Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হিলারির পরাজয়ে স্বস্তিতে সরকার

প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আহমদ আতিক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। শুধু তাই নয়, সরকারের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে স্বপরিবারে বাংলাদেশ সফরেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ডেমোক্রাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী ড. ইউনূসের সখ্যতার কথা ছিল সবার জানা।
মার্কিন নির্বাচনে অভিবাসী বাংলাদেশীদেরসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভোট টানতে তিনি হিলারির পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয় অংশ নেন। আর হিলারি শিবিরের সাথে বিরোধী দল বিএনপি’র সখ্যতার কথাও প্রকাশ্য ছিল। হিলারির সাথে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছবিও ডেমোক্রাটরা তাদের প্রচারণায় ব্যবহার করে। বিএনপি’র বিভিন্ন মহল থেকেও হিলারি বিজয়ী হলে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে তারা ব্যাপকমাত্রায় চাপ সৃষ্টি করতে পারবে বলে ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে হিলারির পরাজয় সরকারের মধ্যে একধরনের স্বস্তির আবহ নিয়ে এসছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সে স্বস্তির প্রকাশ ঘটেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ী হবার খবর প্রকাশ হবার পরই গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবর পাঠানো এক অভিনন্দন বার্তায় প্রথানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সস্ত্রীক বাংলাদেশের আসার আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, তাঁর জয়ে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। প্রধানমন্ত্রী একটি নিরাপদ বিশ্ব গড়তে ট্রাম্পের সাথে কাজ করতেও আগ্রহী বলে বার্তায় জানান।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ট্রাম্পের বিজয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। দলটির নেতাদের মতে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জাতীয়ভাবে নির্ধারিত হয়। পরোক্ষভাবে বিএনপি’র দিকে ইঙ্গিত করে তারা বলেন, এ জন্য কোনো দলেরই উল্লাস প্রকাশ বা দুঃখ পাওয়ার কারণ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
হিলারির জয়ের আভাসে বাংলাদেশের একটি দলের উল্লসিত হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নিজেদের প্রতি আস্থা না থাকলে এ রকম অবস্থা হয়। আমি মনে করি, জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব বিস্তার করে না। তাঁর জয়ে কে উৎসাহী হলো, দুঃখ পেল, সেটা দেখার বিষয় নয়।
এসব প্রতিক্রিয়ার পেছনে অবশ্য কারণও ছিল। কারণ, মার্কিন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আগেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে, বন্ধু হিলারিকে জেতাতে পর্দার আড়ালে রাতদিন কাজ করছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস। ইউনূসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, এবারের মার্কিন নির্বাচন বেশ কিছু কারণে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। বিশেষ করে ডেমোক্রাট প্রার্থী হিলারি তার খুবই ভালো বন্ধু। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইনের বাধ্য-বাধকতায় গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যখন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়, তখন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ড. ইউনূসের পাশে দাঁড়ান সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদানদাতা হিসেবেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম সংবাদ মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। তবে পরে ইউনূস সেন্টার এক বিবৃতিতে জানায়, ড. ইউনূস নয়, গ্রামীণ ইনকরপোরেট অনুদান দিয়েছে।
অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে প্রচারণায় মাঠে শুধু যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিই ছিল না। সেখানে পালে হাওয়া দিতে বাংলাদেশ থেকে যোগ দেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সমাবেশে হিলারি ক্লিনটনকে বিজয়ী করতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
তবে পূর্বাপর ঘটনা যাই হোক হিলারির পরাজয়ে সরকারে স্বস্তি বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হবে না। অবশ্য বিএনপি’র পক্ষ থেকেও ট্রাম্পের বিজয়কে স্বাগত জানানো হয়েছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ শুরুর পর হিলারি সমর্থকদের আশা ভঙ্গ হয়েছে। এই পরাজয় তারা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করেননি, প্রস্তুত ছিল না এই আঘাতের জন্য, হিলারির বিজয় নিয়ে তারা ছিলেন এতটাই নিশ্চিত। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে হলেও হিলারি সমর্থিত বাংলাদেশের ড. ইউনূস এবং বিএনপি শিবিরেও সেই একই হাহাকার। বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা অবশ্য গত মঙ্গলবার রাতেই মজা করে বলেছিলেন, হিলারি পরাজিত হলে কজন বিএনপি নেতা যে হাসপাতালে ভর্তি হবেন সেটাও একটা সংবাদ হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হিলারির পরাজয়ে স্বস্তিতে সরকার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ