Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নির্দলীয় ভোট দলীয় প্রার্থী

জেলা পরিষদ নির্বাচন : আগামী সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা

প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাবিবুর রহমান : জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল আগামী সপ্তাহে ঘোষণা দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। সরকার ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। আইন অনুযায়ী এ নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটার হতে পারছেন না। প্রার্থীরা নির্দলীয় হলেও ভোটারদের বেশিরভাগই প্রার্থী হচ্ছেন দলীয়।
তারা রাজনৈতিক দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের অন্যান্য পরিষদে বিজয়ী হয়ে জেলা পরিষদের ভোটার হচ্ছেন। পাশাপাশি নির্দলীয়ভাবে নির্বাচিত সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদের সব প্রতিনিধি এবং অন্যান্য পরিষদের সদস্যরা এ নির্বাচনের ভোটার থাকছেন। অবশ্য একই নির্বাচনে দুই ধরনের ব্যবস্থায় আইনগতভাবে কোনও সমস্যা মনে করছেন না নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। জেলা পরিষদের নির্বাচনের ২০ ভাগ ভোটারের মধ্যে একভাগ দলীয় এবং ১৯ ভাগ ভোটার নিরপেক্ষ। এ কারণে ৬১টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম দেখা দিয়েছে, তবে বিদ্রোহী আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।
নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে ৪৫ দিনে আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার পরিষদ দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার গত বছর আইন সংশোধন করে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে স্থানীয় সরকারের সব স্তরের সব পদ দলীয় মনোনয়নে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে কেবল পরিষদের শীর্ষ পদটিকে দলীয় মনোনয়নের বিধান রেখে অন্যান্য পদ আগের মতো নির্দলীয়ই রাখা হয়। অবশ্য উপজেলা জেলা পরিষদের শীর্ষ পদ চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিধান করা হয়েছে। এদিকে সব স্তরে দলীয় মনোনয়নে অনুষ্ঠানের উদ্যোগ হলেও জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে সরকার অবস্থান পরিবর্তন করে। জেলা পরিষদের সব পদে নির্দলীয় প্রার্থিতার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচকম-লীর মাধ্যমে (ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে) অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রতিনিধিরা ভোটার হবেন। জেলা পরিষদের প্রার্থীদেরও কোনও ভোটাধিকার থাকবে না। তাদের ভোটে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত পাঁচজন নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র, চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরাই ভোটার হবেন জেলা পরিষদে। এসব পরিষদের মধ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এখন দলীয় ও নির্দলীয় দুই ধরনের নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়ররা রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে এবং দলের প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচিত হয়েছেন। আর এ দুই পরিষদের সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনের আইন সংশোধন করে দলীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা হলেও মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়া এখন পর্যন্ত এ পরিষদে দলীয়ভিত্তিতে ভোট হয়নি। ফলে এ দুই পরিষদের সব প্রতিনিধিই হচ্ছেন নির্দলীয়। এই দলীয় ও নির্দলীয় উভয় প্রতিনিধিই নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদের ভোটার হবেন।
কমিশন সচিবালয়ের, তিন পার্বত্য জেলা বাদে সারাদেশের ৬১ জেলার ৪টি পরিষদে প্রায় ৬৫ হাজার জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি রয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদে। প্রতিটি ইউপিতে জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ ভোটার ১৩ জন। এর মধ্যে একজন চেয়ারম্যান, সাধারণ আসনের ৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের ৩ জন সদস্য রয়েছেন। এই হিসাবে সাড়ে ৪ হাজার ইউপির ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৮ হাজার ৫০০। এছাড়া ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে তিনজন করে প্রায় দেড় হাজার, ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে ৫ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন।
সদ্য সমাপ্ত চার হাজারের বেশি ইউপির নির্বাচনে তিন হাজারের কমবেশি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এসব ইউপির বেশিরভাগ মেম্বারও (সদস্য) সরকারি দলের সমর্থক। বিএনপি জিতেছে চারশ-এর মতো ইউপিতে, জাতীয় পার্টি ৫৫টিতে। বাকিগুলোতে অন্যান্য দল-সমর্থিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন। পৌরসভার চিত্রও একই রকম। ৪৮৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে মোট ভোটার ১ হাজার ৪৬৭ জন। এখানেও বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জিতেছেন তিন শতাধিক উপজেলায়। বিএনপি জিতেছে দেড় শতাধিক উপজেলায়। এই নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের এই নির্বাচন ঘিরে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করছে না। তেমনী ভাবে ১৪ দলের অন্য শরিকেরা এ নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, সরকার স্থানীয় সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠান গুলোর একইসঙ্গে দলীয় ও নির্দলীয় এবং জেলা পরিষদে পুরোপুরি নির্দলীয় ব্যবস্থা করে দলীয়ভাবে নিতে চাইছে। সরকারের এই দ্বৈতনীতির কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে কখনোই প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে না। রাজনৈতিক দলের, না অরাজনৈতিক, সেটা বিশেষ বিবেচনায় নেয়ার সুযোগ নেই।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, দলীয় ও নির্দলীয় ভোটারদের ভোটে নির্দলীয় ব্যক্তিকে নির্বাচনের আইনের কোনো ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ভোটারদের ক্ষেত্রে দলীয় বা নির্দলীয় নির্ভর করে না। সাদা চোখে বিষয়টি ভিন্ন রকম মনে হলেও আইনের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্দলীয় ভোট দলীয় প্রার্থী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ