পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রয়টার্স : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিস্ময়কর বিজয় যখন ছিল দূরতম সম্ভাবনা তখন গত মে মাসে টোকিওতে জি ৭ শীর্ষ বৈঠকে একজন ঊর্ধ্বতন ইউরোপীয় কর্মকর্তা টুইটারে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট জাঁ-ক্লদ জাংকারের মন্ত্রিসভার প্রধান মার্টিন সেলমায়র চিন্তায় ফেলে দিয়ে বলেন, কল্পনা করুন ধনী দেশগুলোর ক্লাবের আগামী বছরের বৈঠকে বারাক ওবামা, ফ্রাঁসোয়াঁ ওলান্দে, ডেভিড ক্যামেরন ও মাত্তিও রেনজির বদলে যারা যোগ দিচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ ট্রাম্প, ম্যারিন লা পেন, বরিস জনসন ও বিপ্পি গ্রিলো।
এর একমাস পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়ে বিশ^কে বিস্মিত করে যুক্তরাজ্য। প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন পদত্যাগ করেন আর ব্রেক্সিটের পিছনে ব্রাইটনদের সমর্থন দিতে সাহায্য করা লন্ডনের সাবেক মেয়র বরিস জনসন হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এখন হিলারির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ট্রাম্পের বিজয় এক জনপ্রিয় সুনামি কয়েকমাস আগেও অকল্পনীয় থাকলেও এখন তা বাস্তবতা। অন্যদিকে ইউরোপের নিজস্ব রাজনৈতিক দৃশ্যপটের জন্য তার পরিণতি হবে সম্ভবত ব্যাপক। ট্রাম্পের বিজয় ও ব্রেক্সিটের পর ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানি এবং ইটালি ও ব্রিটেনেও ভোটদাতারা নির্বাচনে ভোট দেবে এবং বিষাক্ত রাজনীতি এসব নির্বাচনকে তাড়িত করবে।
ইউরোপ মহাদেশের জনপ্রিয় দলগুলো এ শিক্ষা ভুলবে না যারা বুধবার ট্রাম্পের বিজয়কে রাজনৈতিক মূলধারার জন্য এক শারীরিক আঘাত বলে আখ্যায়িত করেছে।
ফরাসি ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেত্রী ম্যারিন লা পেনের পিতা ও ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা জাঁ-ম্যারি লা পেন টুইট বার্তায় মন্তব্য করেন, আজ যুক্তরাষ্ট্র, কাল ফ্রান্স।
জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স (ডিজিএপি)-এর গবেষণা পরিচালক ড্যানিয়েলা শোয়ারজার বলেন, ট্রাম্পের নগ্নমুষ্টি কৌশল ঘনায়মান নির্বাচনে ইউরোপের জনপ্রিয় দলগুলোর জন্য মডেল হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া ট্যাবু, রাজনৈতিক বিরোধের ব্যাপ্তি, আগ্রাসন যা আমরা ট্রাম্পের কাছ থেকে দেখেছি, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিস্তৃতির সুযোগকে প্রসারিত করতে পারে।
বিশাল প্রভাব
আগামী মাসের গোড়ার দিকে অস্ট্রীয়রা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবে যাতে ফ্রিডম পার্টির নরবার্ট হফারকে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর পশ্চিম ইউরোপের প্রথম প্রথম চরম-ডানপন্থী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেখা যেতে পারে।
একই দিনে ইটালিতে অনুষ্ঠিত হবে এক সাংবিধানিক সংস্কার গণভোট যা প্রধানমন্ত্রী রেনজির ভবিষ্যতের জন্য এক বাজি, তা গ্রিলোর বামপন্থী জনপ্রিয় আন্দোলনকে ক্ষমতার কাছাকাছি এগিয়ে নিচ্ছে।
ডানপন্থী জাতীয়তাবাদীরা ইতোমধ্যেই পোলান্ড ও হাঙ্গেরিতে সরকার পরিচালনা করছে। পশ্চিম ইউরোপে ট্রাম্পের কোনো ব্যক্তির ক্ষমতায় আসা এখন দূর সম্ভাবনা বলে মনে হয়।
সংসদীয় গণতন্ত্রে, যা ইউরোপের অনেক দেশেই বিদ্যমান, ঐতিহ্যবাহী দলগুলো পপুলিস্টদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে জোট গঠনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
সিটি’র প্রধান বিশ^ রাজনৈতিক বিশ্লেষক টিনা ফোর্ডহ্যাম ওয়েস্ট-মিনস্টার পার্লামেন্টে মাত্র একটি আসনের অধিকারী ইইউ-বিরোধী ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টিকে উদ্ধৃত করে বলেন, কিন্তু ব্রেক্সিট ভোটের শিক্ষা হচ্ছে রাজনৈতিক বিতর্ককে রূপ দেয়ার জন্য দলগুলোর সরকারে থাকা চলবে না।
ফোর্ডহ্যাম বলেন, গত নির্বাচনে ইউকিপ খারাপ ফল করেছে, ব্রিটেনের রাজনৈতিক গতিপ্রবাহে দলটির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ব্রেক্সিট আন্দোলন ও ট্রাম্পের সমন্বয় আন্দোলন পরিচালনার পথ সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে দিয়েছে।
যখন ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর প্রতি সমর্থন হ্রাস ও নয়া রাজনৈতিক আন্দোলন আত্মপ্রকাশ করছে, তখন জোট গঠন ও তা ঐক্যবদ্ধ রাখা ক্রমেই শংকাপূর্ণ হয়ে উঠছে।
স্পেনে ক্ষমতাসীন মারিয়ানা রাজয় গত সপ্তাহে ক্ষমতায় ফিরেছেন, তবে তা দু’টি মীমাংসাহীন নির্বাচনের পর যাতে ভোটাররা তার রক্ষণশীল দল ও বরাবরের প্রতিদ্বন্দ্বী বাম সমাজবাদীদের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং দু’টি নতুন দল পোডেমস ও সিউডাডানোসকে সমর্থন দেয়।
দশ মাসের রাজনৈতিক গোলযোগের পর রাজয় নিজেকে একটি সংখ্যালঘু সরকারের শীর্ষে দেখতে পাচ্ছেন যাকে আইন পাশ, সংস্কার বাস্তবায়ন ও স্পেনের সরকারী অর্থায়নের ক্ষেত্রে লড়াই করতে হবে।
এ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আগামী বছর স্পেন থেকে নেদারল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে যেখানে জনমত জরিপে প্রধানমন্ত্রী মার্ক রাটির লিবারেল দলের সাথে গ্রিট ওয়াইলডার্সের চরম ডানপন্থী ফ্রিডম পার্টি প্রায় সমানে সমানে রয়েছে।
মার্চে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় থাকার জন্য রাটি গ্রিন দলসহ সম্মিলিত ক্ষুদ্র দলগুলোর একটি কম স্থিতিশীল জোটের উপর নির্ভর করার কথা বিবেচনা করতে বাধ্য হতে পারেন।
সন্ধিক্ষণ
প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থা সম্বলিত ফ্রান্সে চরম ডানপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেত্রীর বিজয় লাভের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
বসন্তে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সমস্যা হচ্ছেন সরকারে ব্যাপক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ৭১ বছর বয়স্ক মধ্যপন্থী অ্যালেই জুপ্পি যাকে ফ্রাঁসোয়া ওলান্দে ও নিকোলাস সারকোজির ভুল পদক্ষেপের দশকের পর দায়িত্বশীল নেতৃত্বের জন্য আগ্রহের সাথে নেয়া হয়েছে।
কিন্তু লা পেনের শক্তির লক্ষণে দেখা যায়, জনমত জরিপে বলছে নির্বাচনের প্রথম দফায় অন্য যে কোনো রাজনীতিকের চেয়ে তিনি বেশী সমর্থন পাবেন। এমনকি জনমত জরিপ অনুযায়ী যদি তিনি দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে হেরেও যান তার পারফরমেন্সকে ইউরোপ মহাদেশে চরম ডানপন্থীদের জন্য এক সন্ধিক্ষণ হিসেবে দেখা হবে বলে ধারণা।
এটা তার জন্য একটি শক্তিশালী মঞ্চ দিতে পারে যেখান থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জুপ্পি ও তার রক্ষণশীল প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতিশ্রুত সংস্কার কর্মসূচির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবেন।
জার্মানিতে পরের শরতে ভোটদাতারা ভোট দেবেন। চরম ডানপন্থীরা দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধোত্তরকালে শক্তি অর্জনের চেষ্টা করছে। তবে তারও পরিবর্তন ঘটছে।
মাত্র তিন বছর বয়সী অভিবাসীবিরোধী অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) জাতীয় রাজনীতিতে একটি শক্তি হয়ে উঠেছে ও চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের রক্ষণশীলদের বিচলিত করে তুলেছে। মার্কেল অভিবাসীদের প্রতি তার স্বাগত নীতির কারণে কয়েক দফা আঞ্চলিক ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
মার্কেল খুব শিগগিরই, মানে আগামী মাসের গোড়াতেই চতুর্থ দফা নির্বাচনে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করতে পারেন। যদি তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহলে বর্তমান জনমত জরিপ অনুযায়ী তিনি জয়ী হবেন।
তবে মার্কেল তা করবেন প্রভাব হ্রাস পাওয়া অবস্থায় এবং এমন একটি দেশে যা কিনা যুদ্ধোত্তরকালে সম্ভবত সবচেয়ে বেশী বিভক্ত। এমনকি মার্কেলের রক্ষণশীল সহযোগী দল ব্যাভেরিয়ান ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন তাকে অনুমোদন দিতে অস্বীকার করেছে।
ক্ষমতায় থাকার জন্য তার একমাত্র পথ বরাবরের প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্য-বামপন্থী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা।
তিনি শক্তিশালী হয়ে ওঠা এএফডিকে মোকাবেলা করবেন যারা প্রথমবারের মত বুন্ডেস্ট্যাগে প্রবেশ করার আশা করছে।
ডিজিএপির শোয়ারজার বলেন, যুদ্ধোত্তর জার্মানির রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরাট স্থিতিশীলতা নির্মিত হয়েছে তার দু’টি বৃহৎ উদার দলের উপর। তবে বর্তমান ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে মহাজোটেরও দেশ শাসনের মত প্রয়োজনীয় সমর্থন নাও থাকতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।