পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার : কক্সবাজার বন অধিদফতরের কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের ১৮টি রেঞ্জের অধীনে ৪০টি ফরেস্ট অফিস ও টহল ফাঁড়িতে রোদ বৃষ্টিতে পুড়ে পচে নষ্ট হচ্ছে অন্তত কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ। বনবিভাগ ও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক উদ্ধার ও জব্দকৃত এ সকল কাঠ জমা রাখা হয়েছে রেঞ্জ কার্যালয়,বনবিট ও টহল ফাঁড়ির অভ্যন্তরে। এর মধ্যে বেশীর ভাগ রয়েছে সেগুন ও গর্জন কাঠ। বাকি গুলো গামার, জাম, আকাশমনিসহ অন্যান্য প্রজাতির কাঠ।
সরেজমিনে জানা গেছে, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের টেকনাফ সদর, শীলখালী, হোয়াক্যং, উখিয়া, ইনানী, ধোয়াপালং, পানোর ছাড়া, রাজারকুল, কক্সবাজার রেঞ্জ ও সদর রেঞ্জ-এর আওতাধীন বনবিট অফিস এবং কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাসিয়াখালী, ফুলছড়ি, মেহেরঘোনা, ঈদগাঁও, ঈদগড়, বাঁকখালী, পিএমখালী, কক্সবাজার সদর রেঞ্জ এবং উলেখিত রেঞ্জ গুলোর আওতাধীন বনবিট গুলোর অভ্যন্তরে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ স্ত‚প আকারে পড়ে আছে। বর্ষা মৌসুমী বৃষ্টি ও শুষ্ক মৌসুমে রোদে এ কাঠ পচে পুড়ে মিশে যাচ্ছে মাটিতে। উলেখিত বন বিট অফিস গুলোর মধ্যে ফাসিঁয়াখালী, ফুলছড়ি, ঈদগাঁও , ঈদগড় রেঞ্জ ও বনবিটে এবং,টেকনাফ সদর রেঞ্জ, রাজারকুল, কক্সবাজার রেঞ্জ, পানের ছড়া রেঞ্জ ও বনবিট গুলোতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কাঠ পচে মাঠির সাথে মিশে গেছে। বিভিন্ন সময় বনকর্মী ও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটককৃত বনজদ্রব্য গুলোর বর্তমান মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা হবে বলে বন বিভাগেরই একটি সূত্র জানিয়েছেন।
এসব মুল্যবান কাঠ গুলো বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে থাকায় অর্ধেকেও বেশি পরিমাণ এখন আর কোনো কাজে আসবে না বলে জানিয়েছেন বনবিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। বন বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, পাচার কালে বনজদ্রব্য গুলো আটক করা হয়। এ ঘটনায় কাঠ ও আসামিসহ ধৃত করা হলে দায়ের করা হয় আদালতে পিওআর মামলা। ম্যাজি্েস্ট্রট আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জব্দকৃত কাঠ নিলামে বিক্রি করা যায় না । এ ছাড়া মামলা বিচারাধীন থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিও মিলে না। ফলে বছরের পর বছর ধরে আটককৃত মুল্যবান কাঠ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিলাম বিক্রয় করতে না পারায় শুধুই পচানো হচ্ছে কোটি কোটি টাকার জব্দকৃত কাঠ। ইউ ডি আর (মালিকবিহীন বা পরিত্যক্ত) এবং সি ও আর ( বিভাগীয় নিষ্পত্তি মামলা) মামলা গুলোতে খুব কম সময়েই নিষ্পত্তি করা হয় বলে জানা গেছে।
এ দিকে,বন বিভাগের অপর একটি সূএ জানিয়েছেন জেলার বন অধিদফতরের বিভিন্ন রেঞ্জ ও বন বিট কার্যালয়ে জব্দকৃত অনেক মূল্যবান কাঠের অস্তিত্ব নেই। কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা অথবা রেঞ্জ কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বহু মূল্যবান কাঠ চুরি কিংবা বিক্রি করা হয়েছে। ভাল মূল্যবান কাঠ বদল করে নষ্ট কাঠ স্তুুপ করে রাখার এমন ঘটনা ঘটেছে অনেক বনবিটে ।
এ দিকে, জেলার সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চল গুলো হতে গাছ কাটা বন্ধ হয়নি , সে সাথে চলছে পাচার। প্রতিনিয়তই চোরাকারবারিরা উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন সাইজ ও জাতের কাঠ কেটে বিক্রি করছে প্রকাশ্যে। জেলা শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কাঠ ব্যবসায়ীদের দোকানে এবং ফার্নিচারের কারখানাগুলোতে অহরহ চোরাই কাঠ চোখে পড়ার মতো। এসব এলাকার ইটভাটা গুলোতেও অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইটভাটা মালিকগণ চোরাকারবারীদেরকে অগ্রীম টাকা দিয়ে কাঠ সংগ্রহ করছেন। নৌকা, ডাম্পার এবং ট্রাকে করেই বেশীরভাগ কাঠ বন সংলগ্ন এলাকা থেকে আনা হয়। চেরাই কাঠ কাটা ও পাঁচারের সাথে বনরক্ষী নামক এক শ্রেণীর বিশ্বাসঘাতক কর্মকর্তা কর্মচারী সরাসরি জড়িত রয়েছে। একশ্রেণীর বনকর্মীরা চোরাকারবারী, মজুতদার, পাচারকারী ও ইটভাটা মালিকদের নিকট থেকে নির্ধারিত হারে মাসোহারা আদায় করেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবৈধ কাঠ উদ্ধারের বিভিন্ন সময় বনবিভাগ ও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাঠ জব্দ করতে পারলেও বেশীর ভাগ সময় কোনো চোরাকারবারীই ধরা পড়ে না। উদ্ধার হলেও মূলহোতাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়না। এ ধারা দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র নাথ জানান, আদালতে বছরের পর পর মামলা বিচারাধীন থাকায় এবং আদালতে অনুমতি না পাওয়ায় জব্দকৃত কাঠ নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রোদ বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কাঠ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।