পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পৃথিবীর ১১৭ দেশের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় শীর্ষে বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। আর ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান ২৮তম। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (আইকিউএয়ার)। সারা বিশ্বের বায়ুদূষণ নিয়ে করা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে একটি দেশও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে পারেনি। আর দূষণের মাত্রার বিচারে সবার উপরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।
আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদন বলছে, সমীক্ষায় সারাবিশ্বের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শহরের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ শহরের বাতাসে ২০২১ সালে ডব্লিউএইচও প্রত্যাশিত বায়ুমান পাওয়া গেছে। আর ৯৩টি শহরে পিএম২.৫ এর মাত্রা ছিল ওই গ্রহণযোগ্য মাত্রার ১০ গুণ বেশি।
বাংলাদেশের বাতাসে পিএম২.৫ এর গড় পরিমাণ ছিল ৭৬ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম; যা সমীক্ষার ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই হিসেবে গত বছর বিশ্বে বাংলাদেশের বাতাসই ছিল সবচেয়ে বেশি দূষিত।
৭টি দেশে বায়ুদূষণের এই পরিমাণ ছিল ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি। যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ পাকিস্তান তালিকার তৃতীয় (৬৬ দশমিক ৮ মাইক্রোগ্রাম) এবং ভারত তালিকার পঞ্চম (৫৮ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম) অবস্থানে রয়েছে। আইকিউ এয়ার ২০১৮ সাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ আসছে। প্রতিবারই বাংলাদেশ দূষিত দেশের তালিকায় প্রথম দিকে থাকছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, রাজধানী ঢাকা শহর বায়ুদূষণ, শব্দদূষণের কারণে ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান ২৮তম। ঢাকায় দূষণ তুলনামূলক কম হওয়ার বড় কারণ ছিল গত বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে করোনাভাইরাসে কারণে লকডাউন। সে সময় গণপরিবহণ, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি কিছুদিন সরকারি অফিস-আদালত পর্যন্ত বন্ধ ছিল।
বিভিন্ন দেশের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর নয়াদিল্লি (ভারত)। দূষিত বায়ুর শীর্ষ ১০ রাজধানী শহরের মধ্যে নয়াদিল্লির পরে রয়েছে ঢাকার (বাংলাদেশ) অবস্থান। এরপর এনজামেনা (চাদ), দুশানবে (তাজিকিস্তান), মাসকট (ওমান), কাঠমান্ডু (নেপাল), মানামা (বাহরাইন), বাগদাদ (ইরাক), বিশকেক (কিরগিজস্তান) ও তাশখন্দ (উজবেকিস্তান)। আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে দূষিত ৫০টি শহরের মধ্যে ৪৬টিই মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণ এখন বিশ্বের বৃহত্তম পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। হাঁপানি, ক্যানসার, হৃদরোগ, ফুসফুসের অসুখসহ মানুষের অনেক রোগের কারণ এই বায়ুদূষণ। বিশ্বের দেশে দেশে মানুষের এসব রোগ বৃদ্ধির জন্যও বায়ুদূষণ দায়ী। বায়ুদূষণের দৈনিক অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা মোট বিশ্ব উৎপাদনের ৩ থেকে ৪ শতাংশ। বায়ুদূষণ তাদেরই বেশি প্রভাবিত করে, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
ইনডেক্সে গতকালের ঢাকার বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের সব থেকে দূষিত শহর ঢাকা এবং পরিচ্ছন্ন শহর বলা হয়েছে কুমিল্লাকে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট দেশ ও শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের জন্য কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা জানায়।
মূলত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৫১ থেকে ১০০ স্কোর থাকলে বাতাসের মানকে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর একিউআই স্কোর ৪০০ ছাড়াতে দেখা গেছে। ঢাকায় ইউএস কনস্যুলেটের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এ অবস্থা বিদ্যমান থাকলে একিউআইয়ের সর্বোচ্চ স্কোর ৫০০ ছাড়াতেও পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরবাসীর কাছে যানজটের পাশাপাশি আরেক যন্ত্রণার নাম বায়ুদূষণ। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কবলে রাজধানী ঢাকার নগরজীবন বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছে। বাড়িয়ে তুলছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশু, বৃদ্ধ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগীরা।
দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চললেও কর্তৃপক্ষ কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ রয়েছে পরিবেশবিদদের। ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে সকাল-বিকাল পানি ছিটানো হলেও আশানুরূপ ফল দৃশ্যমান নয়। এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পানি ছিটানোর কাজে সার্বক্ষণিক তদারক এবং বাতাসের মান স্বাভাবিক ও জীবনযাত্রায় স্বস্তি ফেরাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। দূষণের মাত্রা যেভাবে বেড়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গাড়ির কালো ধোঁয়া কমানো ও অপরিকল্পিত নির্মাণকাজের লাগাম টেনে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণের ৩টি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের নির্গত ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দেশে বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষ। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত বার্ষিক মৃতের গড় সংখ্যা ৪৬ হাজার। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) তথ্য বলছে, বিশ্বে ৩০ কোটি শিশু দূষিত বায়ু পরিবেষ্টিত এলাকায় বাস করে। এর মধ্যে ২২ কোটিই দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।