৬, কানসাসে ৬, কেনটাকিতে ৮, লুইজিয়ানায় ৮, মিসিসিপিতে ৬, মিজৌরিতে ১০, মন্টানায় ৩, নেব্রাস্কায় ৫, নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৫, নর্থ ডাকোটায় ৩, ওহাইওতে ১৮, ওকলাহোমায় ৭, সাউথ ক্যারোলাইনায় ৯, সাউথ ডাকোটায় ৩, টেনেসিতে ১১, ইউটাহতে ৬, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ৫ এবং ওয়াইওমিংয়ে ৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পান। আর ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটন পান ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫, কলোরাডোতে ৯, কানেটিকাটে ৭, ডেলাওয়ারে ৩, হাওয়াইতে ৪, ইলিনয়ে ২০, মেরিল্যান্ডে ১০, ম্যাসাচুসেটসে ১১, নিউজার্সিতে ১৪, নিউ মেক্সিকো ৫, নিউইয়র্কে ২৯, অরেগনে ৭, রোড আইল্যান্ডে ৪, ভারমন্টে ৩, ভার্জিনিয়ায় ১৩, ওয়াশিংটনে ১২ এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। আগাম যে ৪ কোটি ভোট প্রয়োগ হয় সেগুলোতে হিলারি এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু ভোট শেষে ভোটের প্রাথমিক ফল প্রকাশের শুরু থেকেই ট্রাম্প ও হিলারির মধ্যে দেখা যায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে গণনার ঘণ্টা খানিক পরে স্পষ্ট হয়ে যায় হোয়াইট হাউসে প্রবেশের টিকিট যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতেই। তাই পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশের আগেই হিলারির সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় হতাশা। টিভি পর্দায় দেখা যায় হতাশায় তারা মুষড়ে পড়ছেন। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে দেখা যায় অনেক সমর্থককে। পরে তারা বিষণœ মনে বাড়ি ফিরে যান। দিনের মধ্যেই হিলারি শিবিরে নেমে আসে ঘন অন্ধকার।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জরিপেই এগিয়ে ছিলেন হিলারি। এফবিআই ইমেইল প্রকাশের পর হিলারির জনসমর্থন কিছুটা নিচে নেমে যায়। কিন্তু নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে সে জনসমর্থন ঊর্ধ্বগগনে উঠতে থাকে। তবে অধিকাংশ মিডিয়া প্রচার করে হিলারি-ট্রাম্প লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। তবে বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লষকের মত ছিল হিলারির পক্ষেই। নির্বাচনে শ্বেতাঙ্গদের নীরব ভোট বিপ্লবে সব হিসাব উল্টে দিয়ে অবিশ্বাস্য চমক দেখিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এ বিজয়ে বিশ্ব হতবাক। কিন্তু ৭০ বছর বয়সী ট্রাম্প তারুণ্যের মতোই কাজী নজরুল ইসলামের ‘দুর্গমগিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার/ লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার/ দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ/ ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ’্। সত্যিই ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে হিম্মৎ দেখালেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।